মৃত্যুই চরম সত্য, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

04/02/2014 11:10 amViews: 16

 

৩০ জানুয়ারি রাওয়া কনভেনশন সেন্টারে অধ্যাপক খাজা নাজিম উদ্দিনের ছেলে ডা. রাশেদ ফালাহ নাজিমের সঙ্গে ডা. রুমানা চৌধুরী রীপার শুভ বিবাহের দাওয়াত ছিল। ভদ্রলোক খুবই সাদাসিধা নিরহঙ্কার মানুষ। আমার মায়ের চিকিৎসা করতেন। এখন আমার করেন। কেন যেন আপনা-আপনিই একটা আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তাই গিয়েছিলাম। অনেক পরিচিতের এক মিলনমেলার সৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে বর-কনেকে দোয়া করে এসেছি, আল্লাহ যেন তাদের দাম্পত্য সুখী জীবন দান করেন।

মনটা খুব খারাপ। চারিবাইদার অল্প বয়সী এক কর্মী হঠাৎই জন্ডিসে মারা গেছে (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআন মজিদে সূরা হজের পাঁচ নম্বর আয়াতে বলেছেন, “হে মানুষ সকল! যদি পুনরায় বাঁচিয়া উঠিবার বিষয়ে তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে তবে মনে রাখিও, নিশ্চয় আমি তোমাদিগকে সৃজন করিয়াছি মাটি হইতে, তৎপর বীর্য হইতে অতঃপর জমাট রক্ত হইতে, পরে আকৃতিযুক্ত ও আকৃতিবিহীন মাংস খণ্ড হইতে, এই সৃষ্টির উদ্দেশ্য যেন আমি তোমাদের নিকট আপন মহিমা প্রকাশ করিতে পারি এবং আমি তাহাকে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত যতদিন ইচ্ছা মায়ের গর্ভে রাখিয়া দেই, তারপর তোমাদিগকে শিশুর আকারে বাহির করি যেন তোমরা আপন যৌবনে পেঁৗছতে পার এবং তোমাদের মধ্যে এমনও কেহ কেহ আছে যাহাদের প্রাণ (যৌবনের) পূর্বেই লইয়া যাওয়া হয় আবার এমনও কতক আছে যাহাদের অকর্মন্য বৃদ্ধ বয়সে পেঁৗছানো হয়, যাহার ফলে তাহারা জানিবার পরেও স্মরণ রাখিতে অক্ষম হয়। এবং তুমি জমিনকে শুকনা মৃত অবস্থায় দেখিতেছ, কিন্তু যখন আমি উহার উপর পানি বর্ষণ করি, উহা নড়িয়া ও ফুলিয়া ওঠে এবং সব রকমের সুন্দর সুন্দর উদ্ভিদ উৎপাদন করে।” এবং ছয় নম্বর আয়াতে, ‘এই সব হয় এই হেতু যে, একমাত্র আল্লাহই সত্য এবং তিনিই মৃতকে জীবিত করেন এবং তিনি সব কিছু করিতে অবশ্যই শক্তি রাখেন।’ তাই মৃত্যু নিয়ে খুব একটা ভাবার নেই। কিন্তু তবু আকস্মিক কেউ মারা গেলে স্বভাবতই মন ব্যথিত হয়। আর সেই মৃত্যুর মধ্যে যদি কোনো ত্রুটি দেখা যায় তখন মনটা আরও বিদ্রোহী হয়ে উঠতে চায়। ১৬-১৭ বছরের রাজপুত্রের মতো ছেলে। বছর দুই-তিন যেখানে গেছি সেখানেই দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধের আগে আমি ছিলাম খুবই হেংলা পাতলা। কিন্তু কুতুবপুরের চারিবাইদার মাজেদা ও আয়নালের ছেলে মাসুদ ভীষণ মানানসই এক কিশোর। চারিবাইদা আমার ছোটবেলার বিচরণ ভূমি। বড়চওনা থেকে কতবার হেঁটে চারিবাইদা গেছি। অল্প বয়সে এক ধরনের ভাদাইমা এবং দুষ্ট ছিলাম। বাচ্চাদের দুষ্টুমি ছাড়া কোনো কুকর্ম কোনো দিন করিনি। ৩১ জানুয়ারি হঠাৎ ছেলেটির মৃত্যু সংবাদ শুনে খুবই মর্মাহত হয়েছিলাম। তাই তার মা-বাবাকে সান্ত্বনা এবং কবর জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। সদ্যপ্রয়াত মাসুদের ৬-৭ বছরের ছোট বোন অাঁখি আমার কোলে উঠে গলা ধরে বলছিল আমার সোনার ভাইটা মরে গেল, শুনে হৃদয় খান খান টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। গলায় কি যেন আটকে গিয়েছিল। তাই বলতে ইচ্ছে করছিল- “হে পথিক-বন্ধু মোর, হে প্রিয় আমার,/ যেখানে যে-লোকে থাক’ করিও স্বীকার/ অশ্রু-রেবা-কূলে মোর স্মৃতি-তর্পণ,/ তোমারে অঞ্জলি করি’ করিনু অর্পণ!”

