মানবকল্যাণের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিভাবক আল-কোরআন: মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
এই ধরা পৃষ্ঠে মহান আল্লাহতায়ালা মানব জাতির ওপর যত দয়া করেছেন তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়া হলো- মহান প্রতিপালক মানব জাতির প্রতি বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মতো একজন নবী প্রেরণ করেছেন এবং আল-কোরআনের মতো একটি আসমানি কিতাব দান করেছেন। আর এই কোরআন বিশ্ববাসীকে দিয়েছে শান্তির ঠিকানা। আল-কোরআনের ভাষা-বিন্যাস বিশ্ব সাহিত্যের বিস্ময়কর সংযোজন ও এর প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো গ্রন্থ পৃথিবীর বুকে নেই। কোরআনের প্রতিটি শব্দ এমন এক অদৃশ্য চিত্র যা অন্তরকে সতেজ ও সজীবতা প্রদান করে এবং অন্তরের অসংলগ্নতা নিরাময় করে। জ্যোতিময় কিতাব আল-কোরআন চরম অন্ধকার যুগে নাজিল হলেও বিশ্বব্যাপী বাহ্যিক ও আত্দিক জ্যোতির বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছে। পবিত্র কোরআন বিস্ময়কর, বিশ্বজনীন, চিরন্তন, সৎপথের নির্দেশক মহাগ্রন্থের নাম। যেটি পূর্ণাঙ্গরূপে মুখস্থ করেছেন এমন প্রায় চার কোটিরও বেশি কোরআনের হাফেজ বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছেন। এবং উচ্চারণ, বিন্যাস, বাগধারা, পরিভাষা প্রভৃতি সুদীর্ঘ চৌদ্দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সারা পৃথিবীতে সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান রয়েছে। শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি, দার্শনিক, বিজ্ঞানীদের বিস্ময় সৃষ্টি করে দেয় এ কিতাব।
এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের অনন্ত রহস্যসমূহ যে রহস্যের জাল চিহ্নিত করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এটি বিজ্ঞানের অফুরন্ত ভাণ্ডারে সঠিক পথের দিশারী। অসীম প্রভুর মুক্তবুদ্ধিতে বিভাসিত লাউহে মাহফুজ থেকে প্রত্যাগত ভাষা নৈপুণ্য বাক্য বিন্যাসে বিশ্বের চিরবিস্ময়। যে একে সম্মানিত করবে সে নিজে সম্মানিত হবে। এর প্রতিটি আয়াত এক একটি তলোয়ার, যা দিয়ে প্রতিটি বিপদ মুসিবত মোকাবিলা করা সম্ভবপর। শব্দ চয়ন ও বাক্য বিন্যাস মহান আল্লাহ নিজেই করেছেন। তাই তো এর শ্রোতাকে দ্রুত বিমোহিত করে ও প্রভাব বিস্তার করে। ভাষার পাণ্ডিত্য অকল্পনীয়। তাই বড় বড় ভাষা বিজ্ঞানীর মাথা হেঁট হয়ে যায়। বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বিশাল বিজ্ঞান সংস্থা, আইনবিদদের জন্য আইন বিশ্বকোষ এবং বিচার-সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নীতিমালা প্রতিষ্ঠা এর অপূর্ব বৈশিষ্ট্য। আল-কোরআন এমনই এক তুলনাহীন মহাগ্রন্থের নাম, যা সারা বিশ্বে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়েছে অথচ একটি শব্দেরও পরিবর্তন হয়নি। এতে দেওয়ানি, ফৌজদারি, রাজস্ব, কৃষি, শিল্প, ব্যবসা, উপাসনা, ধর্মীয় বিশ্বাস, পারস্পরিক শিষ্টাচার প্রভৃতি বিষয়ে অসংখ্য বিধান উপস্থাপন করে বিশ্বজনীন সংবিধানের একমাত্র দাবিদার।
পবিত্র আল-কোরআন জীবন গ্রন্থ। কেননা এর অভ্যন্তরীণ প্রাণশক্তি কখনো নিঃশেষ হয় না। বিধায়, আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হয়।