রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনতে কাজ করে যাবো

16/02/2017 11:58 amViews: 8

রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় আনতে কাজ করে যাবো

 

নিরপেক্ষভাবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা জানিয়েছেন, কমিশন আপসহীনভাবে দায়িত্ব পালন করে যাবে। একই সঙ্গে সব দলকে কাজের মাধ্যমে আস্থায় আনার আত্মবিশ্বাসের কথাও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল শপথ নেয়ার পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনারকে শপথ পড়ান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। শপথ নেয়ার পর নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যান নতুন ইসি সদস্যরা। সেখানে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন সিইসি। লিখিত বক্তব্যের পর প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি নির্বাচন কমিশনে প্রভাব বিস্তার না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এখানে কারো প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই। আমরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবো এবং দেশের সংবিধান ও আইনের বাইরে কোনো শক্তির দ্বারা নতুন নির্বাচন কমিশন প্রভাবিত হবে না। বিএনপিকে  আস্থায় আনতে আপনাদের প্রথম কাজ কি হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে  সিইসি বলেন, কোনো একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল নয় বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলকে আস্থায় আনতে আমরা কাজ করে যাবো এবং আস্থার নতুন পথ সৃষ্টি হবে ইনশাআল্লাহ। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দলবাজ কর্মকর্তাদের কিভাবে মোকাবিলা করবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কঠোরভাবে  নিয়ন্ত্রণ করবো। আমাদের সংবিধান এবং দেশের আইনকানুনের ভিত্তির বাইরে কোনো রকম প্রভাব আমরা প্রশ্রয় দেবো না। এমন অভিযোগ রয়েছে যে, বর্তমান সিইসি এক সময় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বোর্ডের প্রধান ছিলেন এবং এ দলের সঙ্গে আপনার বর্তমানে কি সম্পর্ক  রয়েছে এমন প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে সিইসি কে এম নুরুল হুদা বলেন, আমি শপথ নেয়ার পর থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই এবং আমি কোনো নির্বাচনী বোর্ডে ছিলাম না। জনতার মঞ্চের সঙ্গে বর্তমান সিইসির সম্পর্ক ছিল-বিএনপির এমন অভিযোগের প্রসঙ্গে সিইসি বলেন কোনো সম্পর্ক ছিল না, একদম মিথ্যা কথা। নতুন কমিশনের প্রথম কাজ কি হবে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনারদের প্রথম কাজ হচ্ছে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সমস্যা চিহ্নিত করে তার সমাধান বের করা। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান।
এর আগে বিকাল ৩টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে শপথ নেন সিইসিসহ ইসির সদস্যরা। প্রথমে সিইসি কে এম নুরুল হুদাকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। পরে পর্যায়ক্রমে অন্য চার কমিশনার যথাক্রমে মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরীকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রধান বিচারপতি। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারকগণ উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া নামের তালিকা থেকে সার্চ কমিটির সুপারিশ ও মতামতের ভিত্তিতে গত ৬ই ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদে সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদাকে মনোনীত করেন। এছাড়া অন্য চার কমিশনার পদে সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালকুদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরীকে মনোনীত করেন প্রেসিডেন্ট। এর আগে নতুন ইসি গঠনের লক্ষ্যে গত ২৫শে জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান করে সার্চ কমিটি গঠন করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। কমিটিতে হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, মহাহিসাব নিরীক্ষক (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক  সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতারকে সদস্য করা হয়। এর আগে ইসি গঠনের বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রেসিডেন্ট। দায়িত্ব পেয়েই বেশ কয়েক  দফায় নিজেদের মধ্যে বৈঠকসহ দেশের বিভিন্ন পেশার স্বনামধন্য ১৬ জন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে মতবিনিময় ও তাদের পরামর্শ শোনে সার্চ কমিটি। একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ৫টি করে নামের তালিকা চায় সার্চ কমিটি। পরে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ১২৮ জনের তালিকা থেকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে গত ৬ই ফেব্রুয়ারি নামের তালিকা প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দেয় সার্চ কমিটি।

Leave a Reply