আল্লাহর বিচিত্র জগতে সবাই মরে। কখন কার মৃত্যু আলেমুল গায়েবই জানেন। কিন্তু তবু দুঃখ রয়ে যায়, ছেলেটি জন্ডিসে মরেছে। কোনো ডাক্তারি চিকিৎসা হয়নি, যা হয়েছে পুরোটাই গ্রাম্য কবিরাজি। আগে শুনতাম, জন্ডিস কোনো অসুখই না। একটু বিশ্রাম নিলেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু জন্ডিস যে এক মারাত্দক ব্যাধি বছর তিনেক আগে আক্রান্ত হয়ে বুঝেছি। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে অধ্যাপক মো. আবদুল্লাহর অধীন এক মাস ছিলাম। ভিসি প্রাণ গোপাল দত্ত বারবার দেখতে আসতেন। সে জন্য জন্ডিসের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে কিছুটা জেনেছি। ছেলেবেলায় পাঠশালা, স্কুল-কলেজে মন দিয়ে লেখাপড়া করিনি। তাই এখন যে যখন যা বলে তা-ই মনে রাখতে চেষ্টা করি। যদিও বয়সের কারণে হয়তো আগের মতো কোনো কিছু মনে রাখতে পারি না। সকালের কথা বিকালে ভুলে যাই। এই তো ক’দিন আগে বারান্দা থেকে শোবার ঘরে কলম আনতে গিয়ে ভুলে গিয়েছিলাম। এরও বছর চার আগে একবার বাড়ি থেকে মতিঝিল যেতে গিয়ে ঢাকা মেডিকেলের ডাইরেক্টরের রুমে গিয়ে মনে পড়ে আমার কাজ মতিঝিলে, ঢাকা মেডিকেলে নয়।

জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে যখন ছিলাম তখন প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা হতো। সুইয়ের খোঁচায় খোঁচায় ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তবু হার মানিনি। রক্ত দেওয়া একটা রুটিন হয়ে গিয়েছিল। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি শক্ত এটাও হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম সেখানে বাচ্চা ডাক্তারদের আচরণে। তারা সকাল-বিকাল-দুপুর একই প্রশ্ন নিয়ে আসত_ পায়খানা-প্রস্রাব হয়েছে? ক’বার পানি খেয়েছেন? ক’বার খাবার খেয়েছেন? ঘুম হয়েছে? খাবার খেতে কেমন লাগে? পেটের ওখানে কেমন, এখানে কেমন, সেখানে কেমন? কোথায় কোথায় চুলকায়? রাজনীতি করা মানুষ, সারা জীবন সাংবাদিকদের নিয়ে কাজ, তারাও ফেল। একদিন এক বাচ্চা ডাক্তার টেবিলে ১০-১২টা পত্রিকা আর ছয়/সাতটি বই দেখে অাঁতকে ওঠে, ‘হায় হায় এগুলো কেন? আপনি এগুলো পড়েন? আপনার তো পড়া চলবে না। শুধু রেস্ট। চোখ খোলাও বারণ।’ অসহায়ের মতো বলেছিলাম, তাহলে কীভাবে খাব, বাথরুমে যাব, উঠাবসা করব? ডাক্তার বলেছিল, ‘বেশি উঠাবসাও করা যাবে না।’ মনটা বিষিয়ে গিয়েছিল। অধ্যাপক আবদুল্লাহ এলে কথাগুলো বলেছিলাম। দরদি মানুষ অধ্যাপক আবদুল্লাহ। ওই যে মাসুদের ছোট বোন অাঁখি আমার কোলে গলা ধরে বলেছিল, আমার সোনার ভাইটা মরে গেল। অমনই সোনার মানুষ চিকিৎসক আবদুল্লাহ। বলেছিলেন, ছোট ডাক্তার ঠিকই বলেছে। আপনার বিশ্রাম নেওয়া দরকার। জন্ডিসের বাড়ার দিকটা ভালো না। যতক্ষণ না থামে ততক্ষণ কিছুই করার থাকে না। তবে লেখাপড়া করতে কোনো মানা নেই। যতক্ষণ ভালো লাগে ততক্ষণ পড়বেন। তবে বেশি না। জন্ডিস হলে আমাদের গ্রামগঞ্জে কাঁচা দই, অড়হড়ের রস, অাঁখের রস, এক ধরনের মালার চিকিৎসা করে। হাসপাতালে থেকে মনে হয়েছে, জন্ডিসে এসব কিছুই কাজে আসে না। যাদের মোটামুটি সব ঠিকঠাক থাকে, তারা চুপচাপ কয়েক দিন বিশ্রামে থাকলে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে ব্যাপারটা ঠিক সে রকম। তবে জন্ডিসের রোগীর পেট এবং শরীর ঠাণ্ডা থাকা দরকার। মাসুদের কি শ্রেণীর জন্ডিস হয়েছিল জানা গেলে হয়তো বলা যেত তার চিকিৎসা ছিল কি ছিল না। দিনের পর দিন রোগীর চাপে জেরবার হয়ে যাই। মাস্টার আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ছেলে তুহিন সিদ্দিকী প্রায় সাত-আট বছর আমার বাড়িতে থাকে। ৪৫-৫০ বছর আগে আমাদের টাঙ্গাইলের বাড়িতে অনেকে জায়গির থাকত। তারা তাদের নিজেদের টাকা-পয়সাতে থাকত, খেত। কিন্তু তুহিন সিদ্দিকী আমাদের ঘাড়ে থাকে। তিন-চার বছর আগেও ছেলেটাকে আমার তেমন পছন্দ ছিল না। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। ইন্টারমিডিয়েট থেকে আমার বাসায় আছে। আগে পড়ত ঢাকা কলেজে, ভালোভাবেই অনার্স করেছে। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রোগী হলেই হলো, কোন জেলা, কোন থানা, কোন দল দেখার দরকার নেই, তুহিন সিদ্দিকী আছে রোগীর পিছে। সারা দিনে একবার বলে-কয়ে খাওয়ানো যায় না। রোগী নিয়ে ছোটাছুটি, পয়সার প্রয়োজন হলে ভাবী তো আছেই। যদি আমি বাসা ভাড়া দিতাম তাতে কিছু না হলেও তিন-চার হাজার পেতাম। খাবার খাইয়ে প্রতি মাসে সাত-আট হাজার তুহিনের পাছে ঢালতে হয়। আমার ছোট মেয়ে কুশি সিদ্দিকীর স্কুল খরচ আর তুহিন সিদ্দিকীর খরচ প্রায় সমান। তবু এই দুর্নীতির সমাজে একটা প্রকৃত সেবক পেয়েছি। যে কোনো দুর্নীতি করে না, হৃদয় উজাড় করে রোগীর সেবা করে এটাই যা ভরসা। সেই তুহিনও অমন তরতাজা ছবির মতো সুন্দর মাসুদের জন্য হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করতে পারল না এই যা দুঃখ রয়ে গেল।

