মোবারকের একদিন : সাইফুল ইসলাম

06/04/2017 2:13 pmViews: 183

মোবারকের একদিন : সাইফুল ইসলাম

মতিঝিল আর কমলাপুরের মাঝামাঝি মেঠো পথটির নাম পল্লীকবি জসীমউদ্দিন রোড। কবি এ রোডে বসবাস করেন বলেই হয়তো তাঁর নামে এ রাস্তার নামকরণ। এখানকার অনেক প্লটেই এখনো বাড়িঘর ওঠেনি, তাই দৃষ্টি আটকে যায় না কংক্রিটের দেয়ালে, বরং গ্রামের মতো চোখ চলে যায় অনেক দূর পর্যন্ত। মেঠোপথ আর জনবসতি কম হওয়ায় কেউ বাসা ভাড়া নিতে চান না এখানে, তাই ভাড়াও কম। অজ পাড়াগাঁয়ের মতো এমন এক এলাকায় রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের সহকারি আঞ্চলিক পরিচালক মোবারক হোসেন খান একতলা বাসা ভাড়া নিয়েছেন গত র্ফের–য়ারিতে। বাসার দোতালার দেয়াল তোলা হলেও ছাদ ঢালাই হয়নি। মোবারক অবশ্য এমন এলাকায় বাসা নিয়েছেন অন্য কারণে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, বাসা থেকে হেঁটে কমলাপুর গিয়ে ট্রেনে উঠে বাড়ি যাওয়া যায়; আবার একটু হেঁটে মতিঝিল গিয়ে ৬ নম্বর বাসে শাহবাগ গেলেই অফিস। তবে বর্ষাকালে কাদা প্যাঁচপ্যাঁচে রাস্তায় মতিঝিল পর্যন্ত যেতে একটু কষ্ট হয় বৈকি। মোবারক এখানে বাসা নিয়েছেন আরো একটি কারণে, তা হলো তার বড় ভাই ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান, চাচাতো ভাই ওস্তাদ মীর কাশেম খান, রাজা হোসেন খান, আর আমিনুর রহমান খান থাকেন কাছেই মতিঝিলের সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে। ছুটির দিনে সবার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, পাওয়া যায় গ্রামের এ পাড়া ও পাড়া ভাবও। শহরে এসে এমন গ্রাম্য পরিবেশে বাস করাও মোবারকের কাছে কম পাওয়া নয়। গরমের রাতে হাফসার্ট গায়ে দিয়ে লুঙি পড়ে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে হাওয়া খাওয়া, শীতের সকালে হাঁটার সময় শিশিরে পা ধোয়ার মজা বেশ উপভোগ করেন তিনি। তাইতো ছোটভাই শেখ সাদী খানকে নিয়ে এখানে ঢেঁড়া বেঁধেছেন মোবারক।

সেদিন সন্ধ্যার পর পরই বাসায় ফেরেন মোবারক। মোবারকের স্ত্রী ফৌজিয়া খান শোবার ঘরে পাঁচ বছরের মেয়ে মিমিকে পড়তে বসিয়ে খাটের ওপরে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছেন দেড় বছরের ছেলে রূপকে। এতো তাড়াতাড়ি স্বামীকে বাড়ি ফিরতে দেখে অবাক হয় ফৌজিয়া। মোবারক চুপচাপ কাপড় পাল্টায়, তারপর বাইরের ঘরে গিয়ে ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাইরের ঘরে আসে মিমির মা। জিজ্ঞেস করে, আজ এতো তাড়াতাড়ি ফিরলে যে।
– গুজব শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। ভীষন ক্লান্ত লাগছিল, তাই চলে এলাম। রূপ ঘুমিয়েছে?
– হ্যাঁ।
– শহরটা কেমন থমথমে হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই মিছিল হচ্ছে, ছেলেরা রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছে। সাদী ফেরেনি এখনো?
– এসেছিল, আবার পাশেই কোন বাসায় গেল। তুমি খেয়ে নাও, সাদী এসে খাবে।
এ সময়েই বাসায় ঢোকে সাদী। মোবারককে জিজ্ঞেস করে- ভাইজান, আজই নাকি পাকিস্তানিরা নাকি হামলা চালাবে, জানো নাকি কিছু?
