যে ১১ দফা দাবিতে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট
যে ১১ দফা দাবিতে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট
বেতন বাড়ানোসহ ১১ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ক্রিকেটাররা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন তারা। আর এই দাবিগুলো একে একে পড়ে শোনান ১১ ক্রিকেটার। সোমবার দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ মাধ্যমের সামনে এই দাবিগুলো উপস্থাপন করেন তারা।
প্রথম দাবি উপস্থাপন করেন নাঈম ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রথমেই সম্মানের ব্যাপারে। আমরা যারা ক্রিকেটার আছি, যতটুকু সম্মান আমাদের পাওনা ততটুকু আমরা পাই না। আমাদের খেলোয়াড়দের যে সমিতি আছে (কোয়াব), তাদের কোনো কার্যক্রম নেই। প্রথম দাবি হচ্ছে, যারা এখন এই সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আছেন তাদের দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। এরপর কে প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি হবেন- তা আমরা ক্রিকেটাররা বাছাই করবো।
দ্বিতীয় দাবি তুলে ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিনি বলেন, কত কয়েক বছর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পরিস্থিতি কী নিশ্চয়ই জানেন। এটা নিয়ে কম বেশি সব খেলোয়াড়ই অসন্তুষ্ট। এখানে পারিশ্রমিকের একটা মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। খেলোয়াড়দের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে খেলতে হচ্ছে। আগে যেমন ছিল, তেমনটা নেই। আগে খেলোয়াড়েরা নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী ক্লাব ঠিক করতে পারত। আমাদের দাবি, আগের মতো যেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ফিরে পাই।
তৃতীয় দাবি তুলে ধরে মুশফিকুর রহীম বলেন, আমরা জানি, এ বছর বিপিএল অন্য রকম হচ্ছে। সেটা অবশ্যই রেসপেক্ট করি। যেটা আমাদের দাবি, আগের নিয়মে বিপিএল যেন ফিরে আসে। বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে স্থানীয় খেলোয়াড়ররাও যেন ভালো পারিশ্রমিক পায়। নিলামে যদি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি না নেয় সেটি তাদের ব্যাপার। তবে খেলোয়াড়েরা যেন নিজেদের প্রাপ্য গ্রেডে থাকে।
চতুর্থ দাবি তুলে ধরে সাকিব আল হাসান বলেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক এক লাখ টাকা হতে হবে। আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন ৫০ ভাগ বাড়াতে হবে। প্রতিটি বিভাগে খেলোয়াড়দের প্র্যাকটিস ফ্যাসিলিটিজ বাড়াতে হবে, জিম ইনডোর মাঠ- সব জায়গাতেই। ১২ মাস ফিজিও-ট্রেনার রাখতে হবে। এখন দৈনিক ভাতা দেওয়া হয় ১৫০০ টাকা। আমাদের কাছে যে ফিটনেস চাওয়া হচ্ছে সেটি এই টাকায় সম্ভব নয়। স্বাভাবিকভাবে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হয়। ভালো হোটেলে থাকতে হয়। আর এ জন্য যে টাকা লাগে সেটি দিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বড় ইস্যু আছে ট্রাভেল। ধরেন, একটা ছেলে রাজশাহী থেকে কক্সবাজার যাবে। তাকে ২৫০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে যাওয়ার জন্য। এই টাকায় বাস ছাড়া যাওয়া সম্ভব? এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুতে যেতে বিমানে যেন চলাচল করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আর ওয়ান স্টার, টু স্টার হোটেলে খেলোয়াড়দের থাকা সম্ভব নয়। কারণ চার দিনের ম্যাচে একজন খেলোয়াড়ের ওপর অনেক ধকল যায়। সেই ধকল কাটিয়ে ওঠার সুবিধা যেন টিম হোটেলে থাকে। তার মধ্যে যে টিম বাস দেওয়া হয় সেটি হতাশাজনক। যে বাসে খেলোয়াড়েরা স্বচ্ছন্দবোধ করে তেমন বাস যেন দেওয়া হয়।
পাঁচ নম্বরে এনামুল হক জুনিয়র বলেন, জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সংখ্যাটা অন্তত ৩০জন করতে হবে। বেতন অনেক দিন ধরে বাড়ানো হয় না। বেতন বাড়াতে হবে।
ছয় নম্বর দাবি তুলে ধরে তামিম বলেন, শুধু ক্রিকেটারদের ব্যাপারই নয়। মাঠে যারা কাজ করে, গ্রাউন্ডসম্যানদের দেখেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে মাস শেষে ৫-৬ হাজার টাকা বেতন পায়। আর কোচের কথা বলেন। আমরা নিজেরাই বাংলাদেশি কোচদের দাম দিচ্ছি না। বিদেশি কোচদের বেতন আমাদের ২০টা কোচের বেতনের সমান। দেখুন, একটা সফরে দেখা গেল বাংলাদেশি কোচের অধীনে খেলোয়াড়েরা ভালো করেছে। কিন্তু পরের সফরেই তিনি আর নেই।’
সাত নম্বর দাবি উপস্থাপন করেন এনামুল হক বিজয়। তিনি বলেন, ঘরোয়া লিগে দুইটা চারদিনের টুর্নামেন্ট খেলি, এখানে আরেকটা টুর্নামেন্ট বাড়ানো উচিত। মনে হয় বিপিএলের আগে একটা টি-টোয়েন্টি লিগ খেলা উচিত। আমরা চাই, ন্যাশনাল ক্রিকেট লিগে একটা ওয়ানডে টুর্নামেন্ট চালু হোক, যাতে আমরা আরো ওয়ানডে খেলার সুযোগ পাই।
আট নম্বর দাবি তুলে ধরে নুরুল হাসান সোহান বলেন, ঘরোয়া টুর্নামেন্টের জন্য আমাদের একটা নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। তাহলে আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে পারব।
নয় নম্বরে জুনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, বিপিএলে প্রিমিয়ার লিগের যে বকেয়া টাকা সেটা যেন নির্দিষ্ট সময়ে পাই। গত বছর ১০টি দল টাকা ক্লিয়ার করেছে। কিন্তু ব্রাদার্সের কাছে এখনো পারিশ্রমিক পায় খেলোয়াড়েরা।
ফরহাদ রেজা বলেন, নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে দুটির বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে পারব না খেলোয়াড়েরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ততা না থাকলে যেকোনো লিগ খেলার সুযোগ দিতে হবে।
দাবির মধ্যে আরো আছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচের আগে অনেক সময় জেনে যাই কোন দল জিতবে কোন দল হারবে। এটা খুবই দুঃখজনক। এটা ঠিক করা জরুরি।