মার্কিনিদের ভয়াবহ ভাইরাস!
প্রাণঘাতী স্প্যানিশ ফ্লু’র আদলে ভয়াবহ ভাইরাস তৈরি করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। ১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু’তে আক্রান্ত হয়ে আনুমানিক পাঁচ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এদিকে, এ পরীক্ষাকে নিছক পাগলামি হিসেবে অভিহিত করেছেন আতঙ্কিত বিজ্ঞানীরা।
মার্কিন গবেষকরা দাবি করছেন, পাখির শরীরের ভাইরাস মানুষের জন্য কতটা বিপদজনক সে বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্যেই নতুন এ ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে।
এ ভাইরাসটি তৈরি করেছেন মার্কিন উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। বুনো পাখির দেহের একটি বার্ড ফ্লু ভাইরাসে মিউটেশন বা রূপান্তর ঘটিয়ে এই স্প্যানিশ ফ্লু’র আদলে নতুন এ ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে। ফলে বাতাসের মাধ্যমে সহজেই প্রাণীদেহে সংক্রমণ ঘটানোর ক্ষমতা পেয়েছে নতুন এ ভাইরাস।
মার্কিন এ গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইওশিহিরো কাওয়াকা। ‘সেল হোস্ট মাইক্রোব’ নামের জার্নালে এ গবেষণার বিষয়টি তুলে ধরেছেন তিনি। প্রকৃতি থেকে সংগৃহীত বার্ড ফ্লু ভাইরাসের অনেক প্রজাতির বিশ্লেষণ করেছে মার্কিন গবেষক দলটি। বার্ড ফ্লু থেকে ১৯১৮ সালের প্রাণঘাতী ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ ভাইরাসের সঙ্গে মিল আছে এরকম জিন খুঁজে বের করেছেন তারা। এরপর এ সব জিন নিয়ে একটি ভাইরাস তৈরি করেছেন মার্কিন গবেষকরা। নতুন এ ভাইরাসের সঙ্গে স্প্যানিশ ভাইরাসের মাত্র ৩ শতাংশ পার্থক্য রয়েছে।
বুনো পাখির দেহে অবাধে বিচরণ করে বার্ড ফ্লু। এ সব ভাইরাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাঁস-মুরগিসহ অন্যান্য পাখি দেহে পাওয়া যায়। সাধারণভাবে এসব ভাইরাস মানুষের জন্য কোনো হুমকি নয়। অবশ্য মাঝে মধ্যে এ সব ভাইরাসের রূপান্তর ঘটে এবং মানবদেহে সংক্রমণ ঘটায়। এইচ৫এন১ প্রজাতির বার্ড ফ্লু ভাইরাসে এ জাতীয় রূপান্তর ঘটেছে এবং ২০০৩ সাল থেকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে ৩৮৬ ব্যক্তি মারা গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’। ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু’ও পাখি থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।
এদিকে, মার্কিন এ গবেষণার তীব্র সমালোচনা করেছেন ব্রিটিশ রয়্যাল সোসাইটির সাবেক সভাপতি এবং ব্রিটিশ সরকারের বিজ্ঞান-বিষয়ক সাবেক প্রধান উপদেষ্টা লর্ড মে।
তিনি বলেন, মার্কিন গবেষকরা যে তৎপরতা চালাচ্ছেন তা নিছক পাগলামি। পুরো বিষয়টি সীমাহীনভাবে বিপদজনক।
আমেরিকার গবেষকদের এ জাতীয় বিপদজনক গবেষণায় অনেক সময় তহবিলের যোগান দেয় মার্কিন জাতীয় স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট বা এনআইএস। এনআইএস কর্মকর্তাদের সরাসরি ‘অযোগ্য’ বলতেও দ্বিধা করেন নি লর্ড মে।
তিনি বলেছেন, গবেষকরা যা বোঝাবেন তাই বুঝেছেন এনআইএস-এর কর্মকর্তারা। অথচ সরল কথাটি হলো, এ জাতীয় গবেষণা মোটেও চালানো উচিত নয়।
প্যারিসের পাস্তুর ইন্সটিটিউটের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ সাইমন ওয়েন-হবোসন এ গবেষণাকে পাগলামি এবং বোকামি বলে অভিহিত করেছেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণস্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মার্ক লিপসটিস গত মাসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছেন, কড়া নিরাপত্তা বেষ্টিত গবেষণাগার থেকে যদি এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বা উদ্দশ্যমূলকভাবে ছড়িয়ে দেয়া হয় তাতে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ মহামারির প্রকোপ দেখা দেবে। সবচেয়ে নিরাপদ গবেষণাগারেও এ জাতীয় গবেষণা করা উচিত নয় বলে বলে মনে করেন তিনি।