মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ ও তাজা গ্রেনেড উদ্ধারে ফাঁস হলো নীলনক্সা

08/10/2013 7:14 pmViews: 21

madrasha-bomb-SM-120131008091626মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে হেফাজতী মাদ্রাসায় গত সোমবারের ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং ঘটনার পর পুলিশী অভিযানে মাদ্রাসার ছাত্রাবাস ও অধ্যক্ষের বাসভবন এলাকা থেকে তাজা হ্যান্ড গ্রেনেডসহ বিস্ফোরক তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধারের ঘটনায় ফাঁস হয়ে গেল আগামী নির্বাচনের আগে দেশজুড়ে নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তার নীলনক্সা। এ ধারণা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সংস্থাসমূহের বিভিন্ন সূত্রের। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি ইতোমধ্যেই সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে অবহিত করেছেন বলে জানানো হয়েছে। পুলিশ কমিশনার সফিকুল ইসলাম সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, এসব বিস্ফোরক দ্রব্য আগামীতে নাশকতা চালানোর জন্য তৈরি হচ্ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পুলিশ সূত্রে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ অক্টোবরের পর দেশে অরাজকতা সৃষ্টির যে রণহুংকার বিরোধী
দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকে বারে বারে উচ্চারিত হচ্ছে চট্টগ্রামের লালখান বাজারের পাহাড়ী চূড়ায় অবস্থিত জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের এ ঘটনাটি নেপথ্য বিষয়টি প্রমাণ করছে। ঘটনার পর র‌্যাব-পুলিশের অভিযানে তাজা গ্রেনেডসহ শতাধিক গ্রেনেড তৈরির কৌটা ও উচ্চ ক্ষমতার এ্যাসিড উদ্ধার হয়েছে। এ ধরনের এ্যাসিড উদ্ধারের ঘটনা এই প্রথম। পিকরিক নামের এ এ্যাসিড দিয়ে ডিনামাইটের মতো উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরণ তৈরি করা যায়। এসব মিলিয়ে প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তাতে দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে এসব তৈরি করা হচ্ছিল অতি গোপনে। এর জন্য মাদ্রাসার বাইরের একজন কারিগরও নিয়ে আসা হয়েছিলÑ যিনি পেশায় একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার বলে পুলিশ উদঘাটন করেছে। তার নাম নুরুন নবী। বিস্ফোরণের নেপথ্যের এসব তথ্য বেরিয়ে আসার পর সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংস্থাকে এলার্ট করা হয়েছে এবং নির্দেশ দেয়া হয়েছে সন্দেহজনক স্পটগুলোতে যখনই প্রয়োজন তখনই অভিযান চালাতে। এই ধরনের নির্দেশনা পেয়ে মঙ্গলবার চট্টগ্রামে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত চন্দনপুরা দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় দুই থানা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ৫ শিবির ক্যাডার। তবে কোন অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া না গেলেও কিছু জিহাদী বই উদ্ধার হয়েছে।
গত সোমবার সকালের দিকে লালখানবাজার এলাকার এ মাদ্রাসায় সৃষ্ট বিস্ফোরণের ঘটনার পর প্রথম পর্যায়ে স্পর্শকাতর স্পট হিসেবে ধরে নিয়ে পুলিশ দ্রুত জোরালো কোন ভূমিকা গ্রহণ করেনি। এর মূল কারণ ছিল ধর্মীয় প্রোপাগা-া থেকে নিজেদের রক্ষা করা। কিন্তু সন্ধ্যার মধ্যেই যখন বিস্ফোরণ ঘটনার আসল রহস্য বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে পাওয়া যায় তখন পুরো মাদ্রাসা এলাকাটি ঘিরে ফেলে দু’শতাধিক পুলিশ ও র‌্যাবের সশস্ত্র সদস্যরা। এর পর শুরু হয় গ্রেফতার ও তল্লাশি অভিযান। অভিযানে একে একে উদ্ধার হয়ে আসে তাজা গ্রেনেড ও বিস্ফোরক তৈরির নানা সরঞ্জাম। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি ইজাহারের বাসভবন অঙ্গন থেকে উদ্ধার হয় ১৮ বোতল উচ্চক্ষমতার বিস্ফোরক তৈরির এ্যাসিড। যা নিয়ে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়। সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে মুফতি ইজাহার ও তার পুত্র হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা হারুন ইজাহারকে গ্রেফতারের জন্য। রাত ১১টা পর্যন্ত গ্রেফতার অভিযান চলার পর তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পাহাড়ী এলাকা ও রাতের অন্ধকারের সুযোগে এরা কোন এক গোপন পথে পালিয়ে গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়।
উল্লেখ্য, মুফতি ইজাহার ১৮দলীয় জোটের শরিক দল ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের শীর্ষ নেতা। নেজামী ইসলাম পার্টির সভাপতি। আর ইসলাম রক্ষার কথিত সেøাগানে নব্য গর্জে উঠা আরেক মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির। এ ছাড়া তিনি স্বঘোষিত আফগান তালেবান যোদ্ধাও। অতিসম্প্রতি এ মাদ্রাসায় গিয়ে অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের কয়েক কর্মকর্তা এসব হেফাজতী নেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠকও করে নানা জিজ্ঞাসার জন্ম দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, অন্য কওমি মাদ্রাসার মতো মুফতি ইজাহার পরিচালিত এই মাদ্রাসায়ও বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ সহযোগিতা আসে। আর সে অর্থে ইসলাম রক্ষার নামে তৈরি হয় জঙ্গী। ছড়িয়ে দেয়া হয় উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনা। ইতোপূর্বেও এ মুফতি ইজাহার ও তার পুত্র হারুন ইজাহার গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু আইনী ফাঁকফোঁকরে এরা বার বার বেরিয়ে আসে। জানা গেছে, গত রবিবার মুফতি ইজাহার ঢাকায় ১৮ দলের একটি বৈঠকে যোগ দিয়ে চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। আসার পরদিনই ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণের এ ঘটনা।
মঙ্গলবার এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিএমপির এডিশনাল কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার জনকণ্ঠকে জানান, তদন্ত কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দুটি মামলায় মুফতি ইজাহার ও তার পুত্রসহ যে ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে তাদের গ্রেফতারের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারের উঁচু মহল থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বিশেষ করে মুফতি ইজাহারকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আওতায় নিয়ে আসতে। সিএমপির আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী ২৪ অক্টোবরের পর দেশে যে লঙ্কাকাণ্ড বাধিয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারি আসছে দফায় দফায় চট্টগ্রামের এই হেফাজতী মাদ্রাসায় বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার ও বিস্ফোরণের ঘটনা প্রমাণ করে সমমনা বিরোধী দলগুলোর ক্যাডার বাহিনী কি ঘটানোর জন্য তৈরি হচ্ছে।
আগামী ১২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে আসবেন নৌবাহিনীর অনুষ্ঠানসহ ফ্লাইওভার উদ্বোধন ও এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর আগ মুহূর্তে লালখান বাজারের এ মাদ্রাসায় সংঘটিত এ ঘটনা এবং তল্লাশি অভিযানে উদ্ধার হয়ে আসা বিস্ফোরক সরঞ্জাম প্রমাণ করে দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বে এবং ইঙ্গিতে ২৪ অক্টোবরের পর কি ঘটনা ঘটানোর নীলনক্সা রচিত হয়েছে। চট্টগ্রামের লালখান বাজারের এ মাদ্রাসার ঘটনাটি দেশজুড়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে যা হচ্ছে তার একটি নমুনা মাত্র বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, ২৪ অক্টোবরের পর বিএনপি তার সমমনা ইসলামী জঙ্গী দল ও সংগঠনসমূহের ক্যাডারদের মাঠে নামিয়ে ইসলাম রক্ষার নামে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে এ ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে সিএমপি সূত্রে ধারণা দেয়া হয়েছে। সিএমপি কমিশনার সফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, সোমবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনার পর ধারণাও করা যায়নি এর অভ্যন্তরে বিস্ফোরক তৈরির একটি কারখানা গড়ে উঠেছে। স্পর্শকাতর হিসেবে মাদ্রাসায় তারা তাৎক্ষণিক অভিযান না চালিয়ে বিস্ফোরণের নেপথ্য ঘটনা বের করার চেষ্টা চালিয়ে যখন দেখা গেল এটি বিস্ফোরণ, তখনই জোরালো অভিযান ও গ্রেফতারের নির্দেশনা পাওয়া যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য এরই ফাঁকে টার্গেট মিস হয়ে যায়। তিনি জানিয়েছেন, তাদের গ্রেফতারের জন্য সর্বাত্মক যে অভিযান শুরু হয়েছে তা চলবে।
মুফতি ইজাহারের যত অপকর্ম ॥ বর্তমান সময়ে মুফতি ইজাহার হেফাজতের নায়েবে আমির হিসেবে পরিচিত পেলেও জঙ্গী নেতা হিসেবে তার কুখ্যাতি বেশ আগে থেকেই। গত কয়েক বছরে বেশকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার নেপথ্যে বেরিয়ে আসে তার নাম। তিনি র‌্যাবের হাতে একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। জামিনে বেরিয়ে আসার পর ফের সক্রিয় ভূমিকায় থাকেন জঙ্গী মদদ ও প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডে। মুফতি ইজাহারের দুই পুত্র মৌলবাদী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তার মধ্যে মুসা বিন ইজাহার হেফাজতে ইসলামের এসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি। আরেক পুত্র হারুন ইজাহার একই সংগঠনের প্রচার সম্পাদক।
মুফতি ইজাহারুল ইসলাম এর আগে ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে গ্রেফতার হয়েছিলেন নিষিদ্ধ সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে। তাকে গ্রেফতার দেখানও হয় ডা. আজিজুর রহমান অপহরণের ঘটনায়। ডা. আজিজ তার খুলনায় অবস্থানকালে জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিলেন বলেই অপহৃত হয়েছিলেন।
১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় কবি শামসুর রাহমানের প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগে যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তারাও প্রশিক্ষিত হয়েছিলেন মুফতি ইজাহার পরিচালিত মাদ্রাসায়। ২০১০ সালে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল মুফতি ইজাহারের পুত্র হারুন ইজাহার ও তার দুই সহযোগীকে। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়। তারা ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। মুফতি ইজাহারের পুত্র হারুন ইজাহারও বর্তমানে জামিনে।
লস্কর-ই-তৈয়বা কানেকশন ॥ অভিযোগ রয়েছে, মুফতি ইজাহার ও তার সহযোগীদের রয়েছে ভারতের জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার কানেকশন। উগ্রবাদী এ গ্রুপটির যোগাযোগ রয়েছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী রোহিঙ্গাদের একটি অংশের সঙ্গেও। ভারতের সীমান্তবর্তী ডাউকি এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া লস্কর-ই-তৈয়বার দুই জঙ্গীটি নাজের ওরফে নাজের পারবন এবং শফিক ওরফে শাহাফাজ শামসুদ্দিনকে ভারতীয় পুলিশের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে এ তথ্য। চট্টগ্রামের লালখানবাজার মাদ্রাসার সঙ্গে জঙ্গীবাদী ওই গ্রুপটির ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ। জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সঙ্গে লালখানবাজার মাদ্রাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গী নেতাদের যোগাযোগ যে ছিল তা তাদের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় পুলিশ। কিন্তু ওইসব ঘটনায় এ পর্যন্ত মুফতি ইজাহারসহ সংশ্লিষ্ট কেউ কোন শাস্তি পায়নি। যে কারণে প্রতিনিয়ত তাদের উগ্রতা এবং নাশকতামূলক কর্মকা- বেড়ে যাচ্ছিল। সর্বশেষ তার মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের ঘটনার পর এ চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে তাতে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই বিস্মিত। ধারণাও করতে পারেনি ধর্মীয় ব্যানারে থেকে মাদ্রাসা অভ্যন্তরে বোমা তৈরির এমন কারখানা গড়ে উঠতে পারে।
কারিগর নুরুন নবী ॥ সোমবার বিস্ফোরণের পর মাদ্রাসায় আহত হয়ে যে ৫ জন সকলের নজর এড়িয়ে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল তাদের মধ্যে নুরুন নবী অন্যতম। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। মঙ্গলবার পুলিশ কমিশনার সফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, নুরুন নবী পেশায় একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মরত। চট্টগ্রাম পলিটেকনিক থেকে সে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছে। মুফতি ইজাহারের সাঙ্গাপাঙ্গরা তাকে মাদ্রাসায় এনে বোমা তৈরির পাশাপাশি ট্রেনিংও গ্রহণ করছিল।
১৮ বোতল এ্যাসিড ॥ মুফতি ইজাহারের বাড়ির আঙ্গিনা থেকে যে ১৮ বোতল এ্যাসিড উদ্ধার করা হয়েছে এর ব্র্যান্ড নাম হচ্ছে ‘পিকরিক’। পুলিশের বিশেষজ্ঞ টিমের পক্ষ থেকে অভিমত দেয়া হয়েছে, এ এ্যাসিড দিয়ে ডিনামাইটের মতো শক্তিশালী বিস্ফোরক তৈরি করা যায়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, আগে কখনও এ ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধার হয়নি। এ এ্যাসিড সাধারণ দাহ্য পদার্থকে বহু গুণে জ্বালাতে সাহায্য করে। এ ধরনের এ্যাসিড কোন দেশ থেকে এবং কোন পথে আমদানি হয়ে এসেছে, না চোরা পথে এসেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিএমপির এডিশনাল কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার।
ক্ষোভের আগুনে এলাকাবাসী ॥ লালখানবাজার এলাকার পাহাড়ী চূড়ায় সুরক্ষিত মুফতি ইজাহারের এই মাদ্রাসা, যা লালখানবাজার মাদ্রাসা নামে মানুষের কাছে পরিচিতÑ এর কর্মকা- নিয়ে জনমনে দীর্ঘদিন থেকে সন্দেহ ঘনীভূত হয়ে আছে। সুরক্ষিত এ মাদ্রাসা অভ্যন্তরে সাধারণ মানুষের প্রবেশের কোন অধিকার নেই। অথচ বিভিন্ন সময়ে বিদেশী লোকজনের আনাগোনাও লক্ষ্য করেছে এলাকাবাসী। এই পাহাড়ের পাদদেশ সংলগ্ন বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে সিএমপির ফায়ারিং রেঞ্জ এবং সিআইডির চট্টগ্রাম জোন কার্যালয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ স্পটের পাশের পাহাড়ের চূড়ান্ত মুফতি ইজাহারের জঙ্গী কর্মকা- তাদের নজরে আসেনিÑ এ কথা মানতে নারাজ এলাকার মানুষ। কিন্তু পুলিশের কোন এ্যাকশন না থাকায় দিনে দিনে ক্ষোভ বেড়েছে জনমনে। কিন্তু তাদের করার কিছুই ছিল না। সোমাবর মাদ্রাসা অভ্যন্তরে বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনার পর ক্ষোভ এমনভাবে বেড়েছে যে, যে কোন মুহূর্তে সাধারণ মানুষ মাদ্রাসায় হামলা চালাতে পারে। ফলে সোমবার থেকেই বলবৎ পুলিশ সদস্যদের মাদ্রাসা গেট সম্মুখে রাখা হয়েছে।
৫ জনের রিমান্ডের আবেদন ॥ সোমবার মাদ্রাসা থেকে সর্বমোট গ্রেফতার হয়েছে ৯ জন। এর মধ্যে আহতাবস্থায় ছিল ৪ জন। তার মধ্যে সারা শরীর ঝলসে যাওয়া মোঃ হাবিব মঙ্গলবার সকালে চমেক হাসপাতালে মারা গেছে। আহতরা ছাড়া যে ৫ জনকে মাদ্রাসা থেকে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয় তাদের ৭ দিনের রিমান্ডে আনার জন্য খুলশী থানা পুলিশ আদালতে আবেদন করেছে। এর শুনানি হবে আজ বুধবার।
জামায়াতী মাদ্রাসায় অভিযান ॥ সোমবারের হেফাজতী মাদ্রাসায় বিস্ফোরণের ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকেলে চন্দনপুরায় অবস্থিত জামায়াত নিয়ন্ত্রিত দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা শিবির ক্যাডার। এর মধ্যে মিজানুর রহমান নামের শিবির ক্যাডার চট্টগ্রামে ইতোপূর্বে সংঘটিত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনার আসামি। যে বিস্ফোরণে অন্তু বড়ুয়া নামে এক স্কুলছাত্র চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল।
জনমনে প্রশ্ন ॥ লালখানবাজার মাদ্রাসায় সোমবার ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটনার পর জনমনে বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। প্রথমত, শহরের কেন্দ্রস্থলে সিএমপি পুলিশ লাইন সংলগ্ন পাহাড়ের চূড়ায় একটি মাদ্রাসায় বিস্ফোরক তৈরির কারখানা কিভাবে গড়ে উঠল। বিস্ফোরণের পর পুলিশসহ সকলের টনক নড়েছে। হয়েছে মামলা। অভিযান চলছে মূল হোতাদের গ্রেফতারের জন্য। কিন্তু এ ধরনের ছোট বড় মাদ্রাসা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে।

Leave a Reply