শুভ বড়দিন আজ
শুভ বড়দিন আজ
আজ ২৫শে ডিসেম্বর। শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট এই পুণ্যময় দিনে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে পবিত্র বেথেলহেমে গরিব কাঠমিস্ত্রির গোয়ালঘরে মাতা মেরির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ঈশ্বরের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একজন নারীর প্রয়োজন ছিল। সেই নারীই কুমারী মেরি। ধর্ম বিশ্বাস বলে, ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায়’ কুমারী মাতা মেরী গর্ভবতী হন। ঈশ্বরের দূত গাব্রিয়েল-এর কথামতো জন্ম নেয়া শিশুটির নাম রাখা হয় যীশাস, যা বাংলায় যীশু। ধর্মে শিক্ষাভ্রষ্ট তৎকালীন ইহুদি সমপ্রদায়ের মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে আবির্ভূত এ শিশুটিই বড় হয়ে খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচার করেন। যিশু খৃষ্টের জন্মের অনেক বছর পর থেকে খ্রিষ্টানরা এ দিনটিকে আনন্দ ও মুক্তির দিন হিসেবে পালন করতে শুরু করে। ৪৪০ খ্রিষ্টাব্দে পোপ এ দিনটিকে স্বীকৃতি দেন। তবে উৎসবটি জনপ্রিয়তা পায় মধ্য যুগে। সে সময় এর নাম হয় ‘ক্রিসমাস ডে’। খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, মানবজাতিকে সুপথ প্রদর্শন, সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করা এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের জন্যই যীশু জন্ম নিয়েছিলেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সমপ্রদায় আজ যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে যীশুখ্রিষ্টের জন্মোৎসব পালন করবেন। শুভ বড়দিন উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সমপ্রদায়কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন। বড় দিন উপলক্ষে দেশের সব গির্জা আলোকসজ্জা ও ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে। রাজধানীর প্যানপ্যাসিফিক সোনারগাঁও, র্যাডিসন ওয়াটার ব্লুসহ অভিজাত হোটেল ও স্থাপনাগুলো ইতিমধ্যেই আলোকসজ্জায় তৈরি করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে ‘ক্রিসমাস ট্রি’। এসব হোটেলে বড়দিনের আয়োজনে থাকছে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের মুখরোচক খাবার ও ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কেক। থাকবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, ফ্যাশন শো, জাদু প্রদর্শনীসহ নানা আয়োজন। বড়দিনে শিশুদের আনন্দ দিতে ঢাকা শহরের ৪০টি গির্জার বেশির ভাগেই থাকছেন শিশুদের প্রিয় সান্তাক্লজ। তিনি শিশুদের নির্মল বিনোদনের পাশাপাশি উপহারসামগ্রী বিতরণ করবেন।
দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে তৈরি হবে কেক, পিঠা ও বিশেষ খাবার। এ ছাড়া, সাজসজ্জা তো রয়েছেই। নতুন পোশাক পরে এদিন আত্মীস্বজন পরস্পরের বাড়িতে বেড়াতে যান। অনেক এলাকায় আয়োজন করা হয় প্রীতিভোজের। দিনটিকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন গির্জার আঙিনায় ইতিমধ্যেই মেলা বসেছে। মেলার দোকানগুলোতে বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, সান্তা ক্লজের টুপি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম-যোসেফের মূর্তিসহ নানা জিনিস বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আজ সকালে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা ও খ্রিষ্টযোগ হবে। রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জা (পবিত্র জপমালার গির্জা) এবং কাকরাইলের আর্চ বিশপ হাউসে বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন গির্জায় পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা সতর্কাবস্থায় অবস্থান করছেন। এদিকে নিরাপত্তার কারণে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বেশির ভাগ অনুষ্ঠান সন্ধ্যার আগেই শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।