মুজাহিদ বাদে আপিলে সাকাসহ ৮ মামলা

07/06/2015 3:20 pmViews: 7

মুজাহিদ বাদে আপিলে সাকাসহ ৮ মামলা

international-crime-tribunal-আন্তর্জাতিক-অপরাধ-ট্রাইবুনাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা প্রতিদিন ডটকম: একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এবার বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল আবেদনের ওপর শুনানির পালা। কায্য তালিকায় (কজলিস্টে) আসলেই মামলায় শুনানির (তারিখ) দিন-ক্ষণ ঠিক করা হতে পারে।

আপিল শুনানি শেষ হওয়ায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলায় আগামী ১৬ জুন রায় ঘোষণার পরই সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার শুনানি শুরু হবে। তার আগেও  সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আপিলের মামলার কায্যক্রম শুরু হয়ে চলতে পারে। কিন্তু চুড়ান্ত শুনানি মুজাহিদের রায় ঘোষণার পরেই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

সে হিসেবে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আনা আরো ৮টি আপিল মামলা সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।  ইতোমধ্যে তিন মামলায় আনা আপিল নিস্পত্তি হয়েছে এবং জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপিল মামলায় আগামী ১৬ জুন রায় ঘোষণার জন্য ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া আসামি মৃত্যুবরণ করায় দুটি মামলায় আনা আপিল অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে।

আপিলে শুনানির অপেক্ষায় থাকা মামলার আসামিরা হলেন- সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাশেম আলী, মোবারক হোসেন, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, এটিএম আজহারুল ইসলাম, আব্দুস সুবহান ও পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার।

২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দিয়ে প্রথম রায় ঘোষণা করা হয়। পলাতক থাকায় তার মামলায় আপিল করা হয়নি। আত্নসমর্পন বা ধরা পড়ার পরে আইন অনুযায়ী আপিল করার সুযোগ পাবেন কিনা তা সুপ্রিমকোর্ট বিবেচনা করবে। তার পর পর একই বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়।

২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদন্ড দেয়। যা ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর কার্যকর করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের তৃতীয় রায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলেও গতবছর ১৭ সেপ্টেম্বর তার সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদন্ডের আদেশ দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। ২০১৩ সালের ৯ মে চতুর্থ রায়ে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেও কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেয় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। গত ১১ এপ্রিল কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের পঞ্চম রায়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমীর গোলাম আযমকে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই ৯০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি অপেক্ষমান থাকাবস্থায় গতবছর ২৩ অক্টোবর কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। ইতোমধ্যে তার আপিলটি অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে।

একই বছরের ১৭ জুলাই ষষ্ঠ রায়ে জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলের ওপর চলতি মাসের ১৬ তারিখ রায় ঘোষণার জন্য ঠিক করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সপ্তম রায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। একই বছরের ৯ অক্টোবর বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। দন্ড ভোগ করা অবস্থায় ৮৩ বছর বয়সে গতবছর ৩০ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ফলে তার আপিল মামলাটি অকার্যকর ঘোষণা করে আপিল বিভাগ।

বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ’৭১-এর দুই আল-বদর নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। তারা দুজনেই পলাতক রয়েছেন। ফলে তারা আপিলের সুযোগ পাননি। তাদের একজন আমেরিকায় অপরজন বৃটেনে  রয়েছেন।

দশম রায়ে গতবছর ২৯ অক্টোবর জামায়াতের বর্তমান আমীর মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। একাদশ রায়ে গতবছর ২ নভেম্বর জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীকে মৃত্যুদন্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

গতবছর ১৩ নভেম্বর ঘোষিত ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকারকে মৃত্যুদন্ড রায় দেয় ট্রাইব্যুনাল। এটি ছিলো দ্বাদশ রায়। আসামি পলাতক থাকায় আপিলের সূযোগ পাননি। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মোবারক হোসেনকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে গতবছর ২৪ নভেম্বর ঘোষিত রায় ট্রাইব্যুনালে দেয়া ১৩তম রায়।

এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষে আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে গতবছর ২৩ ডিসেম্বর টাইব্যুনাল ১৪ তম রায় ঘোষণা করেছে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিলও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

গতবছর ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে ট্রাইব্যুনাল ১৫তম রায় ঘোষণা করে। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আনা আপিল শুনানির অপেক্ষায় ররেছে। জামায়াতের নায়েবে আমীর আব্দুস সুবহানকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে গত ১৮ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায় ট্রাইব্যুনালের ১৬তম রায়। এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল দায়ের করেছে। এ আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বারকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়ে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত রায় ট্রাইব্যুনালের ১৭তম রায়। আসামি পলাতক থাকায় আপিলের সূযোগ পাননি। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ তার মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আপিল করেছে।

যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। চাপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুকে মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়ে গত ২০ মে ঘোষিত রায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৮তম রায়। আসামিপক্ষ এ রায়ের বিষয়ে আপিল দায়ের করবে বলে জানায়।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম প্রধান অঙ্গিকার ছিলো যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন মহাজোট দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনেই যুদ্ধপরাধীদের বিচারে সর্বসম্মত প্রস্তাব গৃহীত হয়।

এরপর ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল, তদন্তকারী সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিম গঠন করা হয়। প্রথমে ১টি ট্রাইব্যুনালে এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরে এ বিচারকে ত্বরান্বিত করতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরো একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

পৃথক দুটি ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত ১৮ মামলায় ২০ আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছে। বিচারিক কার্যক্রম শেষে ট্রাইব্যুনাল-১এ ৮টি ও ট্রাইব্যুনাল-২ এ ১০টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর এ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনালে নয়টি এবং আপিলে দুটি মামলা নিস্পত্তি হলো।

Leave a Reply