মাদকের বিরুদ্ধে ইসলামে হুঁশিয়ারি

15/08/2018 8:57 pmViews: 62

মাদকের বিরুদ্ধে ইসলামে হুঁশিয়ারি

মাদকের বিরুদ্ধে ইসলামে হুঁশিয়ারি

 ‘হে ঈমানদাররা! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ধারণ শয়তানের অপবিত্র কর্ম। অতএব, তোমরা এসব থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। তবু কি তোমরা তা থেকে নিবৃত্ত হবে না?’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০-৯১)।

মদের ব্যাপারে এটি কোরআনের সর্বশেষ চূড়ান্ত আয়াত। এর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত মদ চিরতরে হারাম করা হয়েছে। আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর মদিনায় এ পরিমাণ মদ নিক্ষিপ্ত হয়েছিল যে পথঘাট ছিল বৃষ্টির পানির মতো সিক্ত। মদের মটকাগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। যেসব পাত্রে মদ তৈরি করা হতো, নবীজি (সা.) সেসব পাত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেন। এমনকি বাইরের দেশ থেকে কোনো কাফেলা বা প্রতিনিধিদল মদিনায় এলে তাদেরও ওই সব পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করে দিতেন।

মদপান থেকে মানুষকে বিরত রাখতে অসংখ্য হাদিসে নবীজি (সা.) এর ভয়াবহ পরিণতির কথা ব্যক্ত করেছেন। একটি হাদিসে তিনি বলেন, ‘শরাব ও ঈমান একত্রিত হতে পারে না। অর্থাৎ মদপান অবস্থায় মানুষের ঈমান থাকে না।’ (নাসায়ি শরিফ, হাদিস : ৭১২৬)।

মদপান মূর্তিপূজা সমতুল্য অপরাধ। এ ব্যপারে আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিয়মিত মদ্যপানকারী মূর্তিপূজারির মতো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৭৬)

আরেকটি হাদিসে এসেছে, ‘তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ কিয়ামতের দিন ভ্রুক্ষেপ করবেন না। তারা হচ্ছে-মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, নিয়মিত মদপানকারী এবং যে ব্যক্তি দান করে তা বলে বেড়ায়।’ (মুস্তাদরাক, হাদিস : ৭২৩৫)

মাদকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণির লোকের প্রতি নবীজি (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। তারা হচ্ছে : ১. যে মদ নিংড়ায়, ২. প্রস্তুতকারক, ৩. পানকারী, ৪. পরিবেশনকারী, ৫. আমদানিকারক, ৬. যার জন্য আমদানি করা হয়, ৭. বিক্রেতা, ৮. ক্রেতা, ৯. সরবরাহকারী, ১০. লভ্যাংশ ভোগকারী। (আবু দাউদ) মদের অপকর্মগুলো নবীজি (সা.) সংক্ষিপ্ত কথায় ব্যক্ত করেছেন এভাবে-‘আলখামরু উম্মুল খাবায়িসি’-অর্থাৎ ‘মদ হচ্ছে সব পাপের জননী।’ মদ সব জঘন্য অপরাধের মূল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দৈনিক পত্রিকাগুলোয় শিরোনাম হচ্ছে-‘মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে মা খুন’, ‘মাদকের টাকার জন্য বাবাকে ছুরিকাঘাত’, ‘নেশাখোর স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন’, ‘নেশার টাকা জোগাড় করতে না পারায় শিশুসন্তান বিক্রি’ ইত্যাদি।

বর্তমানে বেশির ভাগ খুন-ধর্ষণের পেছনে রয়েছে মাদকের নেশা। শরাবখানাগুলো ব্যভিচারের আখড়া। জনৈক জার্মান ডাক্তার বলেছেন, ‘যদি অর্ধেক শরাবখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি, দেশের অর্ধেক হাসপাতাল ও জেলখানা আপনা থেকেই অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে।’ মাদকের বহুমুখী অপরাধের কারণেই সম্প্রতি মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন। এটি প্রশংসাযোগ্য। আবার উদ্বেগেরও বিষয়। কারণ, ক্ষমতা ও টাকার হাতবদলