যাত্রাবাড়ীতে নাশকতা- খালেদাকে আসামি করে চার্জশিট
যাত্রাবাড়ীতে নাশকতা- খালেদাকে আসামি করে চার্জশিট
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা ছুড়ে নাশকতার অভিযোগে দায়ের একটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। গতকাল বিকালে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এই চার্জশিট জমা দেয়া হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর বশীর উদ্দিন আহমেদ আদালতে এই চার্জশিট জমা দেন। চার্জশিটে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের আরও ৩৭ নেতাকর্মীর নাম রয়েছে।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর জানান, অন্য আসামির মতো প্রাথমিক তদন্তে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চার্জশিটে তার নামও রয়েছে।
গত ২৩শে জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীতে গ্লোরী পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে অন্তত ৩০ জন দগ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যান। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানার এসআই কে এম নুরুজ্জামান বাদী হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন। এর একটি পেনাল কোড ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে (মামলা নং ৫৮) এবং অপরটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে (মামলা নং ৫৯)। দুটি মামলাতেই খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে ২০ দলীয় জোটের ৬৮ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছিল। গতকাল পেনাল কোড ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দায়েরকৃত মামলাটির চার্জশিট দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, দুটি মামলাই প্রথমে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ তদন্ত করলেও গুরুত্ব বিবেচনা করে তা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রায় তিন মাস ১২ দিন তদন্ত শেষে গতকাল একটি মামলার চার্জশিট জমা দেয়া হয়। চার্জশিটে খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, বরকত উল্লাহ বুলু, আমান উল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সরাফত উল্লাহ সফু, মীর আবু জাফর শামসুদ্দিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আজিজুল বারী হেলাল, আব্দুল কাইয়ুম কমিশনার, লতিফ কমিশনার, সালাউদ্দিন, তানভীর রবিন, নবিউল্লাহ নবী, আতিকুল্লাহ, বাদল কমিশনার, আলমগীর, হাজী মো. জাহাঙ্গীর, জামাল উদ্দিন, জাকির, সোহেল, সেলিম ভুঁইয়া, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, রফিকুল, শামীম, ফারুকুজ্জামান, জনি, শহীদুল্লাহ, ছাত্রদলের আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক শাহীন, পারভেজ, সোহাগ ও লিটন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চার্জশিটে বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও নাশকতার পরিকল্পনা এবং নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, চার্জশিটে মোট ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। চার্জশিটের সঙ্গে ৮ ধরনের আলামত জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া, আসামিদের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়াসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। বাকি ৭ জনকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, আগামী ২৮শে মে এই চার্জশিট আদালতে উপস্থাপনের পর শুনানি হবে। পুলিশ সূত্র জানায়, যে মামলার চার্জশিট জমা দেয়া হয়েছে, তাতে পেনাল কোড ও বিস্ফোরক আইনের ধারা রয়েছে। পেনাল কোড ও বিস্ফোরক আইনের মামলা পৃথক আদালতে বিচারকার্যক্রম চলে। একারণে একই মামলা দুই আদালতে বিচার হওয়ার কারণে দুটি চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।