রাজপথে নামতে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
দল ও জোটের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে অবশেষে নিজেই রাজপথে নামছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ঘোষিত তফসিল বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে চলমান আন্দোলনে হঠাৎ যে কোনো দিন এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি।
সূত্র জানায়, বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া জোটের আন্দোলন কর্মসূচিতে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততায় সন্তুষ্ট হতে পারলেও হতাশায় আছেন দল তথা জোটের মহানগরের শীর্ষ নেতাদের ওপর। আর তাই রাজধানীতে দল ও জোটের নেতাদের দিকে না তাকিয়ে নিজেই আগামী দিনে রাজপথে অবস্থান করে আন্দোলন পরিচালনা করার ইতিমধ্যে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করেছেন।
জানা যায়, আলোচনা চলছে সমঝোতা হলে দশম নির্বাচনের পর সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রয়োজনে একাদশ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে পর খালেদা জিয়া আর সময় দিতে চান না বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে। তাই তিনি ২৫শে ডিসেম্বর খ্রিস্টানদের বড় দিন শেষে যে কোনো সময় রাজপথে নেমে আন্দোলনে অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে শুক্রবার এক আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ্যাডভোকেট মাহবুব উদ্দিন সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, সময় খুব অল্প, এই সময়ের মধ্যে গণতন্ত্র বহাল রেখে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। অন্যথায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই নির্দলীয় সরকারের আন্দোলন করতে রাস্তায় নেমে অবস্থান নেবেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত ধৈর্যশীল রাজনীতিবিদ, যদি তিনি রাস্তায় নেমে আসেন তাহলে গোটা দেশ জ্বলবে। তখন আপনাদের পতন সুনিশ্চিত হবে। তাই সময় থাকতে সংসদ ভেঙে দিয়ে তফসিল স্থগিত করে সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দিন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকে অনেক খেলা খেলেছেন অনেক চমক দেখিয়েছে। একের পর এক ইস্যু সৃষ্টি করে জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরাতে চেষ্টা চেয়েছেন। তাই আর কোনো ইস্যু পাবেন না। আপনার বিদায় সন্নিকটে। একাদশ নির্বাচনের কথা ভুলে যান, দশম নির্বাচন করতে পারবেন কি না তা ভাবেন।
একাদশ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিসটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, একাদশ নির্বাচনের জন্য যদি সমঝোতা আসার ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে দশম নির্বাচনে কেন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন চলবে। একক নির্বাচন চেষ্টা করেও যদি প্রতিহত না করা যায় তবে নির্বাচনের পরেও আমাদের আন্দোলন অব্যাহতবাবে চলবে। সমঝোতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার না থাকায় দেশে একতরফা প্রহসনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
গত ২৫ অক্টোবরের পর থেকে দলের বেশকয়েকজন শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করে সরকার এবং দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক শীর্ষ নেতাই গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যাওয়ায় তখন থেকেই খালেদা জিয়া নিজেই জেলা পর্যায়ের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে ফোন যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন যাতে করে কোনোভাবেই তাদের মনোবল ভেঙে না যায়।
এমনকি এখন থেকে দলীয় সকল বিবৃতিতে খালেদা জিয়া নিজে চোখ বুলিয়ে দেন যাতে করে কোনো রকম প্রশ্নবিদ্ধ বিষয় না থাকে। আর বিষয়ে তদারকি করতে দলের আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড.আসাদুজ্জামান রিপনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গোপন স্থানে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম মহানগর বিএনপির সকল থানা ও ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাথে বৈঠক করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার পক্ষে নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরীক হতে দলের সকল নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন এবং যারা আন্দোলনে নিজের সম্পৃক্ত করবে না তাদের দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করারও ঘোষণা দেন।
বিএনপি একটি নির্ভরশীল সূত্র জানায়, নির্দেশ দেওয়ার পরেও মহানগর বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে রাজপথে দলীয় আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিতে না দেখে খালেদা জিয়া মহানগর বিএনপির সকল প্রকার কার্যক্রম, কমিটি স্থগিত এমনকি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে নিজেই সার্বিক দায়িত্ব নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানা যায়।
আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় দুই বছর ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট।
বিভিন্ন সময় এ নিয়ে দেশি বিদেশি মহলের উদ্বেগ প্রকাশ করায় সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ দূত ও রাজনৈতিক বিষয়ক সহকারি মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় দুইবার দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশের নির্বাচনকালীন চলমান সংকট নিরসনে আলোচনায় বসে এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি নেইল ওয়াকারের মধ্যস্থতায় একবার আলোচনায় বসলেও তারা নিজ নিজ দলের অনড় অবস্থানে থাকেন।
জোট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মাঝে তৃতীয়বার বৈঠক হলেও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো প্রকার সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারায় সমাধানের পথ ক্ষীণ দেখে বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চলমান সমস্যা সমাধানে রাজপথের আন্দোলনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। কেননা নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের অবস্থান এখনো অনড় ও একতরফা প্রহসনের নির্বাচনের জন্য ঘোষিত তফসিল এখনো স্থগিত করা হয়নি।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে একা সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার বিরতি দিয়ে শনিবার ভোর ৬টা থেকে টানা মঙ্গলবার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠা ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল বাতিলের দাবিতে সারাদেশে ফের ৮৩ ঘণ্টার অবরোধের কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দেন ১৮ দলীয় জোটের পক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এই নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর পর টানা পঞ্চমবারের মতো অবরোধের ডাক দিল ১৮ দল।