রাষ্ট্রের দুই অঙ্গ ব্যর্থ হলে বিচার বিভাগ নীরব থাকতে পারে না : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, আইন ও নির্বাহী বিভাগের কাজের ওপর আদালত বিচারিক পর্যালোচনার মাধ্যমে এবং কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষকের (ওয়াচডগ) দায়িত্ব পালন করছে। সাংবিধানিক পদ্ধতির অধীনে স্বাধীন বিচার বিভাগ এ দায়িত্ব পালন করে। রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের ভূমিকা সঠিকভাবে অঙ্কন করার মাধ্যমে সংবিধানকে সমুন্নত রাখা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান অবদান। যখন রাষ্ট্রের দুটি অঙ্গ তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয় তখন বিচার বিভাগ নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না। আইনের সীমার মধ্যে থেকে সুপ্রিম কোর্ট সব সময় সংবিধানের অন্যতম অভিভাবক হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীতে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে ‘বিচারিক স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট এবং কমনওয়েলথ ম্যাজিস্ট্রেটস অ্যান্ড জাজেস অ্যাসোসিয়েশন (সিএমজেএ) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারিক স্বাধীনতা মানে কোনো ধরনের প্রভাব বা হস্তক্ষেপ ছাড়া বিচারকের ক্ষমতা প্রয়োগ করা। বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার মূল ও ঐতিহ্যগত অর্থ হলো—সরকারের রাজনৈতিক শাখাগুলো থেকে বিশেষত নির্বাহী সরকার থেকে বিচারকদের সামষ্টিক ও স্বতন্ত্র স্বাধীনতা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ধারণা কোনো শস্যভাণ্ডারের মতো নয় যা শুধু বিচারকদের ওপর নির্ভর করে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা আইনি কাঠামোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। এই কাঠামোর মধ্যে থেকে বিচার বিভাগকে কাজ করতে হয়। সরকারের সমর্থন এবং রাষ্ট্রের অন্য অঙ্গগুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন।
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর বিচার ব্যবস্থা একই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। আমাদের বিচারিক দায়িত্বশীলতার, সহজে বিচার পাওয়ার সুযোগের, কাঠামোগত স্বাধীনতার, বিচার বিভাগে তথ্যপ্রযুক্তিগত সুবিধার, শক্তিশালী নাগরিক সমাজের, রাজনৈতিক সদিচ্ছার এবং সচেতনতার অভাব রয়েছে। অপর্যাপ্ত বাজেট ও বেতনের পাশাপাশি আইনজীবী সমিতি ও বেঞ্চের (আদালত) মধ্যে সুসম্পর্কের অভাবসহ নানা সীমাবদ্ধতা উন্নয়নের পথে বাধা। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এবং আইনের শাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য কমনওয়েলথ দেশগুলোর বিচার বিভাগগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষ নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণটি কী—তা জানে না। নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সত্যিকার অর্থে পৃথক করার জন্য মানুষের কোনো শক্তিশালী আন্দোলন নেই। সচেতনতার অভাবই এর কারণ।
কমনওয়েলথ দেশগুলোর সরকারগুলোকে কমনওয়েলথ লিগ্যাল রিসার্চ জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এমন একাডেমিতে সবাই তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে। একই সঙ্গে সন্ত্রাস সম্পর্কিত এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মামলার বিষয়েও আলাপ আলোচনা করবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের চিফ ম্যাজিস্ট্রেট রয় রিনাউডে, ইংল্যান্ডের বিচারক শামীম কুরেশী, কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের আইন উপদেষ্টা মার্ক গোথরে।