শিবিরের নাশকতা: এক শিবির নিহত: পাঁচ শিবিরকে কারাদণ্ড

10/10/2013 7:17 pmViews: 18

garite-agun1স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সব নেতাকর্মীর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের নামে বৃহস্পতিবার আবারও নাশকতা চালিয়েছে জামায়াতী সংগঠন ছাত্রশিবির। কর্মসূচী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুুলিশের ওপর বোমা নিক্ষেপসহ আক্রমণ চালিয়েছে উগ্রবাদী এ সংগঠনের ক্যাডাররা। রাস্তা অবরোধ করে বোমা হামলা ও আগুন দেয়া হয় গাড়িতে। হামলা করা হয়েছে পুজো ম-পে। চুয়াডাঙ্গায় মিছিল থেকে পুজো ম-পে হামলা চালানোসহ নাশকতার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক শিবিরকর্মী নিহত হয়েছে। শিবিরের বোমা হামলায় এখানে আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্য। রাজশাহীতে সংঘর্ষে ককটেলের আঘাতে পুলিশের ৫ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। কুমিল্লায় পুলিশের গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হয়েছেন এক পুলিশ সদস্য। চুয়াডাঙ্গায় কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে আগামী রবিবার চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে শিবির। উগ্রবাদী এ সংগঠনটি সব জামায়াত-শিবির নেতাদের মুক্তি না দিলে দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল থেকে হাতবোমা ফাটিয়েছে জামায়াত-শিবিরকর্মীরা। তবে পুলিশের ওপর হামলাসহ নাশকতায় জড়িত থাকার অপরাধে শিবিরের পাঁচ কর্মীকে ১ বছর করে কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে মতিঝিল থানায় আদালত বসিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবুল কালাম এ আদেশ দেন। দ-প্রাপ্তরা হলো আব্দুল্লাহ মোঃ মিফাত (২৭), শোয়েব আহম্মেদ (১৮), বোরহান উদ্দিন (২০), মুশফিকুর রহমান (২২) ও ইলিয়াছ (২১)। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টার থেকে কারাদ- দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। কমলাপুর ও মহাখালীতে মিছিল করে হাতবোমা ফাটিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। দুই ঘটনায় ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। ২০-২৫ শিবিরকর্মী সকাল ৯টার দিকে কমলাপুরে বিআরটিসি বাস ডিপোর সামনে ঝটিকা মিছিল বের করে। এ সময় তারা কয়েকটি হাতবোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন মতিঝিল থানার ওসি ফরমান আলী। প্রায় একই সময় মহাখালী এলাকাতেও মিছিল করে শিবিরকর্মীরা। তারা মহাখালীর হোটেল জাকারিয়ার সামনে ককটেল ফাটিয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে রফিকুল ইসলাম (২২) নামে শিবিরের এক কর্মী নিহত হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৩টায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রফিকুল ইসলাম মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় বলে দাবি শিবিরের। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। নিহত রফিকুলের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম শহীদুল ইসলাম। সে একই উপজেলার বদরগঞ্জ বাকিবিল্লাহ কামিল মাদ্রাসার ছাত্র। জামায়াত-শিবির এ ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করলেও এলাকাবাসী ও পুলিশ জানিয়েছে, মিছিল থেকে পুজো ম-পে হামলা চালানোসহ নাশকতার সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক শিবিরকর্মী নিহত হয়েছে। কেরুজ এলাকায় অবস্থিত পুজো ম-পে হামলার আশঙ্কায় শিবিরকর্মীদের মিছিল করতে বাধা দেয় পুলিশ।
এ সময় উল্টো ৪০০-৫০০ শিবিরকর্মী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে এবং পুজো ম-পে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিবিরকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশ গুলি ছোড়ে। পুলিশ সুপার আবদুর রহিম শাহ চৌধুরী জানান, কেরুজ এলাকায় অবস্থিত পুজো ম-পে হামলার আশঙ্কায় শিবিরকর্মীদের মিছিল করতে বাধা দেয়া হয়। কিন্তু ৪০০-৫০০ শিবিরকর্মী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে এবং পুজো ম-পে হামলা চালায়। ঘটনার সময় পুলিশ আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায়। এতে শিবিরের এক কর্মী আহত হয় এবং চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর সে মারা যায়। কর্মী নিহত হওয়ার পরই আগামী রবিবার চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়ায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবির।
রাজশাহী থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানিয়েছেন, মহানগরে পুলিশের সঙ্গে শিবিরের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ককটেলের আঘাতে পুলিশের ৫ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ রাবারবুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর রানীবাজার অলকার মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী জড়ো হয়ে নগরীর অলকার মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে তারা নাশকতার চেষ্টা চালায়। কয়েকটি অটোরিক্সা ভাংচুর করে। পরে পুলিশ এসে তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে পুলিশও পাল্টা জবাব দেয়। এ সময় দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে রাবারবুলেট, টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে শিবিরকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যায় নগরীর রানীবাজার থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সব দোকানপাট। বোয়ালিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, শিবিরের ছোড়া ককটেলের আঘাতে তাদের ৫ সদস্য আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন কনস্টেবল আলমগীর, রাফি, মেহেদী, নুরুজ্জামান ও শাহরিয়ার। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ে ছাত্রশিবির নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝটিকা মিছিল বের করে। শিবিরকর্মীরা রাস্তায় পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ঘটনার সময় মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঝিনাইদহ থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানিয়েছেন, জেলায় শিবিরের মিছিল থেকে পুলিশের ওপর ককটেল ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এ সময় দুই পুলিশসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। সদর থানার ওসি কাজী জালাল উদ্দিন আহমেদ জানান, কেন্দ্রীয় সভাপতির মুক্তির দাবিতে ইসলামী ছাত্রশিবির সকাল ১০টার দিকে শহরের শেরে বাংলা সড়ক থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে গিয়ে শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পুলিশ ৬ রাউন্ড শটগানের গুলি ও ৩ রাউন্ড টিয়ারশেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ২ পুলিশসহ ৪ জন আহত হয়। এ ঘটনার পর শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নোয়াখালীর মাইজদীবাজার এলাকায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে মুনতাসির বিল্লাহ (২৪) নামে শিবিরের এক কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নেতাকর্মীর মুক্তি দাবিতে নোয়াখালীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিবিরের নেতাকর্মীরা। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মোঃ কাউয়ুমকে আটক করেছে কলাপাড়া থানা পুলিশ। শহরের সিনিয়র মাদ্রাসা সড়ক থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এ সময় তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালবিরোধী লিফলেট বিতরণ করছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ হানিফ। ওসি জানান, এর আগে নাশকতামূলক কর্মকা- পরিকল্পনার অভিযোগে একাধিকবার তাঁকে আটক করা হয়েছিল। আটক কাউয়ুম দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের ওই পদে থেকে সরকারবিরোধী বিভিন্ন কর্মকা-ের ষড়যন্ত্র করে আসছিলেন।
কুমিল্লায় ঝটিকা মিছিল করে শিবিরের নেতাকর্মীরা। কিন্তু বাধা দিলে ওই মিছিল থেকেই পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ৫-৬টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় বিপ্লব (২৪) নামে পুলিশের এক কনস্টেবল আহত হন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর কাপড়িয়াপট্টি-চকবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ আটক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়ে কুমিল্লা মহানগর শিবিরের উদ্যোগে কান্দিরপাড় এলাকা থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি চকবাজার এলাকায় পৌঁছলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় শিবিরকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং বিকট আওয়াজে ৫-৬টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে নগরীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই সামছুজ্জামান জানান, মিছিল থেকে নিক্ষেপ করা ইটের আঘাতে পুলিশের কনস্টেবল বিপ্লব আহত হয়েছেন। দুপুরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হাবিবুর রহমান মজুমদারকে (২২) গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ। থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ জানান, গ্রেফতারকৃত হাবিবুর রহমান মজুমদারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে।
কর্মসূচী শেষে রাতে শিবির সভাপতিসহ জামায়াত নেতাদের মুক্তি না দিলে দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে শিবির। শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা এক বিবৃতিতে হুমকি দিয়ে বলেন, এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন দেখতে দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে। দেশের পরীক্ষিত দেশপ্রেমিক জামায়াত নেতাদের বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইব্যুনাল সাজানো রায়ের মাধ্যমে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলওয়ার হোসেনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও রিমান্ডের নামে ধারাবাহিক নির্যাতন করে প্রায় পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। শিবির নেতারা বলেন, আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, যদি অবিলম্বে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ জামায়াত-শিবিরের সব নেতাদের মুক্তি না দেয়া হয়, তাহলে ছাত্রশিবির এই সরকারের পতনের এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করে দেশ অচল করে দেবে। আর তখন এ ফ্যাসিস্ট সরকারের পালানোর পথটি পর্যন্ত খোলা রাখা হবে না।

Leave a Reply