লালমোহনের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নেই ॥ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দুর্ভোগ চরমে
মোঃ জসিম জনি, লালমোহন (ভোলা) থেকে
ভোলার লালমোহনের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নেই। যেগুলোতে রয়েছে তারও অধিকাংশ নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না করায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোন কোনটির দরজা পর্যন্ত নেই। চরম নোংরা পরিবেশের মধ্যে ক্লাস করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের জরুরী প্রয়োজনে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। স্কুল থেকে দৌড়ে চলে যেতে হয় বাড়িতে। শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষকরাও এনিয়ে চরম অসুবিধায় রয়েছে। অক্টোবর জাতীয় স্যানিটেশন মাস চললেও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিন পরিদর্শনে এমন চিত্রই দেখা গেছে। যদিও লালমোহন উপজেলাকে শতভাগ স্যনিটেশন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট নির্মাণে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, লালমেহন উপজেলায় মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০৯ টি। তন্মধ্যে কলেজ ৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৩ টি, নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৩ টি, মাদ্রাসা ৫৩ টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০৩ টি রয়েছে। এছাড়া বেসরকারী সংগঠন ব্র্যাক, ডরপ, আনন্দ স্কুল ও কিণ্ডার গার্টেন রয়েছে আরো ২ শতাধিক। এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু কিছুতে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা থাকলেও তা অপরিস্কার, দুর্গন্ধযুক্ত। উপজেলা সদরে অবস্থিত লালমোহন হাই স্কুলের ছাত্রদের ব্যবহারের টয়লেটেরও করুন হাল। এটি প্রায়ই অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন থাকে বলে ছাত্রদের অভিযোগ রয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে এই অবস্থা আরো খারাপ। সরেজমিনে কালমা ইউনিয়নের একতা বাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ওই বিদ্যালয়ের টয়লেট থাকলেও শ্যাওলা ও জঙ্গলে ঢাকা। টয়লেটের দরজা নেই, ভেতরে নোংরা পরিবেশ। ক্লাস করার সময় দুর্গন্ধ আসে ক্লাসে। তাই পড়া লেখায় বিঘœ ঘটে। এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের বিভিন্ন খাতের অর্থ বরাদ্দ কম হওয়ায় টয়লেট সংস্কার করা যায়নি। তাই দুর্গন্ধে ক্লাস করতে সমস্যা হয়। তবে বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে। তখন নতুন টয়লেটেরও ব্যবস্থা থাকবে। দেবীরচর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বজলুর রহমান জানান, আমাদের স্কুলের টয়লেট অপরিচ্ছন্ন ও ভাঙ্গাচোড়া বিধায় ছাত্র ছাত্রীদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। এ খাতে ভিন্ন কোন অর্থ বরাদ্দ না থাকায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
সরোজমিনকালে দেখা গেছে, বিদ্যালয়গুলোতে টয়লেট নামে মাত্র থাকলেও তা ব্যবহার অনুপযোগী। শিশুরা সচেতনতার অভাবে ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট না পাওয়ায় যত্রতত্র ব্যবহার করছে। ফলে বিদ্যালয়ের পরিবেশও নোংরা হয়ে যাচ্ছে। অথচ সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে নানা রকমভাবে শিশু বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিশুর মৌলিক অধিকার বিকাশের জন্য প্রশিক্ষণ, সভা- সেমিনার ইত্যাদি করলেও মাঠ পর্যায়ে তদারকির অভাবে গোড়াতেই গলদ থেকে যাচ্ছে। ফলে সাফল্য ধরা দিচ্ছে না। চরভূতা মানিকগঞ্জ স্কুলের ছাত্র সবুজ জানান, আমাদের স্কুলে টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহার করা যায় না। দুর্গন্ধে আমাদের ক্লাস করতে অসুবিধা হয়।
এব্যাপারে লালমোহন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যোতীশ চন্দ্র শীল জানান, অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝড়াজীর্ণ অবস্থায় আছে। ভবনগুলো নতুন করে নির্মাণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তালিকা দেয়া হয়েছে। নতুন ভবন হলে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের সমস্যা আর থাকবে না।