রোজিনাকে হেনস্তাকারীদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে : সংসদে রুমিন
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যারা ছয় ঘণ্টা সাংবাদিক রোজিনাকে আটকে রেখে হেনস্তা করেছেন, তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে সংসদে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
রোববার জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে রুমিন ফারহানা এ কথা বলেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, করোনার জন্য জরুরিভিত্তিতে হেলথ টেকনিশিয়ান নিয়োগে মাথাপিছু ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা দুর্নীতির বীভৎস খবর প্রকাশিত হয়েছে একটি জাতীয় দৈনিকে। সেই প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম যখন ‘এখন ১ কোটি দেব, পরে আরো পাবেন’, ‘৩৫০ কোটি টাকার জরুরি কেনাকাটায় অনিয়ম’সহ বিভিন্ন রিপোর্ট করে স্বাস্থ্যখাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরেছেন, তখন আমলানির্ভর সরকারের হাতে চরম হেনস্তার শিকার হন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যারা ছয় ঘণ্টা রোজিনাকে আটকে রেখে অপদস্ত করেছেন, তাদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? মানুষের চিন্তা, বাক ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্ত গণমাধ্যমের স্বার্থে রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
অনলাইন পত্রিকার সাংবাদিক ও খাবার চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করা ফরিদ আহমেদ আমলাদের বাড়াবাড়ি ও বেপরোয়া আচরণের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারে বারবারই সংখ্যার ওপর জোর দেয়। কোনো গণমাধ্যমের ওপর যদি সত্য রিপোর্ট প্রকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের নিবর্তন নেমে আসে, তখন কোনো গণমাধ্যমই আর স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না, তা সে সংখ্যা যাই হোক না কেন। আর সে কারণেই বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে ক্রমাগত পেছাতে পেছাতে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২তম। মিয়ানমার, আফগানিস্তান এমনকি উগান্ডাও বাংলাদেশের ওপরে।
বিএনপি দলীয় এই হুইপ বলেন, ‘আমলাদের বাড়াবাড়ি আমরা সুলতানা সরোবর নামকরণের সময়ই দেখেছিলাম। অনলাইন পত্রিকা সাংবাদিক সেই খবর প্রকাশ করলে শারীরিক নির্যাতনের পর মোবাইল কোর্ট দিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। অথচ সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট অসাংবিধানিক।’
রুমিন ফারহানা বলেন, হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে মহাবিপদে পড়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফরিদ আহমেদ। তিনি চারতলা বাড়ি এবং একটি হোসিয়ারি কারখানার মালিক, এমন তথ্যের ভিত্তিতে ইউএনও ৩৩৩ নম্বরে কল করে অযথা হয়রানি ও সময় নষ্ট করার দায়ে ফরিদ আহমেদকে শাস্তি হিসেবে ১০০ গরিব লোকের মধ্যে খাদ্যসহায়তা বিতরণের নির্দেশ দেন। এটা না করতে পারলে জেলে যেতে হবে, এই ভয়ে তিনি স্ত্রীর অলংকার বন্ধক রেখে এবং আত্মীয়দের কাছ থেকে ঋণ করে ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় করে খাদ্যসহায়তা করতে বাধ্য হন। এই ঘটনায় এক ইউএনও কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ছাড়াই তাকে শাস্তি দেয়া এবং অতি ক্ষমতাশালী আমলাতন্ত্র এখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ফরিদের একটি ছোট হোসিয়ারি কারখানা ছিল। পৈতৃক চারতলা বাড়িটি ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে ভাগ হওয়ার পর তার ভাগে পড়েছে মাত্র তিনটি কক্ষ। এর মধ্যেই তিনি পরিবার নিয়ে চলছিলেন। কিন্তু করোনার সময় তিনি হোসিয়ারি কারখানাটি আর চালিয়ে যেতে পারেননি। পরে একটি হোসিয়ারি কারখানায় কর্মচারীর কাজ করতে শুরু করেন তিনি। স্ত্রী, কন্যা আর এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে নিয়ে তার দিন আর চলছিল না। করোনা তাকে খাদ্যের কষ্টেরই মুখোমুখি করেছে।