শফিক রেহমান ৫ দিনের রিমান্ডে

17/04/2016 12:10 pmViews: 23

শফিক রেহমান ৫ দিনের রিমান্ডে

 

প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের পর ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। গতকাল সকালে রাজধানীর ইস্কাটনের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে পল্টন থানায় দায়ের করা একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। যদিও তিনি ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন না। শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করার সময় ডিবি পুলিশ বাড়ির বাবুর্চিকে মারধর করে, কেয়ারটেকারকে গুলি করার হুমকি দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর দুপুরে পুলিশ তাকে ঢাকা মহানগর আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করেন। আদালত তাকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, তার লেখনী কব্জা করতে না পেরেই সরকার তাকে গ্রেপ্তার করেছে। দলটির পক্ষ থেকে শফিক রেহমানের মুক্তি দাবি করে বলা হয়েছে, তাকে মুক্তি না দিলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। ৮২ বছর বয়স্ক সাংবাদিক শফিক রেহমান সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে খ্যাতি পেয়েছিলেন। তিনি বিবিসিতেও কাজ করেছিলেন। টিভি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার পাশাপাশি পত্রিকায় কলাম লিখতেন তিনি।

গ্রেপ্তারের বর্ণনা দিয়ে শফিক রেহমানের বাড়ির কেয়ারটেকার আবদুল মতিন মোল্লা সাংবাদিকদের জানান, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে তিনজন ব্যক্তি বাড়ির গেটে এসে জানায়, তারা বৈশাখী টেলিভিশন থেকে এসেছেন। স্যারের (শফিক রেহমান) কাছে তারা একটি অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট নিয়ে আলোচনা করবেন। ফলে তাদের আমরা কোনো সন্দেহ করিনি। তাদের হাতে কোনো ক্যামেরাও ছিল না। আমরা বাড়ির মূল গেট খুলে দিয়ে ভেতরে বসতে দেই। তিনি জানান, তিন ব্যক্তিকে বসতে দেয়ার পর আমরা বাড়ির কেয়ারটেকারের মাধ্যমে বৈশাখী টিভির প্রোগ্রামের লোক এসেছে বলে শফিক রেহমানের কাছে খবর পাঠাই। তিনি তখন ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুম থেকে তাকে তোলে খবরটি দেয়ার পর স্যার আমাদের ওই লোকগুলোকে বসতে এবং চা-নাস্তা দেয়ার কথা বলেন। স্যারের নির্দেশ মতো, লোকগুলোকে বিস্কুট, মিষ্টি ও চা দেয়া হয়। ওই সময় তারা কক্ষে থাকা স্যারের কয়েকটি বই নেড়েচেড়ে দেখছিলেন। আমি তাদের বইপত্র নাড়তে নিষেধ করি। এদিকে আগত লোকগুলোকে অ্যাপায়ন করার কথা বলে স্যার বিছানা ছেড়ে ওয়াশ রুমে যান। সেখানে তিনি সেভ করেন। পরনের শার্টটিও পরিবর্তন করেন। বাড়ির বাবুর্চী আলী আজম জানান, চা-নাস্তা খাওয়ার পর স্যারের দেরি দেখে নিচে বসে থাকা লোক বিরক্ত হয়ে বারবার তাগাদা দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা বলেন, তাকে দ্রুত নিচে নামতে বলুন। নয়তো আমরাই তিনতলায় গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসবো। একই কথা তারা বারবার বলছিলেন। এ সময় আমি তাদের অপেক্ষা করার জন্য বলি। এ সময় তারা ধমক দিয়ে আমার হাতে একটি কার্ড দিয়ে দ্রুত স্যারের হাতে পৌঁছাতে বলেন। বাবুর্চি আলী আজম বলেন, আমি কার্ড নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় আমার পেছনে জোর করে ওই তিনজনের মধ্যে একজন নিচতলার সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে পড়ে। আমিও তার পিছু নিয়ে দোতলায় উঠে পড়ি। আমি তাকে ধমক দিয়ে নিচে নামতে বলি। ওই সময় তাদের সঙ্গে থাকা আরও দুজন দোতলায় উঠে পড়েন। ওই মুহূর্তে স্যার (শফিক রেহমান) তৃতীয়তলার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছিলেন। স্যার আমাদের কাছে জানতে চান কি হয়েছে? তখন আগেই দোতলায় উঠে যাওয়া এক ব্যক্তি স্যারকে বলেন, আমরা ডিবি পুলিশের সদস্য। আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। আলী আজম বলেন, স্যার তাদের কাছে জানতে চান তার নামে কোনো ওয়ারেন্ট আছে কিনা? তারা বলেন, নেই। স্যার প্রশ্ন করেন- তাহলে কেন আমাকে নিয়ে যাবেন? এ সময় ডিবি পুলিশের সদস্যরা জানায়, আপনি পরে সবকিছু জানতে পারবেন। এখন আমাদের সঙ্গে চলেন। আলী আজম বলেন, তখন আমাদের সন্দেহ হয়। আমরা ডিবি পুলিশের পরিচয়পত্র দেখতে চাই। তাকে নিয়ে যেতে বাধা দিই। বাবুর্চি আলী আজম বলেন, আমরা বাধা দিলে একজন আমার মাথার বামপাশে একটি ঘুসি মারে। তখন আমি পড়ে যাই। এ সময় ডিবি পরিচয় দেয়া লোকগুলো কেয়ারটেকার মতিন মোল্লাকে একটি পিস্তল দেখিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। সকাল ৮টা ২৫ মিনিটের সময় তারা স্যারকে গেটের বাইরে নিয়ে গিয়ে বাড়ির কিছুদূরে থাকা একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে হলিফ্যামেলি হাসপাতালের রাস্তার দিকে চলে যায়। বাড়ির গৃহকর্মী হনুফা বেগম সাংবাদিকদের জানান, বাড়িতে অতিথিরা এলেই