ঢাকায় নিযুক্ত ৪টি দেশের রাষ্ট্রদূতের স্থায়ী এসকর্ট সুবিধা বাতিল করায় উদ্বিগ্ন বিএনপি। এসকর্ট সুবিধা প্রত্যাহারের ঘটনায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যৌথসভা শেষে তিনি বলেন, সরকারপ্রধান বিদেশে গিয়ে উপযুক্ত প্রটোকল না পাওয়ায় হয়তো কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশে দীর্ঘকাল ধরে তারা (রাষ্ট্রদূতরা) এসকর্ট প্রটোকল পেয়ে আসছেন। হঠাৎ করে সেই প্রটোকলকে বাতিল করে দেয়ার অর্থটাই হচ্ছে সামথিং ইজ ভেরি রং উইথ দিজ কান্ট্রিজ।
রাষ্ট্রদূতের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার সরকারের দায়িত্বহীনতা উল্লেখ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, রাষ্ট্রদূতের বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে দু’টি কারণ থাকতে পারে। একটা হচ্ছে, এটা চরম দায়িত্বহীনতা। কারণ এরফলে যে আন্তর্জাতিক সমস্যার সৃষ্টি হবে, সেই সমস্যাটা বাংলাদেশের জনগণকেই ভোগ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, সম্ভবত এবার বিদেশে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঠিক সেই রকম উপযুক্ত প্রটোকল পান নাই, যে কারণে হয়তো এটা একটা প্রতিবাদ হিসেবে বা তার প্রতিশোধ হিসেবে আমরা দেখতে পারছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটা আমাদের আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করবে, একটা সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি করবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এটা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি। এটা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবশ্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, আমি এটাতে উদ্বিগ্ন। কূটনীতির বিষয়ে এটা বাংলাদেশকে আরও একঘরে করে তুলবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ সমস্যাটা শুধু সরকারের না, সমস্যাটা তো আমাদের বাংলাদেশের জনগণের। কারণ এটার যে প্রভাব সেটা বাংলাদেশের মানুষকে ভোগ করতে হবে।
গত সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যে যুদ্ধ করছি-সংগ্রাম করছি-লড়াই করছি, সেই লড়াইটা হচ্ছে একটা সত্যিকার অর্থেই প্রতিনিধিত্বমূলক একটি সংসদ তৈরি করার জন্য। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে এটা হবে না। আমরা বার বার করে বলছি যে, একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার আওয়ামী লীগ কী গঠন করবে, না করবে- সেটা আমাদের কাছে কোনো ব্যাপারই না। আমরা একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই। সেই নিরপেক্ষ সরকার অবশ্যই নির্দলীয়ভাবে চাই, সেখানে কোনো দলীয় ব্যক্তিকে আমরা চাই না। বিএনপি সংসদ থেকে পদত্যাগ করার বিষয়টি ভুল ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, কখনই না। এটা (সংসদ থেকে পদত্যাগ করে বেরিয়ে আসা) অত্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ এই সংসদ জাতির আশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে তো বটেই, এই সংসদে তো জাতির প্রতিনিধিত্বিই ছিল না। বিকজ দে আর নট ইলেক্টেড। জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা: গতকাল সকালে নয়াপল্টনে যৌথসভা করে বিএনপি। সভায় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে ১৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, সেমিনার, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, রচনা প্রতিযোগিতা, স্বরচিত কবিতা পাঠ ও বইমেলা প্রদর্শনী প্রভৃতি।
১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অভ্যুত্থানে নিহত হন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেই থেকে দিনকে ‘শাহাদাৎ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে বিএনপি। যৌথসভা শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণের মহান পথপ্রদর্শক প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণীয় করে রাখবার জন্য আমরা আগামী ২৯শে মে থেকে ১০ই জুন পর্যন্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এই কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আলোচনা সভা, সেমিনার, জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করা। ৩০শে মে দলের কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখা হবে, নেতাকর্মীরা কালোব্যাজ ধারণ করবে। বিএনপি’র প্রত্যেকটি অঙ্গ সংগঠন আলাদা আলাদা করে কর্মসূচি করবে। মহানগর উত্তর-দক্ষিণ প্রতিটি ওয়ার্ডে দুঃস্থ ও অসহায়দের মধ্যে বস্ত্র ও খাদ্য বিতরণ ও দোয়া মাহফিল করবে। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পত্র-পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে এবং বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ওপর পোস্টার প্রকাশ করা হবে বলে জানান মহাসচিব।
জিয়াউর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী উপলক্ষে ৩০শে মে ঢাকা মহানগর এবং একইভাবে সারা দেশে জেলাপর্যায় দুঃস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণের কর্মসূচি থাকবে বলে জানান তিনি। বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্ব্বে যৌথ সভায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, তাইফুল ইসলাম টিপু, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র রফিকুল আলম মজনু, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, শ্রমিক দলের মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।