– এমন গুজবতো শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে।
– পাড়ার ছেলেরা সবাই রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছে।
– আজ আর কোথাও বের হোসনে।
– পাশের বাসার আজম খানের সাথে একটা কাজ ছিল, সেরে এসেছি।
– চল খেয়ে নেই। শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে।
ততক্ষণে ফৌজিয়া টেবিলে খাবার সাজায়। খেয়েদেয়ে যার যার ঘরে যায় ওরা।

পুরনো আমলের উঁচু বিশাল খাট মোবারকের। তার ওপরে ছেলেমেয়েকে মাঝখানে নিয়ে দুই পাশে ঘুমিয়ে পড়ে স্বামী-স্ত্রী। হঠাৎ কামানের গোলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় মোবারকের। প্রথমে কিছুই ঠাওড় করতে পারে না সে। হঠাৎ মনে পড়ে সারাদিনের গুজবের কথা। তাহলে কী ক্যান্টনমেন্ট থেকে বেড়িয়ে আসছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী! দূর থেকে ভেসে আসছে গাড়ির ঘরঘর শব্দ। কামান, মর্টার, মেসিনগান, রাইফেলের গুলি হচ্ছে একটানা। সেই সাথে ভয়ার্ত মানুষের চিৎকার, বাঁচাও বাঁচাও। খাটের ওপরে বসে পড়ে মোবারক আর ফৌজিয়া। ভয়ে মোবারক মেয়েকে আর ফৌজিয়া ছেলেকে কোলে তুলে নেয়। দ্রুত খাট থেকে নেমে পড়ে মোবারক। ফিস ফিস করে ফৌজিয়াকে বলে, খাট থেকে তাড়াতাড়ি নামো, বাইরে গোলাগুলি হচ্ছে। ছেলেকে নিয়ে খাট থেকে নামে ফৌজিয়া। বোঝার চেষ্টা করে বাইরে কী ঘটছে। মেঝেতে বসেই খাট থেকে টেনে টেনে বিছানার চাদর, বালিশ, কাঁথা নামায় ফৌজিয়া। হামাগুড়ি দিয়ে খাটের নিচে বিছানা পেতে ছেলেমেয়েকে শুইয়ে দেয়। ততক্ষণেও গোলাগুলির বিরাম নেই। হামাগুড়ি দিয়েই দরজার কাছে যায় মোবারক। সাবধানে দরজা খুলে বাইরে যায়। দেখে সাদী অন্ধকারে বারান্দায় বসে বসে গোলাগুলির আলোর ঝলকানি দেখছে। মোবারককে দেখে সাদী বলে, ইউনিভার্সিটি আর রাজারবাগ পুলিশ লাইনে গোলাগুলি হচ্ছে। ততক্ষণে ফৌজিয়া হামাগুড়ি দিয়ে বারান্দায় চলে এসেছে। সে বলে, ঘরে চলো দু’জনেই, হঠাৎ কী হয় বলা যায় না।
– তোমরা যাও, আমি অন্ধকারে একটু বসবো। সাদী বলে।
– একটু আড়ালে বয়। আমরা ভিতরে জেগে আছি। ওরা দুই জন ভিতরে যায়।

বাইরে মানুষের দৌড়াদৌড়ির শব্দ পায় সাদী। এতে ভড়কে গিয়ে অন্ধকারে দেয়ালের পাশে সরে যায় সে। নারী পুরুষ ও শিশুর কয়েকটি ছোট ছোট দল দৌড়ে ওদের বাড়ির গেট পার হয়ে এগিয়ে যায়, একটি দল ঢুকে পড়ে ওদের বাড়ির বাউন্ডারির মধ্যে। বারান্দায় বসে হাঁপাতে থাকে মানুষগুলো। দলের চল্লিশ বছর বয়সী এক নারী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সাদী বুঝতে পারে, রেলের বস্তি বা স্টেশনে থাকা লোকজন নিরাপদ ভেবে ছুটে আসছে এদিকে। অন্ধকার থেকে উঠে আসে সাদী, তাকে দেখে প্রথমে ভয় পায় মানুষগুলো। তাদের মতোই একজন মানুষকে দেখে আস্বস্ত হয়ে ঘিরে ধরে সাদীকে। সাদী জিজ্ঞেস করে- কী হয়েছে ওদিকে?
– ইস্টিশিনে মিলিটারি আইছে, বেশুমার গুলি চালাইতেছে। একজন বয়সী লোক বলে।
– আমিতো চিল্লায়া দৌড় দিছি, আমার পিছে আসতিছিলো এক চ্যাংড়া। গুলি খায়া পইড়া গেলো। তারপর তরপাতি তরপাতি মইরা গেলো গা। এ কথা বলে মধ্য বয়সী একজন। তা শুনে কান্না আরো বেড়ে যায় নারীর। তার কান্না শুনে সাদী জিজ্ঞেস করে- খালার কী হয়েছে?
