মেয়েরাও সম্পদ

30/09/2013 5:17 pmViews: 17

meye1.thumbnailডেস্ক : অশিক্ষা, কুসংস্কার আর দরিদ্রতার কারণে সমাজে ছেলেদের সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও মেয়েদের বেলায় তা হয় না। দরিদ্রতা, সামাজিক রীতি বা ধর্মীয় কারণে মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেয়া হয়। এভাবেই তারা জন্ম থেকেই শিকার হয় বৈষম্যের। এর মধ্যেও অনেক মেয়ে শিক্ষিত হয়ে নানা ক্ষেত্রে যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখছে। চাকরি, সাংবাদিকতা, সাহিত্য, রাজনীতি সবক্ষেত্রেই তাদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। আজ সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর কন্যাশিশু দিবসে নারীর এ সম্ভাবনার কথা জানালেন দেশের কয়েকজন সফল নারী। তারা মনে করেন, মেয়েরা যদি সুযোগ-সুবিধা পায় তাহলে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে মিডিয়া,রাষ্ট্র, সমাজ, অভিবাবকসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলে মেয়েরাও সম্পদ হয়ে উঠবে।

বেবী মওদুদ, সাংবাদিক ও লেখক
কন্যা সন্তান হলে বাবা মা বিপদে পড়ে যেতেন। তারা তখন মেয়েকে আপদ হিসেবে বিবেচনা করতো। মেয়ের জন্মের পর থেকে বাবা-মায়ের চিন্তা থাকতো মেয়ে বড় হলেই বিয়ে দিয়ে দেয়া। এখনো অনেক বাবা মা আছেন যারা সচেতন তারা এমন চিন্তা করেন না। মেয়েদের সঠিক স্বাস্থ্য শিক্ষা দিলে মেয়েরা সম্পদ হয়ে উঠবে। মেয়েরা লেখাপড়া শিখে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করবে।

আমাদের দেশের মেয়েরা সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সমাজ, রাষ্ট্র মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। নারীরা একা চলাফেরা করতে পারে না। এক্ষেত্রে সমাজ, রাষ্ট্র, বাবা-মা সবাইকে মেয়েদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সবাইকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এবং ছেলেদেরকে বোঝাতে হবে মেয়েদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করবে। তাহলে মেয়েরা আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।

অ্যাডভোকেট আসিফা আশরাফি পাপিয়া, রাজনীতিক
কন্যাশিশু দিবস উদযাপনের কারণ হচ্ছে, মেয়েরা বৈষম্যের শিকার থেকে যেন মুক্তি পায়। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও পারিবারিকভাবে মেয়েরা বৈষম্যের শিকার হয়। সকল ক্ষেত্রে তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়। মেয়েরা বৈষম্য ও প্রতিহিংসার শিকার থেকে মুক্তি পেলে তারা সাফল্যের স্বর্ণশিখরে উন্নীত হবে। তারা সৃষ্টিশীল কাজে এগিয়ে যাবে। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘বিশ্বের যা কিছু সৃষ্টি চির কল্যাণকর,  অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’।

নারীরা বর্তমানে পুলিশ, সাংবাদিক, বৈমানিক থেকে শুরু করে সকল চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। নারীরা নিজ যোগ্যতায় সর্বত্র বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে এবং ভবিষ্যতে করবে। নারীকে যেনো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা না হয়। নারীরা সুযোগ পেলে আরও সামনে এগিয়ে যাবে।

লিনা লুসাই, আদিবাসী নারীনেত্রী
একটা সময় বাবা-মা মনে করতো মেয়েকে পড়ালেখা করিয়ে লাভ কী? মেয়েদের পেছনে টাকা পয়সা খরচ করা ক্ষতি। মেয়েকে বিয়ে দিলে পরের বাড়ি চলে যাবে। মেয়েরা বংশ রক্ষা করবে না। এমনকি সংসারের অর্থনৈতিক ও অন্যান্য দায়ভার বহন করবে না।

কিন্তু সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বাবা মায়ের চিন্তা ভাবনার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন আর তারা এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করে না। মেয়েরাও পড়ালেখা করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ছেলেমেয়ে উভয়েই সংসারের দায়িত্ব নিতে পারে। যদিও পুরোপুরি ধারণার পরিবর্তন আসেনি। মেয়েরা ভালো চাকরি করতে পারে। মেয়েদেরকে এখন আর বোঝা হিসেবে দেখা হয় না। সুযোগ সুবিধা পেলে মেয়েরা শিক্ষিত হয়ে ভালো চাকরি করে, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে অবদান রাখতে পারে।

বংশ রক্ষার ক্ষেত্রেও দেখা যায় অনেক ছেলে আছে যারা নিজেদেরকে উজ্জ্বল করতে পারে না, তারা বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে কীভাবে? সেক্ষেত্রেও বাবা মা মনে করে ছেলে-মেয়ে বড় বিষয় না ভালো মানুষ হওয়াটা বড় কথা। যে সন্তান বাবা মাকে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে সাহায্য করবে।

মেয়েদেরকে সামনে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে জেন্ডার সচেতন হতে হবে। সেইসঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। মিডিয়াকে ভূমিকা পালন করতে হবে। নাটক বিনোদনের মাধ্যমে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। মেয়েদের প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য দূর করতে হবে।

Leave a Reply