‘৭২-এর মার্চে বঙ্গবন্ধুর কল্যাণে বাবর রোডে এসেছিলাম। এই বাড়ি থেকে কতজন মন্ত্রী হলো, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, ব্রিটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি দুনিয়ার কত দেশে গেল, আমি যে সেই বাবর রোডেই অবৈধ পড়ে রইলাম। ওপার যাওয়ার আগে হয়তো আর বৈধ হব না। বছরখানেক আগে পূর্ত প্রতিমন্ত্রী জনাব আবদুল মান্নান ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধার অবৈধ সরকারি বাড়িতে বসবাসের তালিকা সংসদে পেশ করেছিলেন। ভালোই করেছিলেন। নির্বাচন বৈধ আর অবৈধ যাই হোক আমার প্রিয় বোন যাকে নিয়ে কর্মী মহলে দারুণ আলোচনা, বাসা-বাড়িতে কেউ গেলে খুব আদরযত্ন করে, যুগান্তর সম্পাদক সালমা ইসলামের কাছে ভীষণভাবে হেরে গেছেন এবং অশান্তি সৃষ্টি করছেন। তাতে এরই মধ্যে কয়েকজনকে জীবন দিতে হয়েছে। রাজনীতি করি, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ নামে একটি গরিবের দল আছে। এতকাল প্রসার এবং প্রচার ছিল না। কষ্ট ছিল, এখনো আছে। কিন্তু গ্রামগঞ্জের হাজারো মানুষ প্রতিদিন ২০-৫০-১০০ টাকা দলের তহবিলে পাঠানোয় মোটামুটি চলছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তিন মাস কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে। ১০ থেকে ১০০ টাকা সদস্য সংগ্রহ অনুদান দেবে। এই দুই-তিন দিনে কয়েক হাজার সদস্যের অনুদান পেয়েছি, তাতেই খুশি। তাই খুব বেশি অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। তবে এখন বিত্তবানরাও বেশ খোঁজখবর নেয়। আসলেই আমার যে কোনো দাম ছিল আগে বুঝিনি, এখনো তেমন বুঝি না।

প্রথম আলোতে সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলীর সিগারেট হাতে চমৎকার এক ছবি দেখে অভিভূত হয়েছি। প্রথম আলোর এক সাংবাদিক বারবার এটা-ওটা জানতে চায়। পত্রিকাটির সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় আমি নিজে থেকে কোনো খবর বা সাক্ষাৎকার দেই না। কিন্তু সেদিন মহসিন আলীর খবর দেখে পত্রিকাটির প্রতি আমার গভীর মায়া সৃষ্টি হয়েছে। এই তো জাতীয় পত্রিকার কাজ। মহসিন আলী আমার খুবই প্রিয়। দেশে ফেরার পর যতবার দেখা হয়েছে অসম্ভব সম্মান করেছে। একেবারে এমন প্রহসনমূলক নির্বাচন না হলে মন্ত্রী হওয়ায় আমি তাকে সবচেয়ে বেশি দোয়া করতাম। প্রিয় মহসিন পা থেকে মাথা পর্যন্ত একজন রাজনীতিক। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে ওভাবে তার ধূমপান ঠিক হয়নি। পাশে বসা পুলিশ কর্মকর্তাদেরও এ কারণে ব্যর্থতার জন্য অন্তত একবারের ইনক্রিমেন্ট কেটে দেওয়া উচিত। খবরটি দেখেই মনে মনে স্থির করেছিলাম, মহসিন আলীর পদত্যাগ চাইব। কিন্তু সে তাৎক্ষণিকভাবে তার ভুল স্বীকার করায় তার প্রতি আমার স্নেহ, ভালোবাসা ও বিশ্বাস আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ ভুল করতেই পারে, সেই ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হলে তার থেকে বড় কিছু নেই। সে জন্য মহসিন আলীর সাফল্য ও সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল কামনা করছি।

