যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান: পুতিন
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান: পুতিন
খবরে জানানো হয়, রাজধানী মস্কো থেকে ৫ হাজার ৫৫০ কিলোমিটার দূরের শহর ভস্তোচনি কসমোড্রোমে সফরকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে বারবার যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ এনে শান্তি আলোচনা ভেস্তে দিয়েছে ইউক্রেন। এই অবস্থাকে ‘ডেড-এন্ড’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। বক্তব্য রাখার সময় সেখানে উপস্থিত থাকা রুশ মহাকাশ এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে প্রশ্ন করেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ কী সফল হতে যাচ্ছে কিনা! উত্তরে পুতিন বলেন, অবশ্যই, আমার এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
রাশিয়া সামনের দিনগুলোতে ছন্দের সঙ্গে ও শান্তভাবে এই অভিযান চালিয়ে যাবে। স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র যে এক মেরু বিশ্ব ব্যবস্থা চালু করেছিল, তা ভেঙে পড়েছে।
ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল দাবি করে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের রুশ ভাষাভাষীদের রক্ষায় এবং সাবেক সোভিয়েত প্রতিবেশিকে রুশবিরোধীদের ঘাটি হওয়া থেকে আটকাতে এই অভিযানের কোনো বিকল্প ছিল না। যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা আরও বিস্তৃত হচ্ছে। তবে পুতিন দাবি করেন, পশ্চিমাদের এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা কাজ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র সর্বশেষ বেঁচে থাকা ইউক্রেনীয়কে দিয়েও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত।
বুচার অভিযোগ মিথ্যা
কিয়েভ থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল বাদে বাকি সব এলাকা থেকেই পিছু হটছে রুশ সেনারা। তবে তাদের হাত থেকে মুক্ত হওয়া শহরগুলোতে ডজনে ডজনে মরদেহ উদ্ধার করা হচ্ছে। এর মধ্যে যুদ্ধাপরাধের আলামত দেখতে পাচ্ছে ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্ররা। তাদের অভিযোগ, রুশ সেনারা টার্গেট করে ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করেছে। কিয়েভের নিকটবর্তী শহর বুচায় চার শতাধিক মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। বুচা হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও জোরালো করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। তবে পুতিন এমন দাবি উড়িয়ে দিলেন।
রয়টার্সের সাংবাদিক দল মরদেহগুলো পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছে, কারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত তা স্বাধীনভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও ইউক্রেন গণহত্যা এবং যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেছে। এর জবাবে পুতিন বলেন, বুচার ঘটনাটি ভুয়া। আমি পশ্চিমা নেতাদের সিরিয়ার শহর রাকা এবং আফগানিস্তানের ধ্বংসযজ্ঞের কথা একবার ভেবে দেখতে বলেছি। আপনারা কী দেখেন নি, কীভাবে মার্কিন যুদ্ধবিমান সিরিয়ার শহরগুলোকে ধ্বংস্তুপে পরিণত করেছে? মরদেহগুলো মাটিতে পরে ছিল মাসের পর মাস। কেউ তখন সেটি দেখতে আসেনি, কেউ লক্ষ্যই করেনি সেদিকে। পুতিন আরও বলেন, যখন তারা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আনে তখন তারা সিরিয়ার এই ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে চুপ করে থাকে। এরপরে জানা গেলো তাদের এই অভিযোগ মিথ্যা। বুচার ক্ষেত্রে পশ্চিমারা যে অভিযোগ এনেছে তাও এরকম মিথ্যা।
বক্তব্যে পুতিন বিশ্বের ইতিহাসের প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিনের কথা স্মরণ করেন। বলেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ছিল ব্যাপক তারপরেও সবার আগে আমরাই মহাকাশে মানুষ পাঠিয়েছিলাম। এখনও রাশিয়া বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে চায় না। এই আধুনিক সময়ে কাউকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা যায় না। তারমধ্যে রাশিয়ার মতো বিশাল রাষ্ট্রকে বিচ্ছিন্ন রাখা অসম্ভব।