মানুষের অধিকার আদায়ের পথে এটা জয়যাত্রা: মির্জা ফখরুল
সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে ‘এক দফা’ ঘোষণার পর প্রথম কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। গতকাল রাজধানীসহ সকল মহানগর ও জেলায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে দলটি। এদিন ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ঢাকার পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী। সকালে গাবতলীতে শুরু হওয়া পদযাত্রাটি প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে গিয়ে শেষ হয়।
সকালে পদযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটা শুধু পদযাত্রা নয়, এটা জয়যাত্রা। মানুষের অধিকার আদায়ের পথে বিজয়ের জয়যাত্রা। বাংলাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আজকে সারা দেশের শুধু পদযাত্রা নয়, এর আগে সভা হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছি। আমরা অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি। এই যাত্রার মধ্যদিয়ে এক দফা দাবি আদায় করবো।
সরকার প্রধানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে ক্ষমতায় এসেছিলো। এখন জনগণ ক্ষমতায় আসতে চায়। সুতরাং অবিলম্বে পদত্যাগ করো, সংসদ বিলুপ্ত করো, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দাও। নইলে রাজপথেই এর সমাধান হবে। এদেশের মানুষ আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই রৌদ্র, বৃষ্টি, ঝড় সবকিছুকে উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে বিজয়ী হতে হবে আমাদেরকে। আমি সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবীসহ সকলকে আহ্বান জানাচ্ছি দেশকে রক্ষা করতে। দেশের মানুষকে রক্ষা করতে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করতে। এজন্য আমাদের আজকে একজোট হতে হবে।
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের কথা উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, গত সোমবার ঢাকায় নির্বাচন কমিশন উপনির্বাচনের একটা তামাশা করেছে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন অত্যন্ত হেভিওয়েট। তিনি আবার আওয়ামী লীগের থিঙ্কট্যাংকের প্রধান। দেশের সব মানুষ তাকে চেনে। তিনি হচ্ছেন প্রফেসর ড. আরাফাত। প্রতিদ্বন্দ্বী হিরো আলম। ওই নির্বাচনেও ভোট দিতে যায়নি ভোটাররা। ভোটকেন্দ্র খালি। পঙ্গু নির্বাচন কমিশনের হিসাবমতে ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে। আমরা টেলিভিশনে দেখলাম, কোথাও ভোটার নেই। পাঁচ ঘণ্টা পর একটা ভোটার এসেছে, ওকে নিয়ে লাফালাফি কাড়াকাড়ি। ওই ভোটের রেজাল্টের পরে আরাফাত সাহেব আঙ্গুল দেখায়, ভিক্টরি। লজ্জা লজ্জা, লজ্জা।
ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম ওরফে হিরো আলমকে মারধরের সমালোচনা তিনি বলেন, হিরো আলম এদেশে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন। তার সঙ্গে নির্বাচন করতে গিয়ে তাকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে মারধর করা হয়। সাপ যেভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে মারা হয়, তাকে সেভাবে মারা হয়েছে।
পুলিশের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আবার পুলিশ বলে কী, আমরা তো আমাদের কাজ করেছি। ঠিকই করেছেন, একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বীকে যখন মারছে, তখন আপনারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন। আর নির্বাচন কমিশন বলছে, এটা নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। এসব তামাশা করে, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে কোনো লাভ নেই। গত সোমবারের উপনির্বাচনকে তামাশা হিসেবে উল্লেখ করে আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন করবে তারা (সরকার); ২০২৩ সালের শেষে অথবা ২০২৪ সালের প্রথমে। তারাও এক দফা ঘোষণা করেছে শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। আমরাও খুব পরিষ্কার করে বলেছি, এই অবৈধ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।
এ সময় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের ৯৯ শতাংশ ব্যবসায়ী এই সরকারকে বিদায় করতে চান। তারা আজকে এলসি করতে পারছেন না। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের উচ্চ বিল দিয়ে ব্যবসা করতে পারছেন না। ব্যাংকগুলো লুটপাটের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা আজকে ঋণ নিতে পারছেন না।
পদযাত্রাটি গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল মোড় ও মিরপুর-১, মিরপুর-২, ১০ (গোলচত্বর) হয়ে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা (আগারগাঁও), বিজয় সরণি, কাওরান বাজার, এফডিসি, মগবাজার, মালিবাগ, কাকরাইল, নয়াপল্টন (পার্টি অফিস), ফকিরাপুল, মতিঝিল (শাপলা চত্বর), ইত্তেফাক মোড় এবং দয়াগঞ্জ হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পূর্ব ঘোষিত পদযাত্রা ঘিরে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। বিএনপি’র পদযাত্রাকালীন সময়ে পুরো এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ঢাকার পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সভাপতি আমানউল্লাহ আমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, বিএনপি নেতা আব্দুল কাদের ভূঁইয়া, নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সিনিয়র সভাপতি মামুন হাসান, ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহমেদ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি’র সদস্য সচিব আমিনুল হক প্রমুখ।
প্রথম দিনের পদযাত্রা শেষে সমাপনী বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি’র পদযাত্রা দেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আর আওয়ামী লীগের অশান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য দেশটাকে আরও লুটেপুটে খাওয়া। বিশ্বে এত বড় রাজনৈতিক মিছিল, মুক্তির মিছিল কেউ করতে পারে নাই। কারও চোখ রাঙানিতে আমরা ভয় পাই না। বিএনপি’র এ পদযাত্রা আওয়ামী লীগের জন্য শোকযাত্রা। সারা দেশে আমাদের মিছিল হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে। বাংলা কলেজের সামনে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের লোকজন এমন গণধোলাই দিয়েছে পালিয়ে গেছে। যারা গণধোলাই দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ। আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যারা বাধা দিবে তাদের এমন হাল হবে। এদিকে আজ বুধবার আব্দুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পদযাত্রা করবে বিএনপি।