শিশুর সুন্দর অভ্যাস গড়তে
কেয়া আমান : দুরন্তপনা ও চাঞ্চল্য শিশুর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। দুরন্তপনার মধ্য দিয়ে শিশুরা নিজস্ব ভুবন সৃষ্টি করে। আর সেই ভুবনে আচার-ব্যবহার, শিষ্টাচার, নিয়মানুবর্তিতা, ভালো-মন্দ সবকিছুই গড়ে তুলতে হয় শিশুবেলা থেকেই। কারণ ছোটবেলা থেকে একটু একটু করে শেখালে শিশু সুন্দর অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারে, যা বড় হয়ে হঠাত্ করে হওয়া সম্ভব নয়। তাই সব বাবা-মায়েরই উচিত তার সন্তানের সুস্থ মানসিক বিকাশ এবং তাকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে ছোটবেলা থেকেই সুন্দর অভ্যাসগুলো শিক্ষা দেয়া। এ সম্পর্কে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গাজী হোসনে আরা বলেন—
: শিশুকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে গেলে বা বাড়িতে মেহমান এলে, ফোনে কথা বলার শুরুতে সালাম দিতে শিখিয়ে দিন। শিখিয়ে দেয়ার পর ভুলে গেলে সময়মতো কাজটি করতে তাকে মনে করিয়ে দিন। তেমনি বিদায়ের সময় অতিথিকে আবার আসবেন বলতে শেখান।
: কাউকে অনুরোধ করার সময় প্লিজ এবং অনুরোধ রক্ষা করলে বা কেউ কিছু গিফট করলে ধন্যবাদ বলতে শেখান।
: বড়দের সঙ্গে উচ্চ স্বরে বা চিত্কার করে কথা না বলা, তাদেরকে সম্মান করা, কিছু জানতে চাইলে সুন্দরভাবে জবাব দেয়া, নাম ধরে ডাকলে জি বলা ইত্যাদি অভ্যাস একটু একটু করে শিখিয়ে দিন। তবে সব একদিনে শিখিয়ে দিলে সে গুলিয়ে ফেলবে। তাকে আস্তে আস্তে এসব শিখিয়ে দিন। এতে সে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
: শিশুকে ছোটবেলা থেকে সত্য কথা বলা শেখানো খুবই জরুরি। শিশুদের অন্যান্য আচার-ব্যবহার শিক্ষা দিলেও আমরা বড়রা এ বিষয়টাতে থাকি সবচেয়ে উদাসীন। আমাদের ধারণা তারা এমনিতেই সত্য বলবে। অপরদিকে আমরা বড়রা ফোনে, ঘরোয়া আড্ডায়, অতিথির সামনে প্রায়ই মিথ্যা বলি এবং তা আমরা অসচেতনতাবশত শিশুদের সামনেই করি। আবার অনেক সময় আমরা ভাবি শিশুরা খেয়াল করছে না। অথচ শিশুরা ঠিকই খেয়াল করে। আর শিশুরা যেহেতু অনুকরণপ্রিয় তাই পরবর্তীতে সুযোগ পেলে তারাও মিথ্যা বলে। তাই ছোটবেলা থেকেই শিশুকে সত্য কথা বলা শেখাতে হবে এবং বড়দেরও শিশুদের সামনে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
: বাড়ির কাজের লোক, ড্রাইভার, দারোয়ানের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে শিখিয়ে দিন। পাশাপাশি আপনি নিজে এবং বাড়ির বড় সদস্যরাও সচেতন থাকুন। কারণ বড়রা শিশুর সামনে এদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলে শিখিয়ে দিয়েও কোনো লাভ নেই। কারণ শিশুদের মধ্যে সব সময়ই বড়দের অনুকরণ করার প্রবণতা থাকে।
: স্কুলের মিসকে সালাম দেয়া, সহপাঠীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, সময়মতো হোমওয়ার্ক করা, নিয়মিত স্কুলে যাওয়া, স্কুলে যাওয়ার জন্য সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা, পড়া শেষে নিজের বই-খাতা গুছিয়ে রাখা, স্কুল থেকে ফিরে যেখানে কাপড়-চোপড় বা জুতা ফেলে না রাখা ইত্যাদি অভ্যাসে তাকে স্কুলে ভর্তির শুরু থেকেই অভ্যস্ত করতে চেষ্টা করুন, যা তাকে পরবর্তী স্কুলজীবনেও সহায়তা করবে।