যমুনা টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে‘‘ছওয়াব”-সংস্থারবক্তব্যঃ

07/03/2022 3:40 pmViews: 35

যমুনা টিভিতে প্রচারিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে‘‘ছওয়াব”-সংস্থারবক্তব্যঃ

গত মাসের ০৪/০২/২০২২ ইং তারিখ দেশের স্বনামধন্য টিভি চ্যানেল যমুনা টিভি তাদের সাপ্তাহিক ৩৬০ ডিগ্রি (৩৬০˚) প্রোগ্রামে বাংলাদেশে অবস্থানরত মায়ানমার হতে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের উপর (রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অন্দরে-২: কার স্বার্থে এনজিও?)-শীর্ষক একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে। উক্ত প্রতিবেদনে যেসব তথ্য চিত্রে“ছওয়াব” (সোস্যাল এজেন্সি ফর ওয়েলফেয়ার এন্ড এডভান্সমেন্ট ইন বাংলাদেশ)- নামক দেশীয় এই এনজিওকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। যমুনা টিভিতে সম্প্রচারিত উক্ত প্রতিবেদন এর অংশএবং তার আলোকে “ছওয়াব”- এর বক্তব্য তুলে ধরা হলোঃ-

১. “ছওয়াব”-গত নভেম্বরে কক্সবাজারের উখিয়ায় ১৪ নম্বর ক্যাম্পে ৪৪২ জনকে শীতবস্ত্র বিতরণ করে। এর মধ্যে মসজিদের ঈমাম ৭০ জন।
২. ৭০ জন ঈমামের একজন পেয়েছেন ২০ থেকে ৩০ টি কম্বল। অথচ তার প্রতিবেশী কোন কম্বল পায়নি।
৩. দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের কম্বল না দিয়ে কেন নেতা গোছের মানুষের মাঝে কম্বল দেয়া হলো?
৪. “ছওয়াব”- এর চেয়ারম্যান এ কে এম রাশেদুজ্জামান পূর্বে মুসলিম এইড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ছিলেন।
৫. চেয়ারম্যান মহোদয় জরুরী মিটিং এর কথা বলে সাংবাদিকদের সামনে আসেননি।
৬. ৭০ জন ঈমাম, ৫৫ জন মাঝি, ১২০ জন রোহিঙ্গা ভলেন্টিয়ারদের কম্বল দিয়েছে “ছওয়াব”।দাতা সংস্থাএইচ এইচ আর ডি (হেল্পিং হ্যান্ড ফর রিলিফ এন্ড ডেভেলপমেন্ট),আমেরিকা-বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের সন্দেহভাজন সংগঠনে অর্থায়ন করে।

উক্ত প্রতিবেদনের আলোকে “ছওয়াব” -সংস্থার বক্তব্য হলো:
১. বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা “ছওয়াব”রোহিঙ্গা শিবিরে যেসকল কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়ন করে, সেগুলো এনজিও ব্যুরোথেকে অনুমোদন এবং সংশ্লিষ্ট জেলার ডিসি (ডেপুটি কমিশনার), আর আর আর সি(শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার)-কক্স বাজারএবং ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার)-উখিয়া, কক্সবাজারমহোদয়কে অবগতকরা এবং উক্ত সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তরের লিখিত অনুমোদন সাপেক্ষে রোহিঙ্গা শিবিরে প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা হয়। গত ৪ঠা নভেম্বর, ২০২১যে শীতবস্ত্র বিতরণ হয়েছে সেক্ষেত্রেওএনজিও ব্যুরো-এর অনুমোদন, আর আর আর সি (শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার), কক্সবাজার জেলারডিসিএবং উখিয়া উপজেলারইউএনও (উপজেলা নির্বাহী অফিসার)মহোদয়কে অবগতকরণ এবংআর আর আর সি -এর লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে সিআইসি (ক্যাম্প ইন-চার্জ), সিএমও (ক্যাম্প মোবিলাইজেশন অফিসার) মহোদয়ের মনোনীত ক্যাম্পে দায়িত্বশীল সরকারী কর্মকর্তাদের সরাসরি নেতৃত্বেউপকারভোগী নির্বাচন ও তালিকা প্রনয়ণ পূর্বক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়। এক্ষেত্রে“ছওয়াব”-এর প্রতিনিধিদের কোন কর্তৃত্ব ও অংশগ্রহণ থাকে না। তবে বিতরণের সময় “ছওয়াব” প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থাকে মাত্র ।

এরই ধারাবাহিকতায়আর আর আর সি (শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার) -এর অনুমতিক্রমেসিআইসি (ক্যাম্প ইন-চার্জ), সিএমও (ক্যাম্প মোবিলাইজেশন অফিসার)মহোদয়ের মনোনীত এবং নির্ধারণ করে দেওয়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বশীল মাঝিদের মাধ্যমে ৪৪২ জন উপকারভোগীনির্বাচন করেন এবং“ছওয়াব”এর প্রতিনিধিদেরকে উক্ত উপকারভোগীদের তালিকা হস্তান্তর করেন। অতঃপর “ছওয়াব”এর প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পের দায়িত্বশীল সরকারী অফিসারদের উপস্থিতিতেউক্ত উপকারভোগীদের মাঝে ৪৪২ টি শীতবস্ত্রের প্যাকেট বিতরণ করা হয়।উক্ত শীতবস্ত্রের প্যাকেটের মধ্যে থাকে ০১ টি কম্বল, ০১ টি সোয়েটার, ০১ টি মাফলার, ০১ টি চাদর, ০১ টি টুপি।

২. প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে,“৭০ জন ঈমামের মধ্যে একজনই পেয়েছেন ২০ থেকে ৩০ টি কম্বল। অথচ তার প্রতিবেশী কোন কম্বল পায়নি”।প্রতিবেদনে যে ঈমামকে দেখানো হয়েছে তিনি ৪/৫ বছর ধরে বিভিন্ন এনজিও এর মাধ্যমে উক্ত কম্বল পেয়েছেন। যেহেতু উক্ত প্রোগ্রামের উপকারভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করেছিলেন সিআইসি (ক্যাম্প ইন-চার্জ)এবংসিএমও (ক্যাম্প মোবিলাইজেশন অফিসার),তাই এক্ষেত্রে “ছওয়াব”এর প্রতিনিধিদের কোন হস্তক্ষেপ ও অংশগ্রহণ থাকেনা, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রন থাকে সিআইসি (ক্যাম্প ইন-চার্জ)এবং সিএমও (ক্যাম্প মোবিলাইজেশন অফিসার)মহোদয়ের। আরো বলা যায় উপকারভোগীদের তালিকা প্রনয়নে“ছওয়াব” এর কর্মকর্তাদের কোনরূপ অংশগ্রহণছিল না ।

৩. “দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদেরকে কম্বল না দিয়ে কেন নেতা গোছের মানুষের মাঝে কম্বল দেয়া হয়েছে”- প্রশ্নের উত্তরে বলা হয় যেহেতু উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করার সময় “ছওয়াব”এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকে না বা তাদেরকে রাখা হয় না, সিআইসি (ক্যাম্প ইন-চার্জ)কর্তৃক পূর্বেই তালিকা প্রস্তুত করেন।শুধু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যে প্রোগ্রামগুলো হয় সেখানে“ছওয়াব”এর প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে উক্ত প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করে। তাই কাদেরকে কম্বল বিতরণ করা হলো সেটা প্রকৃত পক্ষ্যে নির্ধারণ করা “ছওয়াব”এর প্রতিনিধিদের কাজ নয়।

৪. “৭০ জন ঈমাম, ৫৫ জন মাঝিকে কম্বল দিয়েছে “ছওয়াব”, আর সব সময় এরাই পায়”। এরূপ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, সেটা সিআইসি (ক্যাম্প ইন-চার্জ)নির্ধারণ করে দেয়। এখানে “ছওয়াব”-এর প্রতিনিধিদের কোন হস্তক্ষেপ থাকে না। প্রতিবেদনে ৭০ জন ঈমাম এবং ৫৫ জন মাঝিকে দেওয়ার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কিন্তু বাকি যে ৩১৭ জন অসহায় গরিব মানুষ কম্বল পেয়েছে সেটা দেখানো হয়নি। প্রতিবেদনে একটি সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা হয় যে, উপকারভোগীদের তালিকা নির্বাচন ও প্রনয়ণ করেনসিআইসি (ক্যাম্প ইন-চার্জ) ও সিএমও (ক্যাম্প মোবিলাইজেশন অফিসার)- যারা সরকারী কর্মকর্তা। উক্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বুঝা যায় যে,“ছওয়াব” প্রতিটি কাজ সঠিকভাবে পালন করে থাকে।

৫. গত ০৪/০২/২০২২ ইং তারিখে যমুনা টিভির সাংবাদিকগণ“ছওয়াব”অফিসে উপস্থিত হন। এ সময় “ছওয়াব”অফিসের প্রতিনিধিগণ তাদেরকে সাদরে “ছওয়াব” এর মিটিং রুমে বসান। “ছওয়াব”এর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ তাদেরকে প্রয়োজনীয় সব তথ্যাদি দিয়ে আন্তরিকভাবে সহযোগীতা করেন। উল্লেখ্য যে,“ছওয়াব”এর চেয়ারম্যান জরুরী মিটিং থাকায় তিনি অফিসের বাইরে ছিলেন।

