মেলবোর্নের জবাব মিরপুরে
১৯ জুন, ২০১৫
মেলবোর্নে মুস্তাফিজুর ছিলেন না। রঙিন পোশাকে তার শুরুটা হল মিরপুরে। স্বপ্নের মতো সূচনা। অভিষেকেই পাঁচ উইকেট। মেলবোর্নে বঞ্চনার বদলাও নেয়া হল! বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মিরপুরে জনাকীর্ণ গ্যালারিতে, পথে যে উৎসবের ঢল নামল, তার উৎস ওই ১৯ বছর বয়সী লিকলিকে শরীরের পেসারের বিধ্বংসী স্লোয়ার। যার মারণাস্ত্রে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইনআপের দল ভারত। তামিম-সৌম্য’র উদ্বোধনী জুটিতে ১০২ রানের যোগফলে ৩০৭ ওডিআইতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। সেই হিমালয়ের নিচে চাপা পড়ে ভারত ২৪ বল বাকি থাকতে ২২৮-এ অলআউট। বাংলাদেশ ৭৯ রানের বিশাল জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ শুরু করল ১-০ তে এগিয়ে গিয়ে।
মিরপুরে কাল ফিরে এল কার্ডিফ রূপকথা। ২০০৫ সালের ১৮ জুন মোহাম্মদ আশরাফুলের শতকের সৌজন্যে বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। দশ বছর পর সেই ১৮ জুনে ভারত-বধ। কী আশ্চর্য দেখুন, মাত্র দু’মাস আগে এই ভেন্যুতেই একই ব্যবধানে পাকিস্তানকে হারিয়েছিলেন মাশরাফিরা। পরে দুটি ম্যাচ জিতে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। এই জয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে আট থেকে সাতে ওঠা নিশ্চিত হল।
বৃহস্পতিবার যখন ম্যাচ শেষ হয়, তখন প্রায় রাত ১২টা। কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকানোর সময় কোথায়। রাতটা যে উৎসবের। বিশ্বের দু’নম্বর দল, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্টদের হারানোর আনন্দে মিরপুর থেকে শ্যামপুর সর্বত্র আনন্দের ঢেউ উঠল। যে ঢেউ উঠতে পারত মেলবোর্নে। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। এ বছর এ নিয়ে দশটি ওডিআইতে সপ্তম জয়ের আনন্দ অনেক বেশি বর্ণিল।
এমএস ধোনির ধাক্কায় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল মুস্তাফিজুরকে। সেই মুস্তাফিজুরের ধাক্কায় পরাস্ত ভারত। ধোনি পরে স্বীকার করলেন, ‘বাংলাদেশ দল হিসেবে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে। প্রথম বল থেকে তারা চড়াও হয়েছে আমাদের বোলারদের ওপর।’ আর বিজয়ী অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা যথার্থই বলেছেন, ‘এরচেয়ে বেশি আর কী চাইতে পারি। মুস্তাফিজুর আমাদের জন্য কোনো বিস্ময় নয়। আমরা জানতাম, যে কোনো ব্যাটসম্যানকে ধ্বংস করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে সে।’
তাসকিন আহমেদও ডেব্যুতে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে। কাল মুস্তাফিজুর হয়ে গেলেন তাসকিন। রোহিত শর্মা (৬৩) থেকে শুরু করে রাহানে (৯), রায়না (৪০), জাদেজা (৩২), অশ্বিন (০) কেউ নিস্তার পাননি এই তরুণ টাইগারের কাটার থেকে। ভারত সর্বোচ্চ ১১ বার তিনশ’ রানের বেশি তাড়া করে ম্যাচ জিতেছে। ওপেনিংয়ে ৯৫ রানের জুটির পর আরেকটি তিনশ’র বেশি রান তাড়া করে জেতার পথে যাচ্ছিল ভারত। সেই জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে পথ দেখাতে শুরু করেন তাসকিন আহমেদ। ভারতের বিপক্ষে গত বছর অভিষেকেই পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেদিন ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ। কাল আরেক অভিষিক্ত মুস্তাফিজুরের পাঁচ উইকেটে জিতল টাইগাররা। রোহিত শর্মা তার চতুর্থ ওভারে পরপর একটি ছয় ও দুটি চার মারেন। পরের ওভারে সেই রোহিতকে স্লোয়ারের ফাঁদে ফেলে মুস্তাফিজুরের উইকেট নেয়া শুরু। এমন মধুর অবদান রেখেছেন দুটি উইকেট নেয়া সাকিব আল হাসান। একটি উইকেট নেন মাশরাফি। ভারতের একমাত্র রোহিত শর্মাই হাফসেঞ্চুরি করেছেন। তাসকিন ও মাশরাফি বুকে বুক মেলানোর পাশাপাশি জয় উদযাপনে নতুন সংযোজন করেছেন কোমরে কোমর মেলানো। ম্যাচসেরা মুস্তাফিজুর লাজুক হাসি দিয়ে তা উপভোগ করেছেন।