রাবিতে প্রকাশ্যে শিবিরের সন্ত্রাস, ছাত্রলীগ নেতার পায়ের রগ কর্তন, বেপরোয়া হামলায় আর এক নেতা গুলিবিদ্ধ ॥ ক্যাম্পাসে উত্তেজনা, মহাসড়ক অবরোধ

08/10/2013 7:07 pmViews: 69

Untitled-120131008100552রাবি সংবাদদাতা ॥ ছাত্রলীগ রাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হোসেন তুহিনের হাত-পায়ের রগ কাটার এক মাস পার না হতেই আবারও একই কায়দায় হামলা চালালো বেপরোয়া শিবিরের ক্যাডাররা। এবার প্রকাশ্যে দিবালোকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পায়ের রগ কেটে দিল শিবির ক্যাডাররা। এ সময় শিবির ক্যাডারদের গুলিতে স্থানীয় ছাত্রলীগের অপর এক নেতা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ধরমপুর এলাকায় প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে।
এবার শিবিরের হামলার শিকার হলো রাবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সাদ্দাম ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা তুফান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনার পর পরই রাবি শাখা ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ব্যাপক বিক্ষোভ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসংলগ্ন রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম, তুফান ও কৌশিক বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ধরমপুর এলাকা থেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজন শেষে অটোরিকশায় ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। এ সময় তারা মিজান মোড় নামক স্থানে পৌঁছলে ৮ থেকে ১০ জন সশস্ত্র শিবির ক্যাডার তাঁদের ওপর অতর্কিকভাবে হামলা চালায়। এ সময় তাঁরা ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দামের হাত-পায়ে ও পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এতে তার হাত ও পায়ের রগ কাটা পড়ে। এ সময় হামলাকারীদের ছোড়া একটি গুলি ছাত্রলীগ নেতা তুফানের পিঠেও লাগে। তবে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে বেঁচে যান ছাত্রলীগ নেতা কৌশিক। পরে স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় সাদ্দাম ও তুফানকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, সাদ্দামকে হাসপাতালের ৫ নম্বর ও তুফানকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। রামেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. বি. কে. দাম ৫ ঘন্টা অস্ত্রোপচার শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আহত সাদ্দামের ফুসফুসের একটি অংশও ছুরির আঘাতে কেটে গেছে। নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তাঁর অবস্থা আশংক্ষাজনক।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. আহম্মেদ তারেক বলেন, আহতদের অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। সাদ্দামের পিঠে, মাথায় ও বাম পায়ের গুরুতর জখম করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাদ্দামের বাম পায়ের রগ কেটে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়া হতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, সাদ্দাম বেঁচে গেলেও চিরদিনের মতো তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হতে পারে।
রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রশিবির পরিকল্পিতভাবে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর একের পর হামলা চালাচ্ছে। সাদ্দাম ও তুফানের ওপর হামলার ঘটনায়ও শিবির জড়িত। তবে তাদের আর কোন ছাড় দেয়া হবে না। শিবিরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এর পর যেখানেই তাদের পাওয়া যাবে সেখানেই প্রতিহত করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন এই নেতা।
নগরীর মতিহার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম আবদুস সেবাহান বলেন, ‘এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। একইসঙ্গে থানায় মামলা দায়েরেরও প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
রাবি ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসে। সে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে রাজশাহী নগরীতেও। তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রলীগ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সড়ক অবরোধ করে তারা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ করায় রাজশাহী-ঢাকা রুটে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় একঘণ্টা পর প্রক্টর ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর তারিকুল ইসলাম মিলন বলেন, এই ধরনের ঘটনা অপ্রত্যাশিত। বার বার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের রগ কাটার ঘটনা অতীতের সকল ঘটনার চেয়ে এটি নজিরবিহীন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয় হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে রগ কাটা ও হামলার দায় এড়িয়ে ছাত্র শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য সম্পাদক জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় শিবির জড়িত নয়। দলীয় কোন্দল থেকে ওই ঘটনা ঘটিয়ে এখন আমাদের ওপর অভিযোগ করে দায় সারার চেষ্টা করছে ছাত্রলীগ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরদার তমিজ উদ্দিন জানান, কারা এই হামলা চালিয়েছে তা এখনও আমরা নিশ্চিত নই। তবে হামলার ধরন দেখে শিবিরেরই কা- বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ওই এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত রয়েছে। জড়িতদের আটকের সর্বত্মক চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।
রাজশাহীতে থামছে না শিবিরের নৃশংসতা ॥ শিবিরের রগ কাটার অপসংস্কৃতি ও নৃশংসতা থামছেই না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রগকাটার ধারাবাহিকতায় নৃসংশতায় এখন রীতিমতো শঙ্কিত রাবির সাধারণ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবের হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির ক্যাডাররা। পরবর্তী সময়ে তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। একইসময় বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এ্যান্ড কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম রবির হাত ও পায়ের রগ কেটে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০১২ সালের ২১ নবেম্বর সন্ধ্যার পর অতর্কিত হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের খালেদা জিয়া হলের সামনে তৎকালীন ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আখেরুজ্জামান তাকিমকে কুপিয়ে হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির ক্যাডাররা। দীর্ঘ ২৩ দিন অজ্ঞান থাকার পর জ্ঞান ফেরে তাকিমের। ধারাবাহিতভাবে তাদের এ কা- চলতে থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে তেমন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতারা এবার শিবিরের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের যেসব নেতারা ক্যাম্পাসে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে তাদের তালিকা করে আক্রমণ শুরু করেছে শিবির ক্যাডাররা। সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুরে ছাত্রলীগের নেতা সাদ্দামের হাত-পায়ের রগ কেটে নেয়ার মাধ্যমে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

Leave a Reply