সুর করে কাঁদতে কাঁদতে নারী বলে- আমার পোলাডো হেই বইহাল বেলা কইলো যে, আইসতেছি। কনে যে গেলো। এহুনতো গণ্ডগোল শুরু অয়া গেল গা। বাপ মরা গ্যাদাডোক আমি কনে খুঁজমু গো।
– পোলার বয়স কতো?
– গত শাউন মাসে তেরোত পড়ছে বাজান।
– কাইন্দো না, নিজে বাঁইচা থাকো, দেখবা গ্যাদাই তোমাক খুঁইজা বাইর করবো। তোমরা এক কাজ করো, ছাদের উপর উঠে সবাই পালিয়ে থাকো। একটু ফর্সা হলে চলে যেও। না হলে কী বিপদ হয় বলাতো যায় না।
স্টেশন থেকে আসা লোকগুলোকে ছাদে জায়গা করে দিয়ে নিচে নেমে আসে সাদী।

মোবারকরা ছেলে আর মেয়েকে মাঝখানে রেখে মাথার কাছে ট্রানজিস্টরটি রেখে শুয়ে পড়ে। বাইরের গোলাগুলির শব্দে দু’চোখের পাতা এক করতে পারে না মোবারক। বিপদগ্রস্থ মানুষ পালিয়ে আসছে নিভৃত পল্লীকবি জসীমউদ্দিন রোডে। কখনো কখনো শুনতে পায় পালিয়ে আসা মানুষের পায়ের দুপদাপ শব্দ। উত্তেজনায় শুয়ে শুয়ে ট্রানজিষ্টরের নব ঘোরাতে থাকে সে। হঠাৎ করেই ঢাকা কেন্দ্রে এসে স্টেশন খোলার শব্দ পায় কুউউ…। উত্তেজনায় উঠে বসে মোবারক, সাথে সাথেই উঠে পড়ে ফৌজিয়াও। তারা বুঝতে পারে যে, কেউ খোলার চেষ্টা করছে রেডিও স্টেশন। কিন্তু কারা এ চেষ্টা করছে? হয়তো পাকিস্তানি মিলিটারিরাই এ চেষ্টা করছে, কারণ এ পরিস্থিতিতে বাঙালি কারো পক্ষেই রেডিও স্টেশনে যাওয়ার সুযোগ নেই ।
ভোর হয়। বাইরে ততক্ষণে গোলাগুলির শব্দ কিছুটা কমে এসেছে। হয়তো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে আক্রমনকারী আর আক্রান্ত উভয় পক্ষই। হঠাৎ করেই অস্থির ভাবে দরজা ধাক্কাতে থাকে কারা যেন। ওরা দু’জনেই ভয় পেয়ে যায়, জড়িয়ে ধরে ছেলেমেয়েদের। মিলিটারিরা এখানেও চলে এলো না তো? বাইরে আবারো ধাক্কাধাক্কি, সাথে ডাকাডাকি- মোবারক, আমি আবেদ। দরজা খোল, বাইরে ভীষন বিপদ।
ধড়মর করে উঠে বসে মোবারক। দ্রুত দরজা খুলে দেয় সে। রাজাও হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে আসে। হুড়মুড় করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে আবেদ তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, রাজারবাগে ভীষন গোলাগুলি হচ্ছিল, খুব ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবলাম, মরলে তিন ভাই এক সাথেই মরি। তাছাড়া, ওদিকের চেয়ে তোর এখানেই নিরাপদ মনে হলো।
– ভালো করেছ। এখানে সবাই মিলেমিশে থাকবো, যা হয় হবে।
ফৌজিয়া আবেদদের জন্য ঘর খুলে দেয়। এ সময় হঠাৎ করেই অন করা রেডিও থেকে উর্দুতে ঘোষনা আসতে থাকে- এক জরুরী এলান…। ঘোষনায় রেডিও পাকিস্তান ঢাকায় কর্মরত সকল কর্মচারীকে কাজে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হতে থাকে। বলা হতে থাকে, কাজে যোগ না দিলে কোন কোন ধারায় কী কী দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। ঘোষনা শোনা যায়, সকাল আটটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত কার্ফু শিথিল করা হয়েছে। বাইরে থেমে থেমে তখনো গোলাগুলি চলছেই।
তিন ভাই বসে ড্রয়িংরুমে। আবেদ বলে, রেডিওতো খুলে ফেললো মনে হচ্ছে।
– তাতো খুলবেই। রেডিও গুরুত্বপূর্ণ প্রচার মাধ্যম না, এ দিয়েইতো বাঙালিকে বোঝানোর চেষ্টা করবে, এদেশ তারাই শাসন করছে এখনো।
এ সব আলোচনা চলতে চলতে আবেদের মতোই একে একে পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে আসে মীর কাশেম, রাজা, আমিনুরও। ছেলেমেয়ে সহ সবাইকে ভিতরে ব্যবস্থা করে দিয়ে ভাইয়েরা এসে বসে ড্রয়িংরুমে। সোফার মাঝখানে ট্রানজিস্টর রেখে দো-আশলা বাংলায় ঘোষনা শুনতে থাকে, একটি জরুরী ঘোষনা…।
