মাহাথির-মুহিদ্দিন বিরোধ তুঙ্গে
মাহাথির-মুহিদ্দিন বিরোধ তুঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুহিদ্দিন টেলিভিশনে প্রথম প্রচারিত বক্তব্যে সোমবার বলেছেন, মাহাথির মোহাম্মদের পদত্যাগের ফলে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তার দাবিকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন মাহাথির। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মালয়েশিয়ার রাজনীতির আকাশ থেকে কালো মেঘ কেটে যায় নি। এখনো মাহাথির-মুহিদ্দিন বিরোধ তুঙ্গে। এ খবর দিয়ে অনলাইন স্ট্রেইট টাইমস লিখেছে, মাহাথির মোহাম্মদের পদত্যাগ ঘটনা রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, মঙ্গলবার তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রোববার মালয়েশিয়ার অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মুহিদ্দিন ইয়াসিন। এরপর দৃশ্যত মাথা ঠাণ্ডা রেখেছিলেন মাহাথির।
অবশেষে দু’দিন পরে মঙ্গলবার ৯৪ বছর বয়সী মাহাথির ফেসবুক ও ব্লগে একটি সংক্ষিপ্ত পোস্ট দেন। রাজা আগংয়ের সামনে তিনি বলেছেন, তার সমর্থকরা তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। মুহিদ্দিন তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই তিনি তার মিত্রদের সমর্থন হারানোর ফলে ২৪শে ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন সোমবার টেলিভিশনে একটি বক্তব্য রাখেন। তার উল্লেখ করে মাহাথির লিখেছেন,‘প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, যখন আমি মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেছি, তখন থেকেই দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের সূচনা হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই কেন আমি পদত্যাগ করতে যাবো? আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় আমাকে সমর্থন দিচ্ছে সরকার দলীয় ও বিরোধী দলীয় কিছু সদস্য। এর মধ্যে রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও আরো কিছু মানুষ। তারা দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি। তাদের সমর্থন নেবো এর কোনো অর্থ থাকতে পারে না।’
ড. মাহাথির তার পোস্টে আরো লিখেছেন, ‘আসলে সত্য হলো, আমি পদত্যাগ করেছি যে কারণে, তা আমি রাজার কাছে বিবৃতিতে বলেছি। আমি বলেছি, আমার সমর্থকদের পক্ষ থেকে আমাকে আর সমর্থন দেয়া হচ্ছে না। আমার সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। ফলে আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আর যোগ্য নই।’
তার দেয়া ঐকমত্যের সরকারের ধারণাও প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাহাথির। তিনি বলেছেন, আমি এমন একটি সরকারের পরিকল্পনা দিয়েছিলাম, যেখানে থাকবেন বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাও। তাতে যোগ দিতে পারবেন দলীয় সদস্যরাও। তারা যোগ দিতে পারবেন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে। দলীয় কোনো এজেন্ডা নিয়ে নয়। তিনি বলেছেন, এই রাজনৈতিক কাহিনী এখনও চলছে। মাহাথির প্রশ্ন রাখেন। বলেন, আমি পদত্যাগ করেছি এসব কারণে। কিন্তু সঙ্কট দীর্ঘায়িত হয়েছে। জানি না এর শেষ কখন হবে?
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সোমবার প্রথম বক্তব্য রাখেন মুহিদ্দিন। এতে তিনি দাবি করেন মাহাথিরের পদত্যাগের ফলে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন তার দল পার্তি প্রিবুমি বারসাতু মালয়েশিয়া (যার প্রতিষ্ঠাতা মাহাথির) শুরুতে ৯৪ বছর বয়সী মাহাথিরকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু ন্যাশনাল প্যালেস থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় দলীয় প্রধানদের আমন্ত্রণ জানান রাজা আগং। তিনি তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী পদে অন্য একজনকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিতে বলেন। এরপরই বারসাতু ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা তার (মুহিদ্দিন) নাম প্রস্তাব করেন। তার ভাষায়, ‘আমার সামনে কি বিকল্প ছিল? আমার কি মাহাথিরকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দেয়া উচিত ছিল, যার সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন ছিল না? অথবা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রার্থিতা গ্রহণ করা উচিত ছিল?’
তাকে বিশ্বাসঘাতক বলে যে মন্তব্য করেছেন মাহাথির তা প্রত্যাখ্যান করে এ কথা বলেন মুহিদ্দিন। তিনি আরো বলেন, ‘যদি আমি মাহাথিরকে সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখতাম, তাহলে রাজনৈতিক সঙ্কট দীর্ঘায়িত হতো। পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করতে হতো এবং একটি আগাম নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে হতো।’