যে কারণে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলো ভারত
যে কারণে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলো ভারত
ভারতে খুচরা দামবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্দেশ্যে রোববার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
যেকোনও সরকারের কাছেই পেঁয়াজের দাম অতীব স্পর্শকাতর একটি বিষয়। ১৯৯৮ সালে পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি সুষমা স্বরাজ নেতৃত্বাধীন দিল্লির রাজ্য সরকারের পতনের কারণ হয়েছিল। চার বছর পর কংগ্রস সরকারও এ ইস্যুতে বিরোধীদের ক্রমাগত আন্দোলনের ফলে একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
ভারতের মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানা বিধানসভার নির্বাচনের একমাসও বাকি নেই। এ অবস্থায় পেঁয়াজের বাড়তি দামের ফল ইভিএমে প্রতিফলিত হোক, এমনটা কিছুতেই চাইবে না বিজেপি সরকার।
জুন মাস থেকেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মূল পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দুই রাজ্য, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকে, উৎপাদন হ্রাসের পরিস্থিতি তৈরির দিকে নজর রাখছিল। এ বছরের গোড়ায় পেঁয়াজ রফতানিতে যে ১০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হত, তা তুলে নেয় সরকার।
মে মাস থেকেই পেঁয়াজের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অগাস্টের পর পেঁয়াজের দাম গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়ে যায়। প্রায় সমস্ত শহরে কিলোপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৬০ টাকা ছাড়িয়েছে। সরকারকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পদক্ষেপ করা ছাড়া আর উপায়ও নেই।
এ মাসের গোড়ায় রাজ্য নিয়ন্ত্রণাধীন এমএমটিসি ২০০০ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য টেন্ডার ডাকে। এ ছাড়া, পেঁয়াজ রফতানির জন্য ন্যূনতম দাম ৮৫০ ডলার প্রতি টন বেঁধে দেওয়া হয়। রোববার থেকে পেঁয়াজ রফতানি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় ভারত।
দেশটির ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলায় পেঁয়াজের গড় পাইকারি দাম ৩৬ টাকা প্রতি কেজি, মধ্যপ্রাচ্যের এবং সিঙ্গাপুরের বাজার দামের সঙ্গে সঙ্গতি পূর্ণ। এর সঙ্গে পরিবহণ ও প্যাকেজিংয়ের খরচ কিলোপ্রতি আরও ১০ টাকা এবং অন্যান্য খরচ রয়েছে, যা কিলোপ্রতি ৫০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বর্তমানে দুবাই ও সিঙ্গাপুরের বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫৫-৬০ টাকা প্রতি কেজি, যার ফলে লাভের সম্ভাবনা সামান্যই। সমস্ত ধরনের রফতানি বন্ধের মাধ্যমে সরকার আশা করছে দেশীয় বাজারে আরও বেশি পেঁয়াজ মিলবে।
পেঁয়াজের বর্তমান দামবৃদ্ধির জন্য দায়ী মহারাষ্ট্র ও কর্নাটকের খরা। খরার জন্যই মজুতের পরিমাণ কমেছে। এ মাসের গোড়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের একটি দল মহারাষ্ট্র পরিদর্শন করে জানায় সারা দেশের আগামী দু মাস চলবার মত পেঁয়াজ রয়েছে।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহরাষ্ট্র সরকারের কাছে পেঁয়াজের দামবৃদ্ধি একটি চ্যালেঞ্জ। একদিকে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী কৃষকদের কথা তাদের যেমন মাথায় রাখতে হবে, তেমনই পেঁয়াজের বাড়তি দাম যেন শহুরে ভোটারদের ক্রুদ্ধ না করে তোলে, দেখতে হবে সে দিকটিও। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।