লাব্বায়েক আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক

10/10/2013 8:13 pmViews: 27

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥
তোমার নামে একি নেশা
হে প্রিয় হজরত-!
কোথায় আরব কোথায় এ হিন্দ/নয়নে মোর নাই তবু নিন্দ,
মোর প্রাণে শুধু জাগে তোমার
মদিনারই পথ।
ইয়াসরিব! এককালের আরবের গোত্র দ্বন্দ্বে বিক্ষত অঞ্চল। হানাহানি আর পরস্পর অবিশ্বাসে যেখানে বসবাস করা রীতিমতো হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। ৬২২ খৃষ্টাব্দে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স) সেখানে হিজরত করেন। তিনি ইয়াসরিবে প্রতিষ্ঠিত করেন শান্তি, পারস্পরিক ভাতৃত্ববোধ। মানুষ তাঁর চতুর্দিকে সমবেত হতে থাকে। তাঁর পূতঃ পরশে ইয়াসরিবে প্রাণস্পন্দন জাগে, দিনদিন কোলাহলময় হয়ে এক সময় ইয়াসরিব পরিণত হলো শহরে। নয়া নামেও বিভূষিত হলো। ইয়াসরিব হলো মদিনা- মাদিনাতুর রাসুল বা রাসুলের (স) শহর। সে থেকে দেশ-দেশান্তরের মুসলিম অমুসলিমরা ছুটে এসেছে মদিনায়। হযরতের (স) ওফাতের পরেও এই শহরের আবেদন সমান থাকে। বরং যত মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে ততই বাড়ছে মুসলমানদের ব্যস্ততা, রূপলাভ করেছে অযুত কোটি মানুষের ভালবাসার তীর্থস্থান হিসেবে। কারণ এখানেই চির শায়িত আছেন আমাদের সকলের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স)। এখানে শুয়ে আছেন তাঁর প্রিয় সাহাবীগণ, ইসলামের মহান শহীদান। মহানবী (স) এখানকার একটি অংশকে বেহেস্তের টুকরা বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, মা-বাইনা ক্ববরী ওয়া মিম্বারী রাওজাতুম মিন রিয়াজিল জান্নাহ্- আমার মাজার এবং আমার মিম্বরের মাঝখানে বেহেস্তের অন্যতম বাগান।
সে হিসেবে ইয়াসরিব হলো মদিনা আর মদিনা হলো মুমিনদের কাছে বেহেস্তের নমুনা। সাত সাগর তেরো নদী সাঁতরিয়ে সকল উম্মতে মুহাম্মদির পরম লক্ষ্য থাকে সে পূণ্যভূমিতে যাওয়ার এবং হযরতের (স) মাজার জেয়ারত ও সেখানে নামাজ আদায় করার। মদিনায় নবীর মসজিদে নামাজ পড়ার ফযিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এই মসজিদে এক রাকাত নামাজ আদায় করবে সে পঞ্চাশ হাজার রাকাত নামাজের সাওয়াব পাবে।’ তিনি আরও বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করবে তার জন্য শেষ বিচারের দিন সুপারিশ করা আমার জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। তিনি আরও সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে, যে ব্যক্তি হজ করে গেল অথচ আমার জিয়ারতে আসল না সে প্রকারান্তরে আমার সঙ্গে গোস্তাখি করে গেল-। তাই হাজিসাহেবানের কাছে কা’বার আনুষ্ঠানিকতার সঙ্গে মদিনা জিয়ারতও অন্যতম কর্মসূচী থাকে। এর মাধ্যমে তারা অর্জন করে আঁহযরতের (স) সে পূতঃ সুসংবাদ পরকালে শাফায়াত পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ, পায় অফুরন্ত সাওয়াব ও মোবারক আসহাবে কেরামের স্মৃতি বিজড়িত নানা নিদর্শনের পরিচয়।
পবিত্র হজ সম্পাদনের পর এবার আমরা পূণ্যভূমি মদিনা শরীফে গমন করব এবং মদিনা হতে জেদ্দা হয়ে দেশে ফিরব ইনশাআল্লাহ। মদিনা শরীফ নীরব সুশৃঙ্খল শহর। অত্যন্ত শান্ত মনে মুসলমানরা এখানে চলাফেরা করে। এমনকি পায়ের জুতোর আওয়াজ করে হাঁটতে এবং যত্রতত্র থুুথু ফেলতেও ভয় পায় নবীভক্তরা। কারণ তাঁরা মনে করেন, এখানেই আমাদের নবীজী শুয়ে আছেন। ইবাদত বন্দেগী কম হোক আর বেশি হোক, আদবের খেলাপ যেন কিছু না হয়, সেদিকে থাকে সবার সজাগ দৃষ্টি। আর মদিনা ত্যাগের সময় আশিক উম্মতদের কান্না ও বেদনার শেষ থাকে না। সবাই মুনাজাত ধরে বলে, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের ক্ষমা কর। আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা চান।
আমরা তোমার জিয়ারতে এসেছি। পারিনি তোমার অতীত সাহাবীদের মতো জীবন ও রক্ত দিতে, তোমার প্রেমে হিজরত করতে। কিন্তু এখানে এসে তোমার ও তোমার প্রিয় সাহাবীদের ত্যাগ তিতিক্ষার জমি দেখে আমাদের মন ঈমান ও ইশকে আজ ভরপুর হয়ে গেল। আমরা আজ তোমার সঙ্গে ওয়াদা করছি, কখনও তোমার সুন্নাহ ও আদর্শ ছাড়ব না। আমরা যেন আবার এখানে আসতে পারি পরওয়ারদিগারের কাছে সে সুযোগ ভিক্ষা করি আর যদি আসতে না পারি শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমার মদিনা থেকে প্রাপ্ত সুন্নাহর সুবাস নিয়ে স্থির থাকব এই সংকল্প করে যাচ্ছি…।’ হজ ও জিয়ারতকারীদের এ ধরনের রোনাজারি ও সঙ্কল্প হজের আগে পরে মদিনার আকাশ-বাতাস অলিগলিকে ভারি করে তোলে

Leave a Reply