যশোর-১ ও ২ আসনের সরকারদলীয় প্রার্থীকে ইসির তলব

22/01/2014 10:22 pmViews: 26

 

 

ঢাকা, ২২ জানুয়ারি  : ভোটের আগে ভোট ডাকাতির ঘোষণা আর শপথের আগে এমপি হিসেবে লিখিত পরিচয় দেয়া যশোর-১ ও ২ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন এবং মনিরুল ইসলামকে আগামী ২৭ জানুয়ারি সশরীরে নির্বাচন কমিশনে হাজির হওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

মঙ্গলবার ইসির দেয়া শোকজের জবাবে গণমাধ্যম ও নির্বাচন কমিশনের কাঠোর সমালোচনা করার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এভাবে তলব করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উপসচিব (আইন) বাসুদেব রায় স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাদের দুজনকে যথাসময়ে কমিশনের সামনে হাজির হয়ে তাদের প্রার্থিতা বাতিল সংক্রান্ত কারণ দর্শানোর বিষয়ে শুনানিতে অংশ নিতে বলা হয়েছে। ইসির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অনেকটা বিতর্কিত করে তুলেছেন যশোরের আওয়ামী লীগ দলীয় ২ এমপি প্রার্থী শেখ আফিল উদ্দিন ও মনিরুল ইসলাম মনির। নির্বাচনের আগে ভোট ডাকাতির নীল-নকসা করে পত্রিকার শিরোনাম হন যশোর-১ শার্শা আসনের নবম সংসদের সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন।

দশম সংসদ নির্বাচনে যশোর-১ আসন থেকে ফাঁকা মাঠে ওয়াকওভার পেয়ে নির্বাচিত হন তিনি। এরপরই যশোর-২ আসনের সরকার দলীয় প্রার্থী ও তার বেয়াই এডভোকেট মনিরুল ইসলামের এক কর্মিসভায় সব ভোট নৌকার পক্ষে বিভাবে কাস্ট করাবেন সে সম্পর্কে একটি নতুন ফর্মুলা প্রদান করেন। যা রেকর্ড করে পরদিনই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী রফিকুল ইসলামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শাহীন-উল কবির ইসিতে জমা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরন বিধি ভঙ্গের অভিযোগ আনেন।

বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়। নির্বাচন কমিশন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও শাহীন-উল কবিরের দায়েরকৃত অভিযোগটি নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত ইলোকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটিতে পাঠিয়ে দেন। কমিটি বিষয়টি সরজমিন তদন্ত করে একটি রিপোর্ট প্রদান করেন। একইসঙ্গে ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ও পৃথক একটি তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি তদন্ত করেন। এই কমিটিও মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানে শেখ আফিলের ভোট কারচুপির নীল-নকসার তথ্য প্রমাণ পায়। ফলে পৃথক দুটি কমিটিই প্রধান নির্বাচন কমিশনের দফতরে দুটি রিপোর্ট প্রদান করে নির্বাচন আচরণ বিধি অনুসারে অভিযুক্তদের অপকর্মকে আমলে নিয়ে তাদেরকে নির্বাচনের পর গেজেট ভুক্ত না করার সুপারিশ করেন।

একইসঙ্গে কেন তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ইসি সচিবালয়। প্রাপ্ত নোটিশের জবাবে গেজেটভুক্ত না হয়ে এবং শপথ না পড়েই শেখ আফিল উদ্দিন এবং মনিরুল ইসলাম দুজনেই নিজেদের এমপি হিসেবে লিখিত জবাবে পরিচয় দিয়েছেন যা নির্বাচন কমিশন আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

শেখ আফিল উদ্দিন নোটিশের জবাবে বলেছেন, ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে নৌকা প্রতীতে জয় সুনিশ্চিত করার বিষয়ে গণমাধ্যমে পরিবেশন করা সংবাদের কথাগুলো সম্পূর্ণ অসত্য। নির্বাচন কমিশনে জনৈক শাহীন-উল কবির যে অডিও সিডিটি জমা দিয়েছেন সে সম্পর্কে তার নিজের কোনো কিছু জানা নেই। অডিও সিডিতে যে বয়েজের উল্লেখ করা হয়েছে তা তার নিজের কণ্ঠ নয়।

তিনি গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কোথাও কোনো মিটিংয়ে ১১টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে ভোট কাস্টিং শেষ করে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করার কোনো ঘোষণা দেননি। ৬ পৃষ্টার জবাবে মোট ১১টি পয়েন্টে শেখ আফিল উদ্দিন ও এডভোকেট মনিরুল ইসলাম একই ভাষায় নির্বাচন কমিশনের নোটিশের জবাব দিয়েছেন।

দুই প্রার্থীর দাখিল করা শোকজ নোটিশের হুবহু মিল দেখে হতবাক হয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বশীলরাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা বলেন, দুজন প্রার্থীকে যে শোকজ নোটিশ প্রদান করা হয়েছে তার ধারা উপধারা সবই ভিন্ন। অথচ তারা দুই প্রার্থী জোটবদ্ধ হয়ে হুবুহু একই রকমের জবাব দাখিল করেছেন। যা দেখে স্পষ্ট যে তাদের অপকর্মের দায় দুজনের ঘাড়েই বর্তায়।

Leave a Reply