মুরগির পালকে বাড়ি

28/12/2013 8:25 amViews: 9

undefinedকত রকমের বাড়িই না দেখেছে দুনিয়ার মানুষ। মাটির, খড়ের, লতাপাতার, টিনের, বাঁশের, কাঠের, ইটের। এ দেশে পাটকাঠির ঘরও আছে। প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ঘর বানিয়েও কেউ কেউ দুনিয়ার মানুষকে চমকে দিয়েছেন। কাগজের ঘরও তৈরি করেছেন অনেকে। বরফের ঘর যে আছে, এটাও জানা। তাই বলে মুরগির পালক দিয়ে ঘর! সত্যিই তাই। আসলে মুরগির পালক নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিল ফিলিপাইন। বছরে গড়ে ২০ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন মুরগির পালক বেরোয় পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি থেকে। উচ্ছিষ্ট হিসেবে এ পালক চলে যায় ময়লার ভাগাড়ে। তারপর পরিবেশের জন্য হয়ে দাঁড়ায় হুমকি। তো এই পালক দিয়ে কি কিছু করা যায় না? ব্যস। শুরু হল গবেষণা। আর একসময় উদ্ভাবন হয়ে গেল মুরগির পালক দিয়ে বিল্ডিং বোর্ড তৈরি।
আমাদের দেশেই তো, ইটের ঘরেও উইপোকা কিংবা ঘুণপোকা ধরে। সে জায়গায় মাটি, খড়, লতাপাতা, বাঁশ, কাঠ কিংবা পাটকাঠি হলে তো কথাই নেই। ঘুণপোকার পোয়াবারো। বাড়িঘর খেয়ে একাকার করে ফেলে। তারওপর বর্ষাকালে বাড়ির ভেতরে পানি ঢোকে। আর শীতে বাড়ি হয়ে থাকে ঠাণ্ডা। ফিলিপাইনেও একই রকম সমস্যা। এসব সমস্যার সমাধানও হয়ে গেছে ওই এক উদ্ভাবনে। কীভাবে?
মুরগির পালক দিয়ে তৈরি বিল্ডিং বোর্ড ঘুণপোকা প্রতিরোধী। ঘুণপোকাদের ঘেঁষতেই দেবে না ধারেকাছে। মুরগির পালকে কখনও ঘুণপোকা ধরেছে, এমন কেউ শুনেছে? তাছাড়া মুরগির পালকে কিন্তু পানিও আটকে থাকে না। পানি পড়া মাত্রই গড়িয়ে পড়ে যায়। শীতেও ওই পালক মুরগির শরীর গরম রাখে। কাজেই সবকিছু হিসেব করলে গবেষক প্রফেসর মেনান্দ্রো আকদার এই উদ্ভাবন এক কথায় অসাধারণ। মুরগির পালক দিয়ে বিল্ডিং বোর্ড তৈরির চিন্তাটা তার মাথা থেকেই বেরিয়েছে। আর এ আবিষ্কার নির্মাণ শিল্পে যুগান্তকারী হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। তবে সেটা ভবিষ্যতের কথা। হয়তো ভবিষ্যতে এ উদ্ভাবনকে আরো সমৃদ্ধ করবেন অন্য কোনো বিজ্ঞানী। তবে এখন ফিলিপাইনের বিশাল সমস্যা মুরগির পালক, যা পরিবেশকে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত করে যাচ্ছে, সে থেকে তো উদ্ধার পাওয়া গেল। ইউনিভার্সিটি অফ ফিলিপিন্সের প্রফেসর মেনান্দ্রো আকদা এ গবেষণার পরিচালক। ফোর্ড মোটর কোম্পানির কনজারভেশন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল গ্রান্টস প্রোগ্রাম এই গবেষণা কাজে অর্থ সহায়তা করেছে। ঘনীভূত সিমেন্ট ও মুরগির পালকের মিশ্রণে তৈরি ওই বিল্ডিং বোর্ড বাড়ি তৈরির কাজে সহজে ব্যবহার করা যাবে বলে গবেষকরা মনে করেন। কাঠের তৈরি বোর্ড যা সহজে ঘুণপোকা নষ্ট করে ফেলে, তার বিকল্প হিসেবে নতুন ওই বোর্ড ব্যবহার করা সম্ভব হবে বলে জানান আকদা। তার মতে নতুন উদ্ভাবিত বোর্ড ঘুণপোকাসহ অন্যান্য পোকা প্রতিরোধ করতে পারবে কারণ পোকারা পালক খায় না। এছাড়া সাধারণ সিমেন্ট ও কাঠের তৈরি বোর্ডের মতো এগুলো সহজে পুড়বে না বলেও জানান তিনি। তবে আরো গবেষণার প্রয়োজন উল্লেখ করে আকদা বলেন, এসব বোর্ড পার্শ্বদেয়ালের সিলিং গড়তে ব্যবহার করা যাবে। ভার বহনকারী অংশ যেমন মূল দেয়াল অথবা পিলার গড়তে এগুলো ব্যবহার করা যাবে না।
বড় বড় বিল্ডিঙে হয়তো এখনই এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু গ্রামের দরিদ্র মানুষ কম খরচে নিজেদের বাড়ি বানিয়ে নিতে পারবেন মুরগির পালকের বিল্ডিং বোর্ড থেকে। সেটাই বা আপাতত কম কিসে!

Leave a Reply