রোনালদোর জোড়া গোল, ইতিহাস গড়ল রিয়াল
রোনালদোর জোড়া গোল, ইতিহাস গড়ল রিয়াল
ক্রিশ্চিয়ানা রোনালদোর জোড়া গোলে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তুলে নিলো রিয়াল মাদ্রিদ। এই প্রথমবারের মতো কোনো দল টানা দ্বিতীয়বারের মতো এই শিরোপা জয় করল। আর কোচ হয়ে দারুণ ক্যারিশমা দেখালেন জিনেদিন জিদান। কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দুই আসরেই ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ক্লাবকে উপহার দিলেন তিনি।
কার্ডিফের মিলেনিয়াম স্টেডিয়ামে একপেশে ফাইনালে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন জুভেন্তাসকে ৪-১ গোলে পরাজিত করলো রিয়াল মাদ্রিদ। জোড়া গোল করলেন রিয়ালের পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বাকি দুই গোল করলেন কাসেমিরো এবং মার্কো আসেনসিও। জুভেন্তাসের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন মারিও মানজুকিচ।
এ নিয়ে মোট ১২বার ইউরোপিয়ান ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরলো রিয়াল মাদ্রিদ। লা দুয়োডেসিমা। গত চার বছরেই তিনবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তুলে নিয়েছে লজ ব্লাঙ্কোজরা। একবার কার্লো আনচেলত্তির অধীনে। বাকি দু’বার জিদানের অধীনে। ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামে নতুন করে আত্মপ্রকাশের পর এই প্রথম ক্লাব হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদই ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরপর দু’বার জিতে ইতিহাস গড়ল।
ইতালি এবং জুভেন্তাস কিংবদন্তী জিয়ানলুইজি বুফনের বলতে গেলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটা ছিল শেষ সুযোগ। ক্যারিয়ারে সব ট্রফি জেতা হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপাটা বাকি ছিল তার। সেই সুযোগটাও নষ্ট করে দিলেন রোনালদো। জোড়া গোল করে।
জিনেদিন জিদান ইতিহাসের দ্বিতীয় কোচ, যিনি টানা দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতেছেন। এর আগে ১৯৯২-৯৩ সালে টানা দুটি শিরোপা জিতেছিলেন আরিগো সাচ্চি।
খেলার ২০ মিনিটেই রিয়াল মাদ্রিদকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। খেলার জয়-পরাজয় বুঝি তখনই নির্ধারিত হয়ে যায়! পাল্টা আক্রমণে দানি কারভাজলের পাস থেকে রোনালদো শুধু বক্সের কোণ ঘেঁসে বলটি জুভেন্তাসের জালে জড়িয়ে দেন। জিয়ানলুইজি বুফনকে দর্শক হয়েই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে হয় গোলটি।
৭ মিনিট পরই কার্ডিফের একাংশকে স্তব্ধ করে দিয়ে গোল পরিশোধ করে দেয়া জুভেন্তাস। গোল করেন মারিও মানজুকিচ। সান্দ্রোর ক্রস থেকে বল পান হিগুয়াইন। তিনি বলটি পাস দেন মানজুকিচক। বুকের ওপর বলটিকে দারুণ নিয়ন্ত্রণে নেন এই ক্রোয়েশিয়ান। এরপর জোরালো এক শটে পরাস্ত করেন নাভাসকে।
১-১ গোলে শেষ হয় প্রথমার্ধ। তখনও মনে হচ্ছিল বুঝি, খেলাটিতে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ভোজবাজির মত সব উল্টে যায়। খেলার ৬১ মিনিটে রিয়ারকে আবারও এগিয়ে দেন দলটির ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার কাসেমিরো। ৩০ গজ দুর থেকে নেয়া তার বিদ্যুৎ গতির শট জড়িয়ে যায় জুভেন্তাসের জালে।
তিন মিনিট পর আবারও গোল। রিয়ালকে আবারও এগিয়ে দেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। লুকা মডরিচ দুর্দান্ত একটি পাস দেন পোস্টের সামনে। সেখানে ছিলেন রোনালদো। দারুণ এক শটে তিনি পরাস্ত করেন বুফনকে। পুরোপুরি পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলো জুভেন্তাস।
৮৪ মিনিটে ১০ জনের দলে পরিণত হয় জুভেন্তাস। দ্বিতীয়বার হলুদ কার্ড দেখেন জুভেন্তাসের ফুটবলার হুয়ার কুয়াদ্রাদো বেলো। রামোসকে ফাউল করার অপরাধে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড = লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বহিস্কার হন তিনি। খেলার একেবারে শেষ মিনিটে আবারও গোল। এবার গোলদাতা পরিবর্তিত ফুটবলার মার্কো আসেনসিও।
রোনালদোর ফ্রি কিক থেকে বল ওয়ালে বাধা পেয়ে চলে যায় বাম পাশে। সেখানে বলের নিয়ন্ত্রণ নেন মার্সেলো এবং একজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে তিনি বল পাস দেন গোলপোস্টের সামনে। আসেনসিও শুধু এক কোণ দিয়ে বলটিকে জড়িয়ে দেন জুভেন্তাসের জালে। সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ হয় এক হালি। বাকি সময়টা জুভেন্তাস চেষ্টা করেও পারেনি গোল করতে। রেফারির শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই বিজয়োল্লাসে মেতে ওঠে রিয়াল ফুটবলাররা।