এ এলাকায় গাড়ির ঘরঘর শব্দ নেই, গোলাগুলির শব্দও এখন কমে এসেছে অনেকটা। তারপরেও উত্তেজনার পাশাপাশি নিজেদের মধ্যে আলোচনা চলতে থাকে, মুজিব স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন কিনা? যুদ্ধ লেগে গেলে কী হবে, সাধারণ মানুষ কী করবে?  এ সব। আলোচনায় সবাই একমত হয় যে, এবার আর পাকিস্তানিদের ছাড়বে না বাঙালিরা।
হঠাৎ রেডিও থেকে স্পষ্ট বাংলায় ঘোষনা আসে, একটি জরুরী ঘোষনা, একটি জরুরী ঘোষনা…। চমকে ওঠে ওরা। মোবারক সোফা থেকে নেমে ট্রানজিষ্টরে কান লাগায়। একটি শিরশিরানি অনুভব করে শিরদাড়ায়। ঘোষনা করছেন ঢাকা রেডিওর সহকারি আঞ্চলিক পরিচালক নুরন্নবী খান। কিন্তু উনি রেডিও স্টেশনে গেলেন কিভাবে তা মাথায় ঢোকে না মোবারকের। উনার বাসাতো দিলু রোডের এক দম ভিতরে! সে বাড়ি মিলিটারিদের চেনার কথা নয়। নাকি কেউ তার বাড়ি দেখিয়ে দিয়েছে! কিন্তু তা কী করে সম্ভব? অসহযোগ আন্দোলনের সময় কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ঠিকানার রেজিষ্টার সরিয়ে ফেলা হয়েছে, যাতে কারো বাসার ঠিকানা পাকিস্তানিদের হাতে না পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শোনা যায় আরেক বাঙালি মবজেল হোসেনের কণ্ঠস্বর। ওর বাসা এলিফ্যান্ট রোডের অনেক ভিতরে। দু’জনে বকে চলেছে সবাইকে রেডিতে যোগ দেয়ার জন্য। মোবারকের মনে হলো, ওরা যে বেঁচে আছে তা পরিবারকে জানান দিতেই বার বার পাল্টাপাল্টি করে ঘোষনা দিচ্ছে। সে তাকায় বড় ভাই আবেদের দিকে, আবেদ তাকিয়ে আছে ছোট ভাইয়ের দিকে। চোখে চোখ পড়তেই আবেদ জিজ্ঞেস করে- ওরা রেডিও স্টেশনে গেল কিভাবে?
– মনে হয় ধরে নিয়ে গেছে।
– তা হলে তো তোকেও ধরে নিয়ে যাবে।
এ সব ভাবতে পারে না মোবারক। সে উঠে চলে যায় বউ-বাচ্চাদের কাছে।

বেলা বাড়তে থাকে। ঘোষনা না দিয়ে জারি করা কার্ফু ঘোষনা দিয়ে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু মানুষের ভীতি কাটে না। তারপরেও মানুষকে পথে বের হতে হয়। কেউ বের হয় নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে, কেউ বের হয় নিকটাত্মীয়দের খোঁজে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় আসে রেডিও স্টেশনের পিয়ন শরীফ আর জামাল। ওরা থাকে মতিঝিল কলোনিতে। রেডিওর ঘোষনা ওরাও শুনেছে। তাই, মোবারকের কাছে কী করবে তাই জানতে এসেছে? মোবারক ওদের ড্রইংরুমে বসায়। ভাইয়েরাও বসে আছে সেখানে। মোবারক বলে, এ পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত দেয়া মুশকিল। কারণ এটা জীবন-মরণ সমস্যা।
– স্যার, ওরাতো ধরেও নিয়ে যেতে পারে, আর ধরে নিয়ে গেলেতো আর বাঁচিয়ে রাখবে না। আমরা বলি কী হাজিরা বান্ধার গুনা মাফ, আপনি বললে আমরা সাহস পাই। বলে দু‘জনেই।
– দেখো, আমরা যদি না যাই ওরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। আর আমাকে খুঁজতে এসে পরিবারের অন্যদেরও ক্ষতি করবে। মোবারকের এ কথা শুনে অন্য ভাইয়েরা উসখুশ করতে থাকে। তারা ভাবে, হয়তো তাদের কথাই বলছে মোবারক।
– চলেন যাই স্যার, আপনি সাথে থাকলে সাহস পাই।
– ঠিক আছে তোমরা একটু বসো, আমি বাড়ির ভিতর থেকে আসি।
ভিতরে চলে যায় মোবারক। ছেলেমেয়ে দু’টোকে কোলে নিয়ে চুমু খায়। ফৌজিয়ার মাথায় হাত দেয়, কিন্তু কিছু বলতে পারে না। বউও হুট করে কদমবুচি করে। মোবারক আর দাঁড়াতে পারে না, ভাইদের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে যায়, মনে হয় এটাই তার শেষ বিদায়।
রাস্তায় নামে ওরা তিন জন।

২.

