শেষ মিনিটে অসম্ভবকে সম্ভব করলো বার্সেলোনা অবিশ্বাস্য এক জয়
শেষ মিনিটে অসম্ভবকে সম্ভব করলো বার্সেলোনা
অবিশ্বাস্য এক জয়
অবিশ্বাস্য, অভাবনীয়, অকল্পনীয়, অচিন্তনীয় এবং ‘অমানবীয়’ যাই বলুন না কেন, কমই বলা হবে। নির্বাক প্যারিস, আর অবাক ফুটবল বিশ্ব। বুধবার দিবাগত রাতে যারা হতাশ হয়ে বার্সেলোনার খেলা না দেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে চক্ষু তাদের চড়কগাছ এ-ও সম্ভব! নিজের গায়েই চিমটি কেটে দেখতে পারেন। চোখ সত্যি দেখছে তো! প্যারিস সেইন্ট জার্মেই’কে (পিএসজি) ৬-১ গোলে হারিয়েছে বার্সেলোনা! ইতিহাসে যা কখনো হয়নি তাই হলো। ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে পিএসজি’র মাঠ থেকে বার্সেলোনা ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর শত্রু-মিত্র সবার এমন ভাবনাটাই স্বাভাবিক। নকআউট পর্বে ৪-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ফিরতি লেগে জিতে পরের রাউন্ডে যাওয়ার কোনো ঘটনাই তো ইতিহাসে ছিল না। কিন্তু এবার সেই অবিশ্বাস্য কাজটাই করলো স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনা। নিজেদের মাঠ ন্যু ক্যাম্পে ফিরতি লেগে পিএসজিকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করলো তারা। সফরকারীদের ৬-১ গোলে হারিয়ে নয়া ইতিহাস গড়লো লুইস এনরিকের শিষ্যরা। দুই লেগে ৬-৫ এগ্রিগেটে জিতে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট কাটলো তারা। বার্সেলোনার এমন অবিশ্বাস্য জয়ের নায়ক ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার নেইমার। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে নিজে দুই গোল করার পাশাপাশি অন্য একটি গোল বানিয়ে দেন। এছাড়া বার্সেলোনার আরো একটি গোলে অবদান তার।
প্রথম লেগে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে ফিরতি লেগে বার্সেলোনাকে ৫-০ গোলে জিততে হতো। এই ‘অসম্ভব’কে সামনে নিয়ে ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন লুইস সুয়ারেজ। সপ্তাহখানেক আগে এই সুয়ারেজ বলেছিলেন, প্রথম লেগে ৪-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও পরের রাউন্ডে যদি কোনো ক্লাব যেতে পারে তাহলে সেটা একমাত্র বার্সেলোনার পক্ষেই সম্ভব। এদিন মাঠে নামার কয়েক মিনিটের মধ্যেই যেন নিজের কথার যথার্থতার প্রমাণ দেয়া শুরু করেন। এরপর ৪০ মিনিটে কুজাওয়ার আত্মঘাতী গোলে ব্যবধান বাড়ায় বার্সেলোনা। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় কাতালানের ক্লাবটি। তখন পর্যন্ত পরের রাউন্ডে ওঠা আশা-নিরাশায় দুলছে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সেই আশার পালে আরো একটু হাওয়া লাগে। ৫০ মিনিটে প্রতিপক্ষের বিপদসীমায় নেইমারকে ফেলে দেয়া হয়। পেনাল্টি পায় বার্সেলোনা। তা থেকে স্বাগতিকদের ৩-০ গোলে এগিয়ে দেন লিওনেল মেসি। আর একটি গোল করলে ম্যাচটি কমপক্ষে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গড়ানোর সম্ভাবনা। এরই মধ্যে ৬২ মিনিটে সফরকারী প্যারিস সেইন্ট জার্মেই’র পক্ষে একটি গোল এনে দেন এডিনসন কাভানি। এতক্ষণ বার্সেলোনা যে আশা ভেঙেছিল তা যেন মুহূর্তেই চুপসে যায়। ম্যাচের ৮৮ মিনিট পর্যন্ত ৩-১ গোলে এগিয়ে বার্সেলোনা। কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করতে প্রয়োজন তিন গোল। ম্যাচের নির্ধারিত সময় তখন বাকি মাত্র ২ মিনিট। এরপর হয়তো সর্বোচ্চ যোগ করা ৫ মিনিট পাওয়া যেতে পারে। এমন শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে অবিশ্বাস্য কাণ্ড করে বসেন নেইমার। ৮৮ মিনিটে ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকে এক ফ্রি-কিকের বল পিএসজির জালে জড়িয়ে দেন। কেঁপে ওঠে পুরো ন্যু ক্যাম্প। হালে পানি পায় স্বাগতিকরা। কিন্তু খেলা অতিরিক্ত সময়ে নিতে আরো এক গোল দরকার। যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে পিএসজির ডি বক্সের মধ্যে লুইস সুয়ারেজকে ফেলে দেয়া হয়। পেনাল্টি পায় বার্সেলোনা। উত্তেজনায় তখন কাঁপছে পুরো ফুটবল বিশ্ব। কী হবে এবার। পেনাল্টি শট নিতে গেলেন নেইমার। দুর্দান্ত এক গোল করে ৫-১ গোলে বার্সাকে এগিয়ে দেন তিনি।
কিন্তু তখনো কোয়ার্টার ফাইনালের অপেক্ষায় পিএসজি। কারণ, দুই লেগ মিলিয়ে তখন ৫-৫ গোলে সমতা বিরাজ করছে। ফলাফল এটা থাকলে প্রতিপক্ষের মাঠে গোল করার কারণে কোয়ার্টারে উঠে যেতো পিএসজি। ম্যাচের একেবারে শেষ মিনিটের খেলা চলছে। বার্সেলোনার ভাগ্য ঝুলছে সুতোয়। আর একটি গোল না করতে পারলে বিদায় নিশ্চিত তাদের। এ সময় আরো একবার অবিশ্বাস্য হয়ে ওঠেন নেইমার। ডি বক্সের বেশ বাইরে থেকে পিএসজির গোল মুখে একটি ক্রস দেন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সার্জি রবার্তো। দারুণ দক্ষতায় পিএসজির গোলরক্ষককে পরাজিত করেন তিনি। গোলটিতে অফসাইডের শঙ্কা ছিল। কিন্তু রেফারি সেটা গ্রাহ্য না করায় নেচে ওঠে পুরো ন্যু ক্যাম্প। শেষ ৭ মিনিটে বার্সেলোনার তিন গোল! কাতালুনিয়ায় শুরু হয় আনন্দের বন্যা। বার্সেলোনা ৬-১ গোলে জয় নিশ্চিত করে। মাঠের মধ্যে ছুটে যান বার্সেলোনার কর্মকর্তারা। কার সঙ্গে কে আলিঙ্গন করবেন তা যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না তারা। এক অবিশ্বাস্য আখ্যানের জন্ম দিয়ে টানা দশম বার বার্সেলোনা উঠে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে।