মোহাম্মদ আলী: প্রকৃত ইসলামের রূপ
মোহাম্মদ আলী: প্রকৃত ইসলামের রূপ
বক্সিং কিংবদন্তী মোহাম্মদ আলীর নিজ শহর লুইসভিলের শৈশবের বাড়িটিকে এখন তার স্মরণে রূপান্তরিত করা হয়েছে জাদুঘরে। তার মহাপ্রয়াণের পর সেখানেই জড়ো হয়েছিলেন শত শত মানুষ। সেখানে তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সদ্যপ্রয়াত এই কিংবদন্তীকে। তার স্মরণে রেখেছেন আরও নানা ধরনের স্মারক। তারা স্মরণ করেছেন মোহাম্মদ আলীর খেলোয়াড়ি জীবন ও খেলার বাইরের সক্রিয়তাকে। তারা কথাও বলেছেন মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে; তার ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে। তারা বলেছেন, মোহাম্মদ আলীর উদাহরণ ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত গঁৎবাধা ধারণা পরিবর্তন করতে সহায়ক হবে। তারা বলেছেন, যে সময়টিতে মার্কিন মুসলিমরা বিদ্বেষ ও ধর্মান্ধতার মুখোমুখি ঠিক সেই সময়েও বক্সিংয়ের কিংবদন্তী মোহাম্মদ আলীকে স্মরণ করতে হবে ইসলামের সত্যিকারের ও শান্তিময় রূপ হিসেবে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। তাতে উঠে এসেছে মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে নানা ধরনের মানুষের মন্তব্য। আলীর শৈশবের শহর লুইসভিলের একজন চিকিৎসক হামজা শাহ বলেন, ‘এখনকার দিনে বেশিরভাগ সময়ই গণমাধ্যমে মুসলিমদের একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি দেখতে পাবেন। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই একজনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রয়েছে। তিনি মোহাম্মদ আলী। তিনি দেখিয়েছেন প্রকৃত ইসলাম কী ছিল।’
গত বছরের ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটিতে মুসলিমদের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব করে বিতর্কের ঝড় তুলেছিলেন। মোহাম্মদ আলী এর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যারা নিজেদের ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য ইসলামকে ব্যবহার করেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের মুসলিমদের সোচ্চার হতে হবে। আমি মনে করি আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের উচিত নিজেদের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানাবুঝাকে ছড়িয়ে দেয়া। এবং তাদের এটাও পরিষ্কার করে দেয়া উচিত যে ছদ্মবেশী খুনিরা ইসলামের প্রকৃত রূপকে আড়াল করে বিকৃত রূপকে দেখায়।’
মোহাম্মদ আলী প্রসঙ্গে শিকাগোভিত্তিক ইমাম সৈয়দ হোসেন শাহিদ বলেন, ‘তিনি সত্যিকারের একজন মানুষ হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন যে মুসলিমরা কেবল সত্যবাদীই নয়, তারা দয়ালু ও ক্ষমাশীলও বটে।’ তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব থেকে মালয়েশিয়া এবং গোটা আফ্রিকাজুড়েও গোটা মুসলিম বিশ্বেরই শ্রদ্ধা অর্জন করে নিয়েছিলেন মোহাম্মদ আলী। লুইসভিলের ইসলামিক সেন্টারে তার স্মরণে বিভিন্ন ধর্মের মানুষদের নিয়ে যে প্রার্থনার আয়োজন করা হয় তাতে ওই সঞ্চিষ্ণুতা ও দয়ার বার্তাই উদযাপন করা হয়। লুইসভিলের খৃস্টান একটি চার্চের প্রধান ডেরেক পেনওয়েল বলেন, ‘এখন এমন একটি সময় যখন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান পদের জন্য আগ্রহী প্রার্থীরা আমাদের তাদের সম্পর্কে শঙ্কিত হতে উৎসাহ দেন যারা আমাদের থেকে ভিন্ন। এই সময়ে আমাদের ঠিক মোহাম্মদ আলীরই কণ্ঠস্বর দরকার, দরকার তার উপস্থিতি।’ ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার পর মোহাম্মদ আলীও তৎক্ষণাৎ সব মুসলিমকেই ‘চরমপন্থি’ আখ্যা দেয়ার বিরুদ্ধে আমেরিকানদের সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্ম সন্ত্রাসবাদ বা মানুষ হত্যাকে সমর্থন করে না। আমি এ কারণে ক্ষুব্ধ যে বিশ্বকে দেখতে হয়েছে, ইসলাম ধর্মেরই অনুসারী একটি দল এমন ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে। কিন্তু তারা প্রকৃত মুসলিম নয়। তারা বর্ণবাদী ধর্মান্ধ যারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে, হাজার হাজার মানুষের হত্যাকে অনুমোদন করে।’
ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্স শনিবার বলেন, আলী কেবল একজন শীর্ষ অ্যাথলেটই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন জনঅধিকারকর্মী এবং ইসলাম ধর্মের প্রকৃত বিশ্বাসীদের একজন। তিনি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই সব সমর্থক যারা মুসলিমদের ঘৃণা করলেও এখন মনে করছেন এটাই মোহাম্মদ আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উপযুক্ত সময়, তারা সকলেই জানেন যে মোহাম্মদ আলী ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম যিনি নিজের ধর্মকে অত্যন্ত কঠোরভাবে গ্রহণ করেছিলেন।’
মোহাম্মদ আলীর অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার, লুইসভিলে। সেখানেও বিভিন্ন ধর্মের মানুষের উপস্থিতি থাকবে। সেই প্রার্থনা পরিচালনা করবেন মোহাম্মদ আলীর একজন বন্ধু ও মুসলিমদের জায়তুনা কলেজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জায়েদ শাকির। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ছাড়াও আরও শীর্ষস্থানীয় অনেকেই উপস্থিত থাকবেন ওই শোক অনুষ্ঠানে।