৬. প্রতিবেদনে দেখানো হয়, দাতা সংস্থা “এইচ এইচ আর ডি” (হেল্পিং হ্যান্ড ফর রিলিফ এন্ড ডেভেলপমেন্ট)বাংলাদেশেরবিভিন্ন সংস্থাকে বড় অংকের অর্থায়ন করেছে এবং একই সাথে “ছওয়াব”-এর কম্বল বিতরণের প্রোগ্রামে তারাই অর্থায়ন করেছে।সংস্থাটি পৃথিবীর আরো বহু দেশে মানবসেবার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এটি জঙ্গী অর্থায়নের সাথে সম্পৃক্ত কিনা তা আমেরিকা সরকারের নজরে থাকার বিষয়-যা আমাদের জানার কথা নয়। দ্বিতীয়ত, এনজিও বিষয়ক ব্যুরো- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি বিশেষ দ্বায়িত্বশীল ও সচেতন সংস্থা যা এনজিওসমূহকে বিশেষভাবে এবং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষা করে থাকে। সংস্থাটি জেনে বুঝেই এনজিও গুলোকে অর্থ ছাড় করিয়ে থাকে। অপরপক্ষে আমাদের জানা মতে,“এইচ এইচ আর ডি”আরো অনেকগুলো এনজিওকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে অর্থ ছাড় করণের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেবা প্রদানের সুযোগ প্রদান করে আসছে। উল্লেখ্য যে, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা সমূহ মাঠ পর্যায়ে সদা সক্রিয় ও তৎপর রয়েছে। যেহেতু“এইচ এইচ আর ডি” (হেল্পিং হ্যান্ড ফর রিলিফ এন্ড ডেভেলপমেন্ট)-তাদের অন্যান্য এনজিওদের সাথে পরিচালিত কর্মকান্ড সম্পর্কে আমাদেরকে কোনরূপ অবহিত করে না সেহেতু এই ব্যাপারে আমরা অবগত নই।

“ছওয়াব”,সামাজিক দায়বদ্ধতা হতে দেশ ও জাতির কল্যাণে সমাজের অসহায়, দরিদ্র নিপীড়িত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত থেকে ঐ সকল মানুষের জীবনমান উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।

উল্লেখ্য যে, পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ না করে যমুনা টিভি দেশীয় এনজিও “ছওয়াব” (সোস্যাল এজেন্সি ফর ওয়েলফেয়ার এন্ড এডভান্সমেন্ট ইন বাংলাদেশ)সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে-যারা ১৯৯৫ সাল থেকে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো(প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আগারগাঁও, ঢাকা) এর রেজিষ্ট্রেশন (রেজি: নং-৯৫৬/৯৫), জয়েন্ট স্টকের নিবন্ধন সহ দেশি এবং বিদেশী বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সংস্থার পার্টনারশীপ নিয়ে প্রায় ১৩ টি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, অসহায়, গরীব-দুঃখী মানুষকে দেশীয় এবং বিদেশী সংস্থার অর্থায়নে নানাপ্রাকার উন্নয়নমূলক কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানবতার সেবা করে আসছে। তাছাড়া দেশীয় এই এনজিও টি ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আগত মায়ানমার হতে বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে ইতিবাচক ভাবে সাড়া দিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সরকারের সহযোগীতায় ০২ (দুই) হাজার টন চাল বিতরণের ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই সরকারী তত্বাবধানেবিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে আসছে।তাছাড়াআবারও বাংলাদেশেরপ্রধানমন্ত্রী – বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুতমায়ানমার নাগরিকদেরকে ভাসানচরে স্থানান্তরের কাজে এবং তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য এনজিওদেরকে যে আহŸান জানিয়েছিলেন,সেখানেওপ্রথম যে ২২ টি এনজিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে করেছিলো এবং এখনও করছে তাদের মধ্যে“ছওয়াব”অন্যতম।

উল্লেখ্য যে, এনজিও ব্যুরো ১৯ ডিসেম্বর ২০২১তারিখে মাঠ পর্যায়সহ সকল কার্যক্রমের খোঁজখবর নিয়ে “ছওয়াব” এর কার্যক্রমে কোনরূপ সমস্যা নেই মর্মে অনাপত্তি পত্র প্রদান করেন যার স্বারক নং (০৩.০৭.২৬৬৬.৬৬০.৬৬.১৮০.২১-৫১৬)
“ছওয়াব”-এর উক্ত বাস্তবায়নকৃত প্রকল্পের সর্ম্পূণ সঠিক ও নির্ভুল তথ্য প্রচার না করেই যমুনা টিভির এমন প্রতিবেদন, প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে সন্দেহ ও বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। যার ফলে “ছওয়াব”এর ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে।যা“ছওয়াব”-কে ভবিষ্যতে আর্তমানবতার সেবামূলক কার্যক্রমকবাস্তবায়নে নিরুৎসাহিত ও বাধাগ্রস্থ করবে। সুতরাং যমুনা টিভিতে প্রচারিত উক্ত প্রতিবেদন দেখে “ছওয়াব”(সোস্যাল এজেন্সি ফর ওয়েলফেয়ার এন্ড এডভান্সমেন্ট ইন বাংলাদেশ)সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ ও বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীসহ সকল দাতা সংস্থাসমূহকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

ধন্যবাদান্তে,

সিরাজুল ইসলাম দিপু
গণসংযোগ কর্মকর্তা
“ছওয়াব”(সোস্যাল এজেন্সি ফর ওয়েলফেয়ার এন্ড এডভান্সমেন্ট ইন বাংলাদেশ)

Leave a Reply