মার্চেই চূড়ান্ত আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি

13/01/2014 9:56 pmViews: 4

 

bnpঢাকাঃ জনসমর্থনকে পুঁজি করে জানুয়ারি শেষ থেকে আস্তে আস্তে কঠোর আন্দোলনের দিকে যাবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। মার্চেই শুরু হবে চূড়ান্ত আন্দোলন।

 

বিশ্ব ইজতেমা, নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম, এ-লেভেল ও-লেভেল পরীক্ষা নিবিঘ্নে করার জন্য বিরোধী দলের কাছে অভিভাবকদের আবেদন এবং বাংলাদেশে টি-২০ বিশ্বকাপ খেলা এসব বিষয়ে সামনে রেখে বিএনপি আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

 

নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে নতুন সরকারকে কিছুটা সময়ও দিতে চায় দলটি। যেকারণে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে নরম কর্মসূচি দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে এবং  বিরোধী দলের পক্ষে গড়ে ওঠা জনমতকে ধরে রাখতে চায়।

 

এ সময়ের মধ্যে সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে রাজি না হয় তাহলে তারা মার্চ মাস থেকে আবারো কঠোর কর্মসূচিতে যাবে।

 

দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সরকারের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ যেভাবে আন্দোলন সংগ্রাম ও নির্বাচনের বিরোধীতা করেছে জনগণের এই সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে চায় বেগম খালেদা জিয়া। একারণে তিনি এ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ঢাকার বেইরে বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা উপজেলা সফর করবেন। ওই সব সমাবেশে বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখবেন বলে জানা গেছে।

 

বেগম জিয়া সমাবেশ থেকে নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিয়ে সব দলের অংশগ্রহণে দেশে ও বিদেশের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারকে আবারো আহ্বান জানাবেন। সরকার যদি এই দাবির প্রতি গুরুত্ব না দেয় তাহলে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে ঢাকা চলো কর্মসুচি ঘোষণা করা হতে পারে। ওই সমাবেশ থেকে সরকারকে আল্টিমেটাম দেওয়া হবে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত হরতাল, অবরোধসহ কঠোর কর্মসুচি দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, তারা নতুন সরকারকে সময় দিতে চায়। পরীক্ষা ও বিশ্ব ইজতেমার কথা বিবেচনায় রেখে হরতাল-অবরোধের মতো বড় কর্মসূচি আপাতত দেওয়া হবে না। তবে সরকার বাধ্য করলে প্রয়োজনে এর মধ্যেও কর্মসূচি দেবে ১৮ দল।

 

তিনি বলেন, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থেকে বিরোধী দল সরে আসেনি। দেশের মানুষসহ বিদেশিরা বিরোধী দলের এই দাবিকে সর্মথন করছে। যার প্রমাণ ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নিবার্চন এবং গঠিত সরকারকে কোনো স্বীকৃতি কিংবা অভিনন্দন না জানানো নির্দলীয় সরকারের দাবিটি এখন পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত একটা দাবিতে পরিণত হয়েছে।

 

তাই এই দাবি আদায়ে ক্রমান্বয়ে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৮ জানুয়ারি ঘিরে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করা হবে বলে জানান তিনি।

 

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক বলেন, ‘একটা দাবি মানাতে সরকারের বিরুদ্ধে এতো র্দীঘ আন্দোলনের প্রয়োজন পড়ে না। জনমতকে উপেক্ষা করে সরকার একটা হাস্যকর একতরফা পাতানো নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। আমাদের বিদেশি বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর পরামর্শ পর্যন্ত তারা কোনো গুরুত্ব না দিয়ে  নির্বাচন করেছে।’

 

তিনি বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন। সেখানে আমরা নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন কর্মসুচি দিয়েছিলাম। সরকার সেসব উপেক্ষা করে নির্বাচন করেছে। একারণে এখন আর ওই কর্মসুচি চালিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। যে কারণে আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করে নতুনভাবে আন্দোলনের পরিকল্পনা করা হবে।

 

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সাধারণ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি গত দুই বছর হরতাল-অবরোধসহ বেশ কিছু কঠোর কর্মসূচি পালন করলেও দৃশ্যত কোনো সফলতা আসেনি। তবে বিএনপির নেতারা মনে করছেন, গত বছর তাদের প্রধান অর্জন জনসমর্থন এই সরকারের বিরুদ্ধে গেছে। পক্ষে আসা জনসর্মথনকে এবার কাজে লাগাবে বিএনপি।

 

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে বাইরে রেখে সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করেছে এবং গত ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করেছে।

 

বিএনপিসহ দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন প্রত্যাখান করে এবং ওই নির্বাচনে তারা অংশ না নিয়ে প্রতিহতের ডাক দেয়। বিরোধী দলগুলো এ সময় লাগাতার  হরতাল, অবরোধের মতো কঠোর কর্মসুচি দেওয়ার পরও সরকার সব বাধা বিপত্তির মুখে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন যেনতেন ভাবে সম্পন্ন করে।

 

তবে নির্বাচন প্রতিহত করতে না পারলেও দেশ ও বিদেশে এই নির্বাচনকে প্রশ্নের সম্মুক্ষীণ করতে পেরেছে ১৮ দলীয় জোট। এমনকি ভোটের হারও হয়েছে অনেক কম।

 

বিএনপি মনে করে, ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের একেবারেই নগণ্য উপস্থিতি প্রমাণ করে দেশের জনগণ সরকারের এই পাতানো নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে। একারণে বিএনপি আন্দোলনের কৌশল পাল্টে নতুন আঙ্গিকে, ভিন্ন ধারায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

Leave a Reply