রাজপথে নারী লাঞ্ছনা- নায়েক বরখাস্ত ছাত্র ধর্মঘট আজ
রাজপথে নারী লাঞ্ছনা- নায়েক বরখাস্ত ছাত্র ধর্মঘট আজ
পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লাঞ্ছনা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশের নায়েক মো. আনিসুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পুলিশের ওই হামলার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার দিন পুলিশের হাতে আটককৃত ৫ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিসি (মিডিয়া) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, নারী লাঞ্ছনাকারীদের বিচারের দাবিতে ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও করতে আসা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার ঘটনায় নায়েক আনিসকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি মিরপুর পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) কর্তব্যরত ছিলেন। অতিরিক্ত ফোর্সের সঙ্গে তাকে আনা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় তদন্ত করে দেখার জন্য যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিক) বেলালুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। তাদের ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এদিকে, রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, এ ঘটনায় আটককৃত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল, ঢাকা মহানগর সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক রায়, তেজগাঁও কলেজ সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অন্তু চন্দ্রনাথ, আরিফুল ইসলাম ও সাদ্দাম হোসেন নামে ৫ জনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে গতকাল উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি পালন করতে গেলে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। প্রতিবাদকারী এক নারীকর্মীকে লাঞ্ছিত করে পুলিশ সদস্যরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠন।
ছাত্র ইউনিয়নের ডাকে আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট
পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচিতে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। গতকাল দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন আলাদা আলাদা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। এসব কর্মসূচি থেকে অবিলম্বে পূর্বঘোষিত ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। এদিকে আজ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট পালন করবে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য।
নারী কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা এবং দায়িত্বে অবহেলা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের অপসারণের দাবিতে আজ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। গতকাল বেলা ১২টায় ক্যাম্পাসে এক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা করা হয়। সমাবেশে বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন, সাধারণ সম্পাদক স্নেহাদ্রী চক্রবর্ত্তী রিন্টু, দপ্তর সম্পাদক শরীফুল চৌধুরী, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার, সাধারণ সম্পাদক ইভা মজুমদার প্রমুখ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিকে গত ১০ই মে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশ হামলা চালায়। নারী লাঞ্ছনার বিচার করতে পারেনি যে পুলিশ এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, আজ তাদের হাতেই লাঞ্ছিত হয়েছে আমাদের বোনেরা। এ সময় তারা আলাদাভাবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়। এদিকে ধর্মঘটের প্রচারণা চালাতে গিয়ে সংগঠনের খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক সুজয় সাম্যকেও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হতে হয়। এ ঘটনারও নিন্দা জানান নেতারা। দুপুর ১টায় ধর্মঘটের সমর্থনে সংবাদ সম্মেলন করে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি এসএম পারভেজ লেনিন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক ফয়সাল ফারুক অভীক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক। তিনি বলেন, গত ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার টিএসসির রাস্তায় নারী লাঞ্ছনার বিচার করতে পারেনি যে পুলিশ, সেই পুলিশই আবার ঘটনার বিচার চাইতে গেলে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালাচ্ছে। সেখানেও নারীদের মেরে আহত করা হচ্ছে। এ ঘটনা প্রমাণ করেছে পুলিশ হলো নারী লাঞ্ছনাকারীদের মদদদাতা এবং নিজেরাও এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত। হাসান তারেক বলেন, বর্ষবরণে একদল সংঘবদ্ধ যৌন নিপীড়ক পরিকল্পিতভাবে নারীদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার ২৭ দিন অতিবাহিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন দোষীদের রক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, একটা সমাজে নারীর অবস্থান দেখেই বোঝা যায় সে সমাজ কতটা গণতান্ত্রিক। যে সমাজে মানুষ হিসেবে নারীর মর্যাদা নেই, সে সমাজ, সে রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হতে পারে না। মুখে গণতন্ত্রের ফেনা তুলছে যে সরকার তারাও ঘরে-বাইরে-কর্মস্থলে-শিক্ষাঙ্গনে নারীর নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু নিজেদের বাহিনী দিয়ে নারীদের উপর আক্রমণ করেছে। এ সময় তিনি ছাত্র ধর্মঘট সর্বাত্মকভাবে পালন করার আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলন শেষে জোটদ্বয়ের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এদিকে বিকাল পাঁচটায় রোববার ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। সন্ধ্যায় জোটদ্বয়ের পক্ষ থেকে মশাল মিছিল করা হয়।
যৌন নিপীড়কদের রক্ষা করতেই হামলা- গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা
সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ইন্ধনেই পুলিশ যৌন নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা। গতকাল দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডের নির্মল সেন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, যৌন নিপীড়কদের রক্ষা করতেই আন্দোলনকারীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। যারা সরকার চালায় তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ ইন্ধনেই এ হামলা হয়েছে। ফুটেজ দেখে নির্যাতনকারী পুলিশদের শাস্তির দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বাম মোর্চার নেতারা ২৮শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে বলেন, সরকার তাদের ফ্যাসিবাদী শাসন দীর্ঘায়িত করতেই এ নির্বাচন দিয়েছিল। ৫ই জানুয়ারি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সম্মতি ছাড়াই সরকার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশ চালাচ্ছে। তাই জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দ্রুত গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার। এছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবহ উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনারদের পদত্যাগ ও শাস্তিরও দাবি জানান নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে ১৬ই মে শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্কসবাদী) সদস্য শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান সমন্বয়কারী আবদুস সালাম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ।
ছাত্র ইউনিয়নের ধর্মঘটে সমর্থন ছাত্রদলের
যৌন নিপীড়নকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাওকারীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ছাত্র ইউনিয়ন মঙ্গলবার সারা দেশে যে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে তাতে সমর্থন জানিয়েছে ছাত্রদল। গণমাধ্যমে পাঠানো ছাত্রদলের সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান এ সমর্থনের কথা জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, ছাত্রদল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়ার প্রতি অকুণ্ঠচিত্তে সমর্থন ব্যক্ত করেছে। এছাড়াও স্বৈরাচারের কবল থেকে দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা বলেন, গতকাল ছাত্র ইউনিয়ন যৌক্তিক দাবির প্রেক্ষিতে ডিএমপি অফিস ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ তাদের ওপর যে তাণ্ডব ও নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে তা ছাত্র সমাজকে বিস্মৃত করেছে। পুলিশের এহন ঘৃণ্য আচরণের প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের ডাকা যৌক্তিক ছাত্র ধর্মঘটের ছাত্রদলের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, সহাবস্থান নিশ্চিত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রী বোনদের যৌন হয়রানির প্রতিবাদে ছাত্রদল সবসময়ই সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে।
প্রতিবাদকারীদের উপর পুলিশের হামলার তদন্ত দাবি টিআইবির
বর্ষবরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের হামলায় নিন্দা জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ) এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। গতকাল সংগঠন তিনটি আলাদা বিবৃতি পাঠিয়ে এ নিন্দা জানায়। পাশাপাশি ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও ন্যায্য দাবি আদায়ে আয়োজিত সমাবেশে পুলিশের একাংশের পৈশাচিক তাণ্ডব এবং জেন্ডার অসংবেদনশীল আচরণ থেকে এটি সুস্পষ্ট যে রাজনৈতিক শিখণ্ডি হিসেবে ধারাবাহিকভাবে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের পুলিশ এখন নিজেদেরকে সকল আইনের ঊর্ধ্বে হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে, যা আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অশনিসংকেত হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বর্ষবরণের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালনে চরমভাবে ব্যর্থ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা-বাহিনী নারী নিপীড়ন প্রতিকারের স্থলে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল। অন্যদিকে রোববার এই ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের নির্মমভাবে দমনে অমানবিক ভূমিকা পালন করে এই বাহিনী তার ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক নির্যাতন, অমানবিক এবং লাঞ্ছনাকর আচরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে পুলিশের এ জাতীয় আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সরকারি কাজে বাধা প্রদানের ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে আইনের রক্ষকের আইনের ভক্ষক হয়ে উঠা পুলিশ বাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের জন্য ভয়ানক কলঙ্কজনক। একই সঙ্গে নির্লজ্জ আচরণকারী পুলিশ সদস্যদের পক্ষে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাফাইয়ের বিষয়টি আরও গভীরভাবে উদ্বেগজনক। জনগণের কাছে পুলিশের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে টিআইবি পরিচালক ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে তথাকথিত ‘ক্লোজড’ করা বা সাময়িক বরখাস্তের মতো লোক-দেখানো পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। বিএলডব্লিউএলএ এর নির্বাহী পরিচালক সালমা আলী বলেন, পহেলা বৈশাখের ঘটনার ২৭ দিন পার হলেও পুলিশ এখনও কোন নিপীড়ককে আটক করতে পারেনি। তারা নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের যৌক্তিক আন্দোলনে হামলা চালিয়েছে। সে সময় কোন নারী পুলিশ সদস্যেরও উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
অন্য এক বিবৃতিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুষ্ঠু ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হলে এবং দেশের আইনের ব্যবস্থার উপর শ্রদ্ধাবোধ থাকলে পুলিশ কখনও এমন আচরণ করতে পারতো না। সেক্ষেত্রে সরকার দায় এড়াতে পারে না।