রায় পুনর্বিবেচনা করা যাবে কী?
 জাকিয়া আহমেদ ও ইলিয়াস সরকার : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুল কাদের মোল্লা তার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন কি পারবেন না তা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
জাকিয়া আহমেদ ও ইলিয়াস সরকার : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুল কাদের মোল্লা তার রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন কি পারবেন না তা নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
একদিকে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের মতে, এ রায়ে রিভিউ করার (পুনর্বিবেচনার) সুযোগ নেই। অপরদিকে আসামিপক্ষ বলছে, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেলে তারা রিভিউ আবেদন করবেন। সংবিধান কী বলে?: সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদে (আপীল বিভাগ কর্তৃক রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা) রয়েছে, সংসদের যে কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে এবং আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যে কোন বিধি-সাপেক্ষে আপীল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের ওপর থাকিবে। তবে মানবতাবিরোধীদের বিষয়ে সংবিধানের ৪৭ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য [ বা অন্য কোন ব্যক্তি, ব্যক্তি সমষ্টি বা সংগঠন] কিংবা যুদ্ধবন্দিকে আটক, ফৌজদারিতে সোপর্দ কিংবা দণ্ডদান করিবার বিধান-সংবলিত কোন আইন বা আইনের বিধান এই সংবিধানের কোন বিধানের সহিত অসামঞ্জস্য বা তাহার পরিপন্থি, এই কারণে বাতিল বা বেআইনি বলিয়া গণ্য হইবে না কিংবা কখনও বাতিল বা বেআইনি হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে না। এছাড়াও ৪৭ (ক) অনুচ্ছেদের (১) দফা মতে, যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, সেই ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ, ৩৫ অনুচ্ছেদের (১) ও (৩) দফা এবং ৪৪ অনুচ্ছেদের অধীন নিশ্চয়কৃত অধিকারসমূহ প্রযোজ্য হইবে না। (২) এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবে না। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এই বিচার হয়েছে একটি বিশেষ আইনে। এখানে রিভিউ করার সুযোগ নেই। এখন একটাই সুযোগ আছে, কেবল দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করা। তবে পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের মার্জনার সুযোগ আছে বলে আমার মনে হয় না। এখন কারাকর্তৃপক্ষ দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, কাদের মোল্লার এই রায়ই চূড়ান্ত। এই রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) করা যাবে না। অর্থাৎ ১০৫ অনুচ্ছেদ প্রযোজ্য হবে না। এদের (মানবতাবিরোধী অপরাধী) ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি ও সাক্ষ্য আইনও প্রয়োজ্য নয়। কেন রিভিউ করতে পারবে না এ বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, কারণ ট্রাইব্যুনাল আইনে বলা আছে, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে কেবল আপিল বিভাগে আপিল করা যাবে। রিভিউর কথা বলা হয়নি। তাই এ রায়ই চূড়ান্ত। তিনি বলেন, এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রায়ের কপি যাবে ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনাল এ রায় পাঠাবে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে। এরপর জেল কর্তৃপক্ষ রায় কার্যকর করবে। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারবেন কিনা এব বিষয়ে তিনি বলেন, “তা পারবে। প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবে।“ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক আব্দুল কাদের মোল্লার প্রধান আইনজীবী ও জামায়াতে ইসলামীর আরেক সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ করবো। এই রায় একটি ভুল রায়, আমরা এ রায়ে ক্ষুব্ধ, বিস্মিত। আমরা মনে করি এ রায় ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। তিনি আরও বলেন, রিভিউ আবেদন করা কাদের মোল্লার সাংবিধানিক অধিকার। এই সুপ্রিম কোর্টও হয়েছে সংবিধানের মাধ্যমে। আইসিটি (ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট’ ৭৩) অ্যাক্টে সুপ্রিম কোর্ট সৃষ্টি হয়নি। খন্দকার মাহবুব হোসেন আসামি পক্ষের অপর আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনও বলেন, এই ভুল রায় সঠিক করার জন্য আমরা রিভিউ করবো। রিভিউয়ের মাধ্যমে সঠিক রায় আসবে
 
 
