রাস্তা ফাঁকা। কোন রিক্সা বা গাড়িঘোড়া নেই। রাস্তায় মিলিটারি গাড়ি টহল দিচ্ছে। দ্রুত পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছে দু’এক জন অতি সাহসী বা বিপদে পড়া মানুষ। ফকিরাপুলের রাস্তায় পড়ে আছে একটা লাশ। কয়েকটি কাক কা কা করছে লাশকে ঘিরে। ওদিকে তাকাতে সাহস পায় না ওরা। শান্তিনগর কাকরাইল হয়ে হোটেল ইন্টারকন বাঁয়ে রেখে মোবারক, শরীফ আর জামাল চলে আসে ঢাকা রেডিও স্টেশনে। গেটে অ্যাটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তানি জওয়ানরা। ওদের চোখে মুখেও আতঙ্ক। ঠোট নড়া দেখে মনে হয় ‘ইয়ানবসি’ জবছে ওরাও।
‘ইয়ানবসি’ জবতে জবতে ভিতরে ঢোকে মোবারকরা। গাড়ি বারান্দায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছে ওদের আগে আসা কয়েকজন। দেহ তল্লাশি চলছে তাদের। ডিউটির তদারক করছে ক্যাপ্টেন খোদবক্স। খোদাবক্স মার্চের প্রথমেই এখানে এসেছে। এতো দিন মেচি বিড়ালের মতো চুপচাপ ছিল, গতকালও তাই দেখেছে সবাই। কিন্তু এক রাতের মধ্যেই হয়ে উঠেছে দণ্ডমূন্ডের কর্তা, আর তার সামনে দিয়ে পার হতে ভয় করছে সবার।
তল্লাশী শেষে গাড়ি বারান্দা পার হয়ে কড়িডোরে ঢুকে পড়ে মোবারক। সেখানে পায়চারী করছেন রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক আশরাফ-উজ-জামান খান। বেচারার অবসর নেয়ার আর মাত্র এক মাস বাকী। বেশ দুঃশ্চিন্তায় আছেন তিনি। মোবারককে দেখে কিছুটা স্বস্থি পান, প্রায় দৌঁড়ে এসে তার কাঁধে হাত রাখেন আশরাফ। আস্তে আস্তে অথচ স্পষ্ট করে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য সচিব খোদদাদ খান ডিউটি অফিসারের চেয়ারে বসে আছেন। আমাকে বার বার জিজ্ঞেস করছেন, কর্মচারীরা আসছে না কেন? যান তাকে সালাম দিয়ে দ্রুত স্টুডিওতে ঢুকে পড়–ন। মোবারক সচিবকে সালাম জানিয়ে দ্রুত চলে যান স্টুডিওতে।
স্টুডিওতে নির্দিষ্ট দূরত্বে চেয়ার পেতে বসে আছে নূরন্নবী আর মবজেল। রেকর্ড করা কোরান তেলাওয়াত অন-এয়ার হচ্ছে। ভয় আর ক্লান্তিতে দু’জনেরই বিধ্বস্ত অবস্থা। মনে হয়, মারা যায়নি বলে বেঁচে আছে এখনও। ধীরে ধীরে ওদের কাছে যায় মোবারক। তাকে দেখে স্বস্থি পায় দু’জন। মোবারক জিজ্ঞেস করে, অতো ভোরে কী ভাবে এলে তোমরা?
কাঁদো কাঁদো স্বরে নূরন্নবী বলে, ওই যে, নাইটগার্ড রহমান, ওইতো মিলিটারিদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেছে। বাসায় কান্নকাটি, ভীষন দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে।
– রহমান কোথায়?
