রাতভর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চবি
রাতভর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র চবি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। রাত ২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরণের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া এবং থেমে থেমে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
বুধবার বিকালে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে জখম করাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। এতে তাৎক্ষণিক ছাত্রলীগের ছয় কর্মী আহত ও সন্দেহভাজন চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। বিবাদমান দুটি পক্ষ হলো নগরীর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী কনকর্ড ও সিক্সটি নাইন এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী বিজয় গ্রুপ।
আটককৃতরা হলেন- সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সীমান্ত দাস, একই শিক্ষাবর্ষের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বেলায়েত আকতার ও দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মেহেদী হাসান। আটক অন্যজন হলেন বহিরাগত। তিনি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বাসিন্দা আরিফ।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গত পহেলা মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলে কনকর্ডের কর্মী বোরহানুল ইসলাম আরমানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় আবির নামে বিজয়ের এক কর্মীর। এর জের ধরে গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে আবিরকে কুপিয়ে জখম করে কনকর্ডের কর্মীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতে ক্যাম্পাসজুড়ে থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হলেও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। এর রেশ ধরে বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহ জালাল হলের সামনে কনকর্ড গ্রুপ অবস্থান নিলে বিজয় গ্রুপের কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে তাদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় বিজয় গ্রুপ সোহারওয়ার্দী হল থেকে এবং কনকর্ড গ্রুপ শাহাজালাল হলের সামনে থেকে পাল্টাপাল্টি ইট ও ভাঙ্গা কাচ ছুঁড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বিজয় গ্রুপের কর্মীরা কনকর্ডের কর্মীদের উপর হামলা করতে করতে শাহ জালাল হলের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এরপর শাহাজালাল হলের গেইট ও ভেতরে দাফায় দফায় দু’গ্রুপে সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় গ্রুপের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়। এসময় শাহাজালাল হলে থাকা সিটি মেয়র আ জ ম নাসিরের অনুসারী উপ-গ্রুপগুলো এক হয়ে ধাওয়া করে বিজয়ের কর্মীদের। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়ে উভয় পক্ষকে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পুলিশ ছাত্রলীগ কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে চারজনকে আটক করে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিজয় গ্রুপের নেতা মো. ইলিয়াস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইদিন আগে সৃষ্ট অন্য পক্ষগুলোর সংঘর্ষের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই তারা আমাদের কর্মীর উপর হামলা চালিয়েছে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা আরও প্রশ্রয় পাচ্ছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি ও কনকর্ড গ্রুপের নেতা আব্দুল মালেক বলেন, ‘তাদের (বিজয়ের) একটা ছেলে আমাদের এক ছেলেকে কিছুদিন আগে মারধর করে। আমি তাদের বলেছিলাম এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। পরে আমাদের ছেলেরা ক্ষোভে তাদের এক কর্মীকে মারধর করে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত। আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।’ আটকের বিষয়ে প্রক্টর বলেন, ‘পুলিশ চারজনকে সন্দেহভাজন আটক করেছে। তাদেরকে বিশ্বিবদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে। যাচাই বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’