২০ জানুয়ারি বিনা ভোটে সখিপুর-বাসাইলের এমপি হঠাৎ করেই পরলোকগমন করে। মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এভাবে হঠাৎ করে কেউ চলে গেলে বুকে বাজে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে অনেক বেজেছে তা বুঝতে পেরেছি। ২৯ জানুয়ারি অভিনব সংসদে শোক প্রস্তাবে শাজাহানের কথা বলতে গিয়ে তিনি বড় বেশি বলে ফেলেছেন। শওকত মোমেন শাজাহান তার সঙ্গে কিংবা বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে নয়, আমার সঙ্গে কাদেরিয়া বাহিনীতে ছিল। ঢাকা, টাঙ্গাইল, পাবনা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, মানিকগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকায় অন্য কোনো সংগঠন ছিল না, ছিল কাদেরিয়া বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের সময় কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে হানাদারদের ৩০০-র বেশি যুদ্ধে কোনোটাতেই শওকত মোমেন শাজাহান অংশ নেয়নি বা নিতে পারেনি। কবি বুলবুল খান মাহবুব, কবি রফিক আজাদ, ফারুক আহমেদ, হামিদুল হক বীরপ্রতীক, আওয়াল সিদ্দিকী, শ. ম. আলী আজগর, নয়া মুন্সী, খোরশেদ আলম জ.ঙ., আমজাদ মাস্টারের মতো শাজাহানেরও দায়িত্ব ছিল নিরাপদ হেডকোয়ার্টারে। শাজাহান নিবেদিত ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত ক্ষমতা দেখানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তাকে শাস্তি পেতে হয়েছিল। আমি আওয়ামী লীগ ত্যাগ করার আগ পর্যন্ত সে আমার সঙ্গেই ছিল। আমি এখনো আওয়ামী লীগে থাকলে জননেত্রীর সঙ্গে নয়, আমার সঙ্গেই থাকত। তাই আমার চেয়ে নেত্রী তাকে বেশি চিনেন এটা মেনে নেই কি করে? প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন তাই গুরুত্ব পাবে এটা খুবই সত্য। কিন্তু আমি যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে সর্বস্ব ত্যাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে ছিলাম, শাজাহান তেমন করেনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কিছু দিন কারাগারে ছিল। তারপর ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে দলীয় বিরোধে চারটি অমূল্য প্রাণ ঝরে পড়লে তার আসামি হিসেবে সে নিঃস্ব রিক্ত হয়ে ভারতে যায়। বর্ধমানের বাড়িতে গিয়ে যখন ওঠে তখন তার গায়ে ভালো জামাকাপড় ছিল না। দেড়-দুই দিন অভুক্ত ছিল। সবাইকে যেমন জায়গা দিয়েছি, তাকেও দেওয়া হয়েছিল। একজন সহযোদ্ধা, একজন মুক্তিযোদ্ধা মারা গেছে, তার জানাজায় দাঁড়িয়ে বলে এসেছি, অন্তর থেকে ক্ষমা করে দিলাম। আল্লাহর কাছে কায়মনে প্রার্থনা করি, তিনি যেন তাকে বেহেশতবাসী করেন। আমার এসব লেখার উদ্দেশ্য জাতীয় সংসদের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দাঁড়িয়ে সংসদ নেতা যদি প্রকৃত সত্য না বলেন বা না জানান, মানুষ বিভ্রান্ত হয়। যেহেতু বঙ্গবন্ধু নেই, প্রবীণ নেতারা নেই, তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তা-ই তো আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নয়। এসব যে সত্য নয়, তাই কবি নজরুলের কবিতা থেকে বলি- “আজ’টাই সত্য নয়, ক’টা দিন তাহা?/ ইতিহাস আছে, আছে ভবিষ্যৎ, যাহা/ অনন্ত কালের তরে রচে সিংহাসন,/ সেখানে বসাবে তোমা বিশ্বজনগণ।/ আজ তারা নয় বন্ধু, হবে সে তখন,/ পূজা নয় আজ শুধু করিনু স্মরণ।”

লেখক : রাজনীতিক।

Leave a Reply