– আছে অফিসেই কোথাও।
ওদের শান্তনা দিয়ে স্টুডিও থেকে বের হয় মোবারক। রুমে ঢুকে দেখে টুলে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে রহমান। মোবারককে দেখে ফোঁপানি আরো বেড়ে যায়। বলে, স্যার, আমিই না কি মিলিটারিকে স্যারদের বাড়ি চিনিয়ে দিয়েছি। দ্যাখেন স্যার, অতো রাতে মিলিটারিরা এসে বল্ল, রেডিও চালু কর। আমি কি তাই পারি! আমি বললাম, আমি কী ভাবে করবো, স্যারেরা তো কেউ নেই। এ কথা শুনেই একটা থাপ্পড় মারলো। দ্যাখেন স্যার, একটা দাঁতই পড়ে গেছে। তারপর টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুললো, বললো, চল তোর স্যারদের বাড়ি দেখিয়ে দে। ওদের ঠেকানোর ক্ষমতা কি আমার আছে স্যার? ওরা যে আমাকে মেরে ফেলেনি তাই এখনো বেঁচে আছি।
– দাঁতে ব্যাথা করছে? ঔষধ খেয়েছ?
– না স্যার, কে ঔষধ দেবে।
– এসো ঔষধ দিচ্ছি। কেঁদো না, সবারই তো একই অবস্থা।
– স্যার, আমিতো ইচ্ছে করে মিলিটারি নিয়ে যাই নি।
– জানি, কিন্তু কেঁদো না তো।
মোবারক ড্রয়ার খুলে দু’টো প্যারাসিটামল বের করে দেয় রহমানকে।

কাজগুলো একটু গুছিয়ে নিয়ে নিজের চেয়ারে এসে বসে মোবারক, কিন্তু স্বস্থি খুঁজে পায় না। বাড়িতে বউ-ছেলেমেয়ে ভাইদের রেখে এসেছে, না জানি তারা কী দুঃশ্চিন্তা করছে। নিরাপত্ত্বাহীনতা তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে। পান থেকে চূন খসার দরকার নেই, ইচ্ছে হলেই গুলি চালিয়ে দিতে পারে ওরা। মোবারকের ওপর ভরসা করে অফিসে এসেছে অনেকেই, অথচ সেই ভয়ে কুঁকড়ে আছে, সে কী ভাবে বাঁচাবে অন্যদের! হঠাৎ পায়ের শব্দ পায়, কেউ একজন এগিয়ে আসছে ওর টেবিলের দিকে। মাথা তুলে তাকানোর সাহস পায় না মোবারক। পায়ের শব্দটি ওর সামনে এসে থামে। মোবারক বুঝতে পারে, কিন্তু ভয়ে গভীর মনোযোগি ভান করে ফাইল দেখতে থাকে।
– কেয়া বাত হ্যায়, কই তকলিফ? মোবারকের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে ক্যাপ্টেন খোদবক্স। স্পিংয়ের মতো দাঁড়িয়ে যায় মোবারক। সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে ক্যাপ্টেন। মোবারকের দাঁড়ানো দেখে বলে- আরে ভাই, তুম সিনিয়র হো, হাম জুনিয়র, হামকো দেখকার কিউ খাড়া হো গিয়া। বঠকার আরামছে কাম করো। কই প্রবলেম হো তো হামকো বলনা।
– ঠিক আছে।
– ডরনা মাত। হাম তোমহারা সাথ হ্যায়। বলে চলে যায় ক্যাপ্টেন খোদবক্স।
ধপাস করে বসে পড়ে মোবারক। মনে হয়, অসহযোগ আন্দোলনের সময় তাকে যে অবহেলা করা হয়েছে, তারই প্রতিশোধ নিচ্ছে ক্যাপ্টেন খোদাবক্স।

ভীতি, উত্তেজনা আর ক্লান্তিতে দূর্বল লাগে মোবারকের। নিজের চেয়ারে বসেই ঝিঁমোতে থাকে এক সময়। পিয়ন রহমান দৌড়ে এসে ঢুকে পড়ে তার রুমে। ঝিমুনি কেটে যায় মোবারকের। জিজ্ঞেস করে- কী হয়েছে কী? এতো দৌড়াচ্ছ কেন?
– স্যার, পরিচালক স্যার আপনারে ডাকতাছে।
– কেন? কী হয়েছে?
