মূসা ইব্রাহীমকে নিয়ে তোলপাড়!
ঢাকা, ৩১ মার্চ : সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগের সাইট ও ব্লগে বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী মুসা ইব্রাহীমকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। মুসা ইব্রাহীমের সার্টিফিকিটে এমনকি তার এভারেস্ট চ্থড়ায় উঠা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কেউ কেউ। আর ওই বিতর্কের পালে হাওয়া লাগে সম্প্রতি বেসকারি টিভি চ্যানেল ৭১-এ এসংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রচার হওয়ার।
তাই বলে বসে নেই মূসার সমর্থকরা। তারা যথাসাধ্য অভিযোগকারীদের যুক্তি খন্ডন করছেন তাদের লেখনীর মাধ্যমে। এমনকি মুসা ইব্রাহীম নিজেও নিন্দুকদের করা সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাচ্ছেন ধৈর্য্য সহকারে।
গত ২৯ মার্চ শনিবার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল৭১ এভারেস্ট বিজয়ীদের তালিকায় মূসা ইব্রাহীমের নাম নেই শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, এভারেস্ট জয়ীদের নিয়ে প্রকাশিত নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং নেপাল মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশনা ‘নেপাল পর্বত’ এ মুসা ইব্রাহিমের নাম নেই। ওই তালিকায় এভারেস্ট জয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী-পুরুষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এম এ মুহিত ও নিশাত মজুমদারকে।
একাত্তর টিভির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এভারেস্ট জয় নিয়ে মুসা যে স্মরণিকাটি প্রকাশ করেন তাতে তার (মুসা) সঙ্গে আর যাদের কথা বলা হয়েছে, তাদের কারো নামই ‘নেপাল পর্বত’ এ নেই।
এ ব্যাপারে নেপাল মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি জিম্বা জাংবু শেরপা বলেন, এভারেস্ট জয় করা নিয়ে মুসা যে ছবিটি দেখিয়েছে, সেটি চূড়ার নয়। কারণ চূড়ার ছবি এমন হয় না। এটি সাত হাজার ফুট নিচে তোলা ছবি।
ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশি আরেক এভারেস্ট জয়ী ও ‘নেপাল পর্বত’ এর স্বীকৃতি পাওয়া এম এ মুহিতও মূসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট জয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এ সময় তিনি পত্রিকাতে ছাপা হওয়া মূসা ইব্রাহীম বিভিন্ন লেখা ও ছবির ব্যাপারে অসঙ্গতির অভিযোগ আনেন।
এদিকে একই প্রতিবেদনে দেশের প্রথম নারী এভারেস্ট জয়ী নিশাত মজুমদার বলেন, নেপাল মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশন হয়তো মুসার মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানাতেই তার নামটি বাদ দিয়েছে।” প্রতিবেদনটিতে এটা তার বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছেন মুসা ইব্রাহিম।
এর পরদিন রবিবার লাং সিসাসহ আরো কয়েকটি পর্বতে আরোহণ নিয়েও মুসা জালিয়াতি করেছেন বলে সংবাদ প্রচার করে ওই বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলটি।
প্রসঙ্গত, এর আগেও বাংলাদেশের অনেকেই এভারেস্ট জয়ী প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে মুসা ইব্রাহীম দাবির সাথে ভিন্নমত পোষণ করে আসছিলেন।
এর আগে ২০১০ সালেই মূসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট বিজয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হিমু নামের একজন ব্লগার। সচলায়তন নামের একটি ব্লগে ৬জুলাই ২০১০ তারিখে তিনি একটি সিরিজ লিখেন।
হিমু সেসব লেখায় মূসার এভারেস্ট আরোহনের বিভিন্ন বর্ণনা, ছবি ও প্রামাণ্যচিত্রের সুক্ষাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেন। গমন পথগুলোর দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক বিশ্লেষণও তুলে ধরেন সেখানে।
সেই সাথে তিনি মূসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট বিজয়ের নেপথ্যে একটি মিডিয়া গ্রুপের শক্তিশালী প্রচারণা ও ভূমিকার কথাও বলা হয়।
এহেন প্রচারণার প্রেক্ষিতে মূসা ইব্রাহীমের পক্ষে নিন্দুকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করেন প্রথম আলোর উপ-সম্পাদক আনিসুল হক।
রবিবার শিমু নাসেরের করা একটি স্টাটাস নিজের ওয়ালে শেয়ার করেন তিনি। সেখানে মূসা ইব্রাহীমকে নিয়ে হওয়া অপপ্রচারকে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর নোংরামি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, মুসা ইব্রাহীমকে নিয়ে একধরণের নোংরমি শুরু হয়েছে। এটা উদ্দেশমূলক এবং দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্র বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি সবাইকে সত্য জানার জন্য একটু গবেষণা করা এবং গুগলে সার্চ দেয়ার পরামর্শ দেন।
এদিকে অভিযোগের তীর উঠা বাংলাদেশি প্রথম এভারেস্ট জয়ী মূসা ইব্রাহীম বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তিনি সোমবার এক বিবৃতির মাধ্যমে এসব প্রচারণার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এভারেস্ট একাডেমির প্যাডে লেখা ওই বিবৃতিতে তিনি জানান, আমি লক্ষ্য করছি- ২/৩টি গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, “সর্বশক্তিমান আল্লাহর ইচ্ছায় এবং কোটি বাংলাদেশির দোয়ায় আমি ২০১০ সালের ২৩ মে চীনের তীব্বত অংশ দিয়ে আমি এভারেস্ট চূড়ায় উঠি। আমি পরিবারের সাথে এ মুহূর্তে দেশের বাহিরে অবস্থান করছি। দেশে ফিরে এসে গণমাধ্যমের কাছে এভারেস্ট জয় করা নিয়ে আমার কাছে থাকা সমস্ত তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৩মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এবারেস্টের চূড়ায় আরোহন করে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেন মূসা ইব্রাহীম। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশকে নিয়ে যান মর্যাদার উচ্চ শিখরে।