নাস্তা দেয়া হয়। তাদেরও নাস্তা দেয়া হয়। যে তিনজন বাসায় এসেছিলেন তারা এসেই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। স্যার তখন সেভ করছিলেন। তিনি তাদের চিৎকার শুনে খুব বিরক্ত প্রকাশ করছিলেন। এদিকে গতকাল সকালে শফিক রেহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গণমাধ্যম কর্মী ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ভিড়। পরিবারের সদস্যরা তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলেন। অন্যদিকে তাকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে তার আত্মীয়স্বজনরা তার বাড়ি এবং ডিবি পুলিশের কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেন। ওদিকে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে বেলা সোয়া ১০টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। এরপর তিনি ছুটে যান শফিক রেহমানের ইস্কাটনের বাসভবনে। ততক্ষণে সেখানে ভিড় করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। বাসভবনের দোতলার কক্ষে রিজভী আহমেদ বসলে সেখানে চোখ মুছতে মুছতে এসে বসেন তালেয়া রহমান। এ সময় রিজভী আহমেদ তাকে সান্ত্বনা ও সাহস দেন। বেলা ১১টার দিকে তালেয়া রহমান নাস্তা ও ওষুধ নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে যান। তার কাছ থেকে নাস্তা ও ওষুধ গ্রহণ করেন ডিবি পুলিশের কয়েকজন সদস্য। তবে ওই সময় তালেয়া রহমান তার স্বামী শফিক রেহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি বাড়িতে ফিরে যান।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মারুফ হোসেন সরদার সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রীর সন্তান ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণের অভিযোগে পল্টন থানায় গত বছরের ৩রা আগস্ট  পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। মামলা নম্বর-৩। ওই মামলার এজাহার নামীয়সহ কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছিল। ওই মামলায় ষড়যন্ত্রকারী ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন হওয়ার কারণে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রতারণার মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা হলো: তালেয়া রহমান
শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেয়া রেহমান আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে সাংবাদিকদের জানান, এটা সম্পূর্ণ একটা প্রতারণা। তারা মিডিয়ার নাম করে বাসায় ঢুকে একজন সৎ, নির্ভীক সাংবাদিককে ধরে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় সাংবাদিকদের মানুষ বিশ্বাস করতে পারবে না। আমার জানামতে, তার নামে থানায় কোনো মামলা নেই। ওয়ারেন্ট থাকার কোনো প্রশ্নই উঠে না। তিনি জানান, শফিক রেহমানকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর দুই ঘণ্টা আমরা কোনো খবর পাইনি। পরে ডিবি অফিস থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হয়, একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে মিন্টো রোডের ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে আনা হয়েছে। তার জন্য ওষুধ ও সকালের নাস্তা নিয়ে আসুন। তালেয়া রহমান বলেন, এই ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের নেই। তিনি বৃটিশ নাগরিক। বাংলাদেশে বৃটিশ হাইকমিশন থেকে আমার কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমি ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। বৃটিশ হাইকমিশন থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তারা পুরো পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। তালেয়া রেহমান জানান, স্বৈরাচারের সময় সত্য কথা বলার জন্য আমার স্বামী নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় আমরা দুঃখিত। তবে ভেঙে পড়েনি। তিনি অনেক বয়স্ক এবং অসুস্থ মানুষ। এটাই আমাদের উদ্বেগের বিষয়। তার বিষয়টি আমরা আইনগতভাবে মোকাবিলা করবো। এ সময় তালেয়া রহমান তার স্বামীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান বর্তমানে মৌচাকে ঢিল নামে একটি পত্রিকার সম্পাদক। তার ইস্কাটনের বাড়িতেই ওই পত্রিকার অফিস। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি একজন জনপ্রিয় উপস্থাপক। তার টকশো ‘লাল গোলাপ’ সর্বসাধারণের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তিনি বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য। তার একমাত্র ছেলে সুমিত রেহমান লন্ডনে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ইস্কাটনের নিজ বাড়িতে সস্ত্রীক বসবাস করেন তিনি। এ প্রবীণ সাংবাদিক বর্তমানে হার্ট, ডায়াবেটিস ও প্রেসারসহ নানা রোগে ভুগছেন। এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যার পরও সাংবাদিক পরিচয়ে কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তি শফিক রেহমানের বাড়িতে গিয়েছিলেন।