– জানি না স্যার। এক মিলিটারি আইসা ঘরে ঢুকলো, তারপরেই আপনারে ডাক দিল স্যার।
আবার বুকের মধ্যে দুরুদুরু শুরু হয় মোবারকের। লম্বা লম্বা পা ফেলে ঢুকে পড়ে আশরাফ স্যারের রুমে। স্যারের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক কর্নেল। তিনি কিছু একটা বলছেন আশরাফ সাহেবকে। ঢুকেই বুঝতে পারেন গুরুতর কোনও ভুল হয়ে গেছে। যার জন্য ভয় পেয়ে গেছেন আশরাফ সাহেবও। তিনি কাঁপা গলায় বলেন, মোবারক, পতাকা ওড়ানো হয় নি কেন?
– পতাকা!
– হ্যাঁ পতাকা, জাতীয় পতাকা ওড়ানো হয়নি এখনো।
কর্নেল হাতের বেত ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ধমক দিয়ে বলে, কওমী নিশান কোন উড়ায়ে গা, হাম?
– দেখছি স্যার, এখনই উড়াচ্ছি। বলেই কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে আসে মোবারক। ছুটে যায় নিজের টেবিলের কাছে। দ্রুত ড্রয়ার খুলতেই হাত-পা আরো ঠাণ্ডা হয়ে যায় মোবারকের। সেখানে মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা জ্বলজ্বল করছে। গত ২ মার্চের পর থেকে এ পতাকাই পত পত করে উড়েছে ঢাকা রেডিও স্টেশনে। গতকাল পতাকা নামিয়ে যতœ করে ড্রয়ারের মধ্যে রেখে গেছে মোবারক নিজেই। এখন কেউ যদি দেখে ফেলে এ পতাকা? দ্রুত ড্রয়ার বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেয়। কোথায় রেখেছে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা তা মনে করতে পারেনা সে। উ™£ান্তের মতো বিভিন্ন আলমারীতে খুঁজতে থাকে পাকিস্তানের পতাকা। কিন্তু কোথায় পাবে সে পতাকা? যেদিন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয় সেদিন কি আর পাকিস্তানের পতাকা যতœ করে কেউ রেখে দিয়েছে? হাত-পা অবশ হয়ে যেতে থাকে মোবারকের। ঘরের মধ্যে যারা ছিল তারা বুঝতে পারে না উ™£ান্তের মতো কী খুঁজছে মোবারক।
এ সময়ে ক্যাপ্টেন খোদবক্স এসে হাজির হয় রুমে, দাঁড়ায় মোবারকের পিছনে। জিজ্ঞেস করে- কেয়া খুঁজতা হ্যায় মোবারক সাব?
ভয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে যায় মোবারক। কিছু বলার চেষ্টা করে সে, কিন্তু ঠোট নড়লেও কথা বের হয় না মুখ দিয়ে। খোদবক্স আবারো জিজ্ঞেস করে- ক্যায়া হ্যায়?
কোন রকমে বিড়বিড় করে বলে- পতাকা।
– কৌন পতাকা? তুমহারা ইয়া হামারা?
– পাকিস্তানের পতাকা।
– উয়ো তো তুমনে ফেক দিয়া ড্রেন মে, আলমিরা মে কাঁহাসে আয়েগি।
কোন কথা বের হয় না মোবারকের মুখ দিয়ে। ভয়ে কাঁপতে থাকে সে।
– ইয়ে লো হামারা কওম কি নিশান। উড়া দো। ইয়াদ রাখ না, ইয়ে নিশান হররোজ উড়েগি ইধার, তোমহারে পতাকা নেহি। পাকিস্তানের পতাকাটি মোবারকের হাতে দিয়ে গটগট করে চলে যায় খোদাবক্স। মোবারক বুঝতে পারে না যে এ যাত্রা সে বেঁচে গেল না মৃত্যুর নোটিশ পেলো। রহমানকে ডেকে পতাকাটি স্ট্যান্ডে ওড়াতে বলে মোবারক।
রহমান ফ্লাগ ষ্ট্যান্ডে উড়িয়ে এসে জানায় যে, পতাকা ওড়ানো হয়েছে। সেই সাথে আরো জানায় যে, দুপুর দুইটার খবর শেষ হওয়ার পর স্টেশনে উপস্থিত সবাইকে পরিচালকের রুমে যেতে বলেছেন।
– কেন? জিজ্ঞেস করে মোবারক।
– তা জানি না স্যার, আমাকে বল্ল সবাইকে খবর দিতে।
– ঠিক আছে, তুমি সবাইকে খবর দাও।
