যে কারণে শেষবারের মত কোকোকে দেখতে পারলেন না তারেক
ঢাকা : বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল গত বছরের ২ জুন। শারীরিক চেকআপের জন্য যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে গিয়েছিলেন তারেক রহমান। আগে থেকেই হোটেলে সপরিবারে অবস্থান করছিলেন কোকো। সেখানে দুই ভাই একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন, একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন। দীর্ঘক্ষণ একে অপরকে জড়িয়েই ছিলেন তারা । তখন দুই ভাইয়ের মধ্যে রাজনৈতিক ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। দীর্ঘ সাত বছর পর দেখা হয়েছিল তাদের।
রাজধানীর সেনানিবাসের বাড়ি থেকে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরাফাত রহমান কোকো। একই বছরের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার হন তারেক রহমান। এরপর দুই ভাইয়ের আর দেখা হয়নি। যদিও পৃথকভাবে তারেক রহমান ও কোকোর সঙ্গে দেখা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
গত ২৪ জানুয়ারি হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরাফাত রহমান কোকো। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রাথমিকভাবে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন তারেক রহমান। শনিবারই আদরের ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর সংবাদটি তারেক রহমানকে দেয়া হয়। মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকেন তিনি। এরপরই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
কোকোর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনরা তার বাসায় ভিড় করেন। সেসময় তারেক রহমান কারো সঙ্গে তেমন কথা বলেননি। ভিসা জটিলতায় ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েও মালয়েশিয়া যেতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান।
উপস্থিত এক সাবেক ছাত্রদল নেতা বলেন, ভাই হারানোর শোকে তিনি মূহ্যমান। কোনো ভাষা নেই তার। বেশির ভাগ সময় তিনি বসেই ছিলেন। নামাজের সময় উঠে নামাজ পড়েছেন তিনি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম কয়সর আহমেদ জানান, উনার (তারেক জিয়া) মালয়েশিয়া যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি।
খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব মুশফিক ফজল আনসারী সকাল থেকেই তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, অনেক প্রশ্ন মনের ভেতরে নিয়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে সরাসরি চলে যাই আরাফাত রহমানের সবচেয়ে আপনজন, বড় ভাই এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায়।
তিনি লিখেন, প্রবেশের সাথে সাথেই আদরের ভাইটির জন্য দেখলাম সে কি বুক ফাটা আর্তনাদ! বাকরুদ্ধ হয়ে বসেই রইলাম। সান্ত্বনা দেয়ার মত কোনো একটা বাক্যই গোছাতে পারলাম না।
ভিসা জটিলতার বিষয়টি নাম না প্রকাশের শর্তে জানান। সিনিয়র এক নেতা। তিনি বলেন, তারেক রহমান যেহেতু ইউএন-এর পাসপোর্টধারী, তাই মালয়েশিয়া যেতে ভিসা লাগবে।
এদিকে মালয়েশিয়া লন্ডন দূতাবাস শনি ও রোববার বন্ধ থাকায় এ নিয়ে কোনো প্রক্রিয়া চালানো যায়নি।
মুখ দেখা না হলেও লন্ডনে কোকোর মৃত্যুতে গতকাল রবিবার গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে স্থানীয় বিএনপি। এতে অংশ নেন তারেক রহমান। সেখানে দোয়া মাহফিলের আয়োজনও করা হয়।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘তারেক রহমান যে কোনো সময় দেশে আসতে পারেন। কিন্তু তিনি আসবেন কি আসবেন না সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে আমি মনে করি তার আসা উচিৎ। আসলেই তো ভাইয়ের মরদেহ দেখতে পারবেন।’
চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান লন্ডন যান। একই বছরের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরদিন চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান কোকো। একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থাইল্যান্ড থেকে মালয়েশিয়ায় আসেন তিনি। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছিলেন জিয়া দম্পতির ছোট ছেলে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সময় শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার (মালয়েশিয়া সময় ২টা) মারা যান বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। তিনি দুই কন্যাসন্তান রেখে গেছেন। দেশ ছাড়ার পর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কুয়ালালামপুর থাকতেন কোকো।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে আজ রোববার দুপুরে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদে নাগাড়ায় কোকোর প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জোহরের নামজের পর অনুষ্ঠিত জানাজায় বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন। ছোট ভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে যেতে পারলেন না তারেক রহমান।
জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা মসজিদে নাগাড়ায় জড়ো হতে থাকেন। নির্দিষ্ট সময়েই কোকোর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী অংশ নেন। জানাজায় অংশ নিতে সিঙ্গাপুর থেকেও বিএনপি নেতাকর্মীরা মালয়েশিয়ায় আসেন বলে জানা গেছে।