রাশিয়া তার ট্যাংক বহরের একটি বড় অংশই হারিয়েছে।
দাবিগুলো সত্য হলে রাশিয়া তার ট্যাংক বহরের একটি বড় অংশই হারিয়েছে।
রাশিয়ার এই বিপর্যয়ের পেছনে রয়েছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া এন্টি-ট্যাংক মিসাইল জ্যাভেলিন। যুদ্ধের শুরুতেই ইউক্রেনকে ২০০০ জ্যাভেলিন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপরের সংখ্যা প্রকাশিত না হলেও বিবিসির হিসেবে, আরও অন্তত ২০০০ জ্যাভেলিন পেয়েছে ইউক্রেন। এই এন্টি-ট্যাংক মিসাইল ট্যাংকের উপরিভাগে হামলা চালাতে সক্ষম। এটিই ট্যাংকের সবথেকে দুর্বল অংশ। যদিও অনেক রাশিয়ান ট্যাংকে পাল্টা ব্যবস্থাও আছে। মিসাইলটিকে মাঝপথে ধ্বংস করে দিতে পারে এই ব্যবস্থা। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বৃটেনও ইউক্রেনকে ৩ হাজার ৬০০ এনএলএডব্লিউ মিসাইল দিয়েছে। এগুলোও ট্যাংক ধ্বংসে বেশ কার্যকরি অস্ত্র। রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসের ইনস্টিটিউটের গবেষক নিক রেনল্ডস বলেন, জ্যাভেলিন ও এনএলএডব্লিউ অত্যন্ত কার্যকরি অস্ত্র। এগুলো ছাড়া ইউক্রেনের পরিস্থিতি পুরোপুরি অন্যরকম হতো। মিসাইলের পাশাপাশি ১০০ সুইচেবল এন্টি-ট্যাংক ড্রোনও পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ড্রোনগুলো কামিকাজে মডেলের। এগুলো দিয়ে কয়েক মাইল দূরে থেকেই হামলা চালানো সম্ভব। এগুলো উড়ে গিয়ে ট্যাংকের উপর থেকে ওয়ারহেড ছেড়ে দেয়।
তবে রাশিয়ার এমন অবস্থার জন্য তাদের কৌশলও দায়ি। রাশিয়া তাদের অভিযান পরিচালনা করে মূলত ব্যাটেলিয়ান ট্যাক্টিকাল গ্রুপের মাধ্যমে। এগুলোতে থাকে ট্যাংক, পদাতিক বাহিনী এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র। একেকটি গ্রুপ একেক রকম। তবে বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই দেখা যায় এতে প্রচুর সশস্ত্র যান থাকে কিন্তু তুলনামূলক কম সেনা থাকে। ফলে কোনো সংকটে বেশি সেনা প্রস্তুত থাকে না রাশিয়ার। এই ইউনিটগুলো তৈরি করা হয়েছে, দ্রুত অনেক যুদ্ধাস্ত্রের সঙ্গে আক্রমণ করার জন্য। কিন্তু এটি করতে গিয়ে নিজেদের জন্য কোনো প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা রাখেনি তারা। এই ইউনিটের বিরুদ্ধে হামলা হলে কী হবে তার কোনো সুবিধা রাখা হয়নি।
এছাড়া আরেকটি বিষয় হচ্ছে, রাশিয়া এই যুদ্ধে তাদের বিমান বাহিনীকে ঠিকভাবে ব্যবহার করেনি। যুদ্ধের প্রথমাংশে ইউক্রেনের সেনারা নিজেদের সুবিধামতো অবস্থান নির্ধারণ করতে পেরেছে। আকাশ থেকে নজরদারি না থাকায় তাদের অবস্থানও কেউ বুঝতে পারেনি। নিশ্চিন্তে রাশিয়ার বাহিনীকে টার্গেট করতে পারায় তাদের ক্ষতিও বেশি করা গেছে। তবে রাশিয়া যতগুলো ট্যাংক হারিয়েছে তার অর্ধেকই হচ্ছে তাদের ফেলে যাওয়া কিংবা শত্রুর হাতে জব্দ হওয়া ট্যাংক। মূলত সরবরাহের ঘাটতি থাকায় এই সংকটে পড়েছে রাশিয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর দক্ষতার ঘাটতি এ যুদ্ধে ফুটে উঠেছে। ইউক্রেনের কৃষকরা তাদের ট্রাক্টর দিয়েও রুশ ট্যাংকের মোকাবেলা করেছে এমন ফুটেজ দেখা গেছে। আবার রুশ সেনারা তেলের অভাবে অনেক ট্যাংক ফেলে চলে গেছে। অনেক ট্যাংক নরম মাটিতে আটকে গেছে কারণ তাদের নেতারা বছরের সঠিক সময়ে আক্রমণ করতে পারেনি। রাশিয়ার পদাতিক বাহিনী নতুন করে প্রচুর সেনা নিয়োগ দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা নি¤œ মধ্যমানের বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।