আবার এক ধরণের দুঃশ্চিন্তা শুরু হয় মোবারকের। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায়, দুইটা বাজার আরো তিন মিনিট দেরি আছে, পরে পাঁচ মিনিট করে বাংলা আর ইংরেজি খবর। তারপরে সবাইকে যেতে হবে পরিচালকের কক্ষে। মোবারক দুঃশ্চিন্তা কমাতে নিজের কক্ষ থেকে স্টুডিওর দিকে হাঁটা দেয়।

দুইটা পনের মিনিটের মধ্যেই সবাই চলে আসে পরিচালকের কক্ষে। পরিচালক আশরাফ খানের পাশে বসে আছেন সেই কর্নেল। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে ক্যাপ্টেন খোদবক্স। প্রায় তিরিশ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি তাদের সামনে দাঁড়ায়। কেউ জানে না কেন তাদের ডাকা হয়েছে। কারো মুখে কোনও কথা নেই। সবাই লাইন ধরে দাঁড়াতেই ক্যাপ্টেন খোদাবক্স তাদের মধ্যে থেকে কুড়ি জনকে আলাদা করে দাঁড় করায়। এই ভাগ করা দেখে সবাই আরো ঘাবড়ে যায়। কেউ কারো দিকে তাকানোর সাহস পায় না।
কর্নেল মুখ খোলে- তিন বাজনে কি বাদ সারে ঢাকা শহরমে কার্ফু লাগ যায়েগি। তুম কুড়ি লোক ঘরমে চলা যাও। এক পাশে দাঁড়ানো কুড়ি জন যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। ধীরে ধীরে ঘর থেকে বের হয়ে যায় তারা। কিন্তু কিভাবে এই কম সময়ের মধ্যে বাড়িতে যাবে তা বুঝে উঠতে পারে না কেউ। তবুও রেডিও স্টেশন থেকে বের হয়েই উর্দ্ধশ্বাসে ছোটে বাড়ির দিকে। -আশরাফ খানকো হামলোক ঘর পর ছোড় দেগা।  মোবারক খান, তুম কাল সুবেহ দশ তক রেডিও স্টেশন চালায়েগি। কিউ নেহি হোগা? বলে কর্নেল।
মোবারক অস্বস্তিতে পড়লেও স্বীকার না করে উপায় থাকে না। সে ঘাড় কাত করে।
– ঠিক হ্যায়। ক্যাপ্টেন খোদাবক্স রেডিও স্টেশন কি ডিউটি মে, কই তকলিফ নেহি হোগা। যাও ডিউটি মে।
মোবারকরা ধীরে ধীরে পরিচালকের কক্ষ থেকে বের হয়ে আসে। সবার মন মরা হয়ে যায়। বাড়িতে স্বজনেরা চিন্তা করবে, এখন কোথাও জীবনের নিশ্চয়তা নেই, তাই স্বজনদের নিয়ে সবাই এক সাথে থাকতে চায়। কিন্তু কথা বললেই বিপদ আরো বাড়তে পারে, তাই কেউ কোনও কথা বলে না। স্টুডিওতে ঢুকে তিনটার অধিবেশন বন্ধ করে তারা। বাড়িতে যেতে পারবে না, এমন কী খবরও দিতে পারবে না এ জন্য হতাশ হয়ে পড়ে সবাই।
স্টেশন বন্ধ করে সবাই ফিরে আসে অফিসের কড়িডোরে, দেখে সেখানেও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কেচিগেট। অফিসের মধ্যেই আটকা পড়েছে সবাই। অফিসার হিসেবে এগিয়ে যায় মোবারক। ডাক দেয় সিপাহিকে। ডাক শুনে চলে আসে ক্যাপ্টেন খোদাবক্স। তাকে মোবারক জিজ্ঞেস করে, কী হয়েছে ভাই, গেট বন্ধ করে দিয়েছ কেন?
– তুম জানতা নেহি, শহরমে কার্ফু লাগ গিয়া?
– সেতো শহরে, রাস্তায়। অফিসের গেট বন্ধ করে দিয়েছ কেন?
– সিকিউরিটিকে লিয়ে।
– কিন্তু রাতদিন অফিসে থাকতে হবে, বাউন্ডারির ভিতরে একটু হেঁটে বেড়াতেও পারবো না?
– কোই কোশ্চেন নেহি। হাম ইহা পর ডিউটি মে, রেডিও স্টেশন কী সিকিউরিটি কে লিয়ে হাম সব কুচ করেঙ্গা।
এক ধরণের রোখ চেপে যায় মোবারকের, গোঁ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে কেচিগেটের সামনে।
এটা দেখে আরো রেগে যায় ক্যাপ্টেন খোদবক্স। স্টেনগান তাক করে চিৎকার করে বলে ওঠে, যাও ভিতরমে যাও, নেহিতো গোলি চালা দুঙ্গা।
ভয়ে হাত-পা অবস হয়ে আসে ওদের।

Leave a Reply