শিবির ইস্যুতে উত্তপ্ত চট্টগ্রামের দুই কলেজ
শিবির ইস্যুতে উত্তপ্ত চট্টগ্রামের দুই কলেজ
ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে শিবির তাড়ানোর কর্মসূচি বাস্তবায়ন না করলে বৃহস্পতিবার থেকে দুই অধ্যক্ষের অপসারণের আন্দোলনে যাবে ছাত্রলীগ। গতকাল সকালে চকবাজারের দুই কলেজের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা। তবে তাদের এই কর্মসূচিতে সর্বাত্মকভাবে জেলা পিপি, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদেরও একাত্মতা ঘোষণা করতে দেখা যায়। কর্মসূচি থেকে ছাত্রলীগ নেতারা বলেন, আমরা কলেজ দুটিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে ৮ দফা দাবি দিয়েছিলাম। যার মধ্যে অন্যতম ছিল মৌলবাদী সংগঠন ছাত্রশিবির থেকে কলেজের হোস্টেলকে রক্ষা করা। এর আগে আমরা রক্তঢেলেও প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু কলেজ অধ্যক্ষরা এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।
তারা আরও জানান, ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হলো। এর মধ্যে কিছু না হলে বেলা ১২টার পর থেকে দুই অধ্যক্ষের পদত্যাগের আন্দোলন চলবে একসঙ্গে। এই দাবিতে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও যোগ দেবেন।
ছাত্রলীগ নেতারা জানান, তাদের দেয়া দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে কলেজ ক্যাম্পাসে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, ১৬টি প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেয়া, ক্যাম্পাসের ভেতরে সব ধরনের আবাসিক স্থাপনা বন্ধ করা, হোস্টেল সুপার, মসজিদের ইমাম ও খতিবের অপসারণ, অস্থায়ী ও খণ্ডকালীন কর্মচারীদের অপসারণ, ছাত্র সংসদের নামে আদায় করা অর্থের হিসাব, ছাত্রাবাস-ছাত্রী নিবাস বন্ধ করে দেয়া ও শিবিরের অভিযুক্ত কর্মীদের গ্রেপ্তারসহ ছাত্রত্ব বাতিল করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ১১টায় এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এই সময় কর্মসূচিতে বক্তব্য দিতে দেখা যায় চট্টগ্রামের জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের নেতা শেখ সফিউল আজম, নগর আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল লতিফ টিপু, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি আলমগীর টিপু, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বী সুজন প্রমুখকে।
গত ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কর্মসূচিকে ঘিরে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রলীগ ও শিবির একে অপরের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ করায় বর্তমানে সেখানে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশের কড়া নজরদারি ও পাহারা চোখে পড়েছে।
তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ মানবজমিনের কাছে বলেছেন, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সব ধরনের কঠোর পদক্ষেপ তারা গ্রহণ করবেন। ইতিমধ্যে নগর পুলিশের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার কথা বলা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মুখোমুখি না হন সেজন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানান কলেজটির অধ্যক্ষ।
জানতে চাইলে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি মানবজমিনকে বলেন, চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজে শিবিরের একক আধিপত্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সেখানে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ব্যাহত হচ্ছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় কলেজ দুটিকে শিবির মুক্ত করতে আমরা নানা কর্মসূচি শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, যতক্ষণ না দাবি মানা হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা চট্টগ্রাম কলেজ থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো না। শিবিরের অনেক মামলার আসামি এখানে লুকিয়ে রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার না করে উল্টো ছাত্রাবাসে নাশকতা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে।
তবে ছাত্রলীগের এসব দাবিকে অযৌক্তিক বলেছেন নগর ছাত্রশিবিরের উত্তরের প্রচার সম্পাদক কনক হাছান। তিনি বলেন, নেতৃত্ব দেয়া বেশির ভাগ ছাত্রলীগ নেতার ছাত্রত্ব নেই বলে উল্লেখ করে বলেন, তারা জোর করে অস্ত্র দেখিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে। পুলিশ প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করছে। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রলীগের জনপ্রিয়তা নেই।
তিনি আরও বলেন, কলেজে শিক্ষার পরিবেশ দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। কিন্তু কেউ অস্ত্রবাজি করে যদি কলেজে আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা চালায়, তাহলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে তা প্রতিহত করবে শিবির। আমরা নিরীহ শিবির কর্মীদের মুক্তি দাবি করছি।
চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার বলেন, কিছুদিন কলেজ বন্ধ থাকার পর আবার ক্যাম্পাস খুলেছে। ছাত্রলীগের ছেলেরা ৮ দফা দাবি দিয়েছে। দাবিগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। অন্যদিকে শিবিরের সঙ্গে যাতে মারামারি না হয় সেজন্য পুলিশ আছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।