জামিন না মঞ্জুর: মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সিনিয়র পুলিশ সুপার হাসান আরাফাত শফিক রেহমানকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চান। আসামিপক্ষে রিমান্ড বাতিল করে জামিনের আবেদন করা হয়। ঢাকার মহানগর হাকিম মাজহারুল ইসলাম শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তবে জিজ্ঞাসাবাদে আসামিকে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণের নির্দেশ দেন। রিমান্ড প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামির পরোক্ষ প্রত্যক্ষ মদতে ও অর্থয়নে আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। কেন তিনি এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং তার সঙ্গে কারা কারা জড়িত তাদেরকে গ্রেপ্তার করার জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। আসামি পক্ষ থেকে বলা হয় তিনি এমন কোনো ঘৃণ্য ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন, বয়স্ক বিবেচনায় তাকে রিমান্ডে না দিয়ে জামিন দেয়া প্রয়োজন।

শফিক রেহমানের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সানাউল্লাহ মিয়া ও এম মাসুদ আহমেদ তালুকদার। পরে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি), মামলার এজাহার বা তদন্তের প্রতিবেদন কোথাও শফিক রেহমানের নাম নেই। এছাড়া এই অপরাধে সর্বোচ্চ সাজা মাত্র ছয় মাসের কারাদণ্ড। মামলার ধারাও জামিনযোগ্য। তারপরও তার জামিন না দিয়ে রিমান্ড মঞ্জুর করাটা অস্বাভাবিক। বিভিন্ন সময় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কথা বলার কারণেই তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। আইনজীবী এম মাসুদ আহমেদ তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, মামলার মূল অপরাধটিই বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পরিকল্পনার ষড়যন্ত্র। অথচ মূল মামলায় অপহরণের কথাই নেই। যুক্ত হয়নি অপহরণের ধারাও। সরকার ভুলভাবে মামলাটি করেছে। তাহলে যেখানে এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি সেখানে শফিক রেহমান সহযোগিতা করবেন কিভাবে।
শফিক রেহমানের মুক্তি দাবি খালেদার
স্টাফ রিপোর্টার: কব্জা করতে না পেরে সরকার প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এ জন্য যে, তিনি বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর অনাচার, ব্যর্থতা ও কূপমণ্ডূকতার বিরুদ্ধে অবিচল নির্ভয়ে লিখে যান। এই ঘৃণ্য অপকর্মটি করার আরেকটি কারণ হলো- বর্তমান সরকার প্রধানের গণবিরোধী, অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারী নীতি শফিক রেহমান তার শাণিত লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। তিনি সত্য উচ্চারণে অবিচল ও সাহসী এক কলমযোদ্ধা। সেই কারণে তাকে কব্জা করতে না পেরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এটি সরকারের চরম স্বেচ্ছাচারিতারই বহিঃপ্রকাশ। শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন এই মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিপন্ন করবেন না। আপনি কখনোই শফিক রেহমানের মতো ঋজু ও আত্মশক্তিতে বলীয়ান কলমযোদ্ধাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে পর্যুদস্ত করতে পারবেন না। কারণ আপনার সরকার আজ গণবিচ্ছিন্ন ও জনগণের শত্রুপক্ষ। আমি অবিলম্বে দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত বানোয়াট মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বর্তমান ভোটারবিহীন অবৈধ সরকার কষ্টার্জিত বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জনগণের বিরুদ্ধে এখন যুদ্ধ শুরু করেছে। সরকারের অপকীর্তি ও লাগামহীন দুর্নীতির কারণে পায়ের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে দেশকে নিক্ষেপ করা হচ্ছে এক ভয়ংকর অতল গভীর খাদে। মানুষের ভোটাধিকার হরণের পর বাকস্বাধীনতাও কেড়ে নেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করতে তাদের ওপর চলছে দলন-পীড়ন। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সাজানো মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক ও সম্পাদকদেরও গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী এখন তার পছন্দের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যকে দিয়ে দেশের স্পষ্টভাষী ও সত্য উচ্চারণে অকুণ্ঠ বিদ্ব্যজ্জনদেরকেও নির্মূলের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। তাদের সেই দুরভিসন্ধি ও নির্মম আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটলো অশীতিপর, দুর্জয় সাহসী সাংবাদিক ও কলামনিস্ট শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে। দেশে আজ সম্মানী ব্যক্তি ও সুধীজনদের মানহানি, গ্রেপ্তার করে কণ্ঠরোধ এবং নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের নির্বাক করার হীন অপচেষ্টার কোনো অন্ত নেই। বিএনপি চেয়ারপারসন সরকারের উদ্দেশে বলেন, আমি বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের উদ্দেশ্যে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই- মামলা, হামলা, খুন, জখম, গুম, অপহরণসহ নানাবিধ বীভৎস অনাচার ঢাকতেই আপনারা শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করেছেন। এর প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা। বাক, ব্যক্তি, লেখনী, ভাষণ, মুদ্রণের স্বাধীনতাসহ জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন। আলাদা বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শুক্রবার রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নানকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অনির্বাচিত হওয়ায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তাদের পছন্দ নয়। তাই সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করছে। একদলীয় শাসনকে দীর্ঘায়িত করতেই দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর উচ্চ আদালত থেকে জামিনে থাকা মেয়র মান্নানকে সাজানো মিথ্যা মামলায় আবারো গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় খালেদা জিয়া গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে মেয়র মান্নানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাজানো মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। ওদিকে আলাদা বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, শফিক রেহমানের মতো দেশের একজন নির্ভীক সাংবাদিক ও কলামনিস্টকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী প্রমাণ করলো, দেশের মানুষের আজ কোনো বাকস্বাধীনতা নেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি এখন আইনের শাসনে নয়, বরং এখানে এক ব্যক্তির নির্দয় কর্তৃত্ব চলছে। নাগরিকদেরকে নিপীড়ন করে দেশে এখন এক ব্যক্তির ইচ্ছার শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। নিজেদের অপশাসন, কুকীর্তি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় চরম ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকার এখন আইনের বদলে বেআইনের শরণাপন্ন হয়েছে। জনগণের প্রতি তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই বলেই বেপরোয়া উন্মাদনায় কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ করছে। মির্জা আলমগীর বলেন, দেশের গুণীজনরা আজ অপমানিত ও লাঞ্ছিত। শফিক রেহমান আধুনিকতা, প্রগতি, অগ্রগতির মুখপাত্র। যে ব্যক্তি মানুষকে লাল গোলাপ দিয়ে ভালোবাসার কথা প্রচার করেন, তিনি কখনো রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করতে পারেন তা এদেশের মানুষ কখনোই বিশ্বাস করে না। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী মামলা ভোটারবিহীন সরকারের গভীর চক্রান্তেরই অংশ। সরকারকে বিশিষ্ট নাগরিক ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন বন্ধ করে গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। সেই সঙ্গে শফিক রেহমানের মুক্তি দাবি করেন তিনি।

এ গ্রেপ্তার প্রমাণ করে দেশে গণতন্ত্র নেই: আলমগীর
ওদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারই প্রমাণ করে দেশে গণতন্ত্র নেই, বাকস্বাধীনতা নেই। শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত। গতকাল সকাল ১০টায় ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকায় অগ্নিকা  কে্ষতিগ্রস্ত গোয়ালপাড়া এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। এ সময় সাংবাদিক শফিক রেহমানের মুক্তির দাবি জানান তিনি।

সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?: রিজভী
শফিক রেহমানের মতো গুণিজনদের এমন পরিণতি হলে দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায় প্রশ্ন করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত তাৎক্ষনিক এক সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, শফিক রেহমান একজন জ্ঞানতাপস মানুষ। যার বাবা ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতার শিক্ষক, তাকে এই পরিণতি ভোগ করতে হবে? দেশের বিশিষ্ট গুণীজনদের যদি এই পরিণতি হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? শফিক রেহমানকে আটক করতে গিয়ে ডিবি পুলিশের টেলিভিশন সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, দেশ কারা চালাচ্ছে? কোন শকুনিরা এদেশটাকে ছিঁড়ে-কুড়ে টুকরো টুকরো করছে। প্রধানমন্ত্রী আগেও একজন বরেণ্য আইনজীবীকে উল্লেখ করে বলেছেন ‘মুই কার খালুরে’, ‘আমার বেগুন আমি রাঁধব, যত খুশি লবণ দেব’। এই যে কথা-বার্তা, এ থেকে মনে হয় উনি উনার পরিবার ও উনার দল ছাড়া এদেশে কারও কোন সম্মান নেই। রিজভী আহমেদ বলেন, ভোটবিহীন সরকার দেশকে চরম বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে গেছে। দুর্বল, হৃদয়হীন, দাম্ভিক, কুতার্কিক প্রধানমন্ত্রী এখন অকপট সত্যভাষী গুণীজনদের নির্মূলের মহাপরিকল্পনার নির্দেশ দিয়েছেন। যার নির্মম শিকার হলেন, এই সময়ের সাহসী দুর্জয় সাংবাদিক অশীতিপর শফিক রেহমান। তিনি বলেন, এ সরকার চারিদিক থেকে ব্যর্থ। কোনো দিক তারা সামাল দিতে পারছে না। এই ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) দেশের একজন প্রতিথযশা সাংবাদিক ও গুণী মানুষকে গ্রেপ্তার করেছেন। শফিক রেহমান সরকারের অনাচার-ব্যর্থতা, কুপমডুপতার বিরুদ্ধে অবিচল নির্ভয়ে লিখে যান তার শানিত লেখনীতে। শেখ হাসিনা এই ঘৃন্য অপকর্মটি করলেন এই জন্য যে, তার হুকুমদার ও বাধ্য করার নীতি শফিক রেহমানের উপর প্রয়োগ করা যায় না। কারণ শফিক রেহমান সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে ধ্রুবতারার মতো অবিচল। শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের একটা নাটক তারা করলেন। আমরা এই গ্রেপ্তারের নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। শফিক রেহমানের মুক্তির দাবিতে বিএনপি কোন কর্মসূচি দেবে কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী আহমেদ বলেন, মুক্তি দেয়া না হলে কঠোর কর্মসূচির দিকে আমরা এগিয়ে যাবো। এটা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। গাজীপুরের মেয়র মান্নানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে রিজভী বলেন, বর্তমান অবৈধ ভোটারবিহীন সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দেখতে পারে না। তাই গাজীপুরের নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে গ্রেপ্তার করেছে। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় কারাভোগের পর তাকে ফের গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন উপস্থিত ছিলেন।

শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ
প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমান ও গাজীপুরের সিটি মেয়র এমএ মান্নানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। শনিবার সকাল ১১টায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে তাৎক্ষণিক এ প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে ফের নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রেজা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম পটু, যুগ্ম সম্পাদক কাজী রহমান মানিক, আশরাফুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জল, জুলফিকার হোসেন জুয়েল, যুবদল নেতা ইকবাল আহমেদ, দুলাল উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা এবিএম মুকুল, হাসান সাইফুল, সরদার নুরুজ্জামান, নাহিদুর রহমান জুয়েলসহ শতাধিক নেতাকর্মী  উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রবীণ এ সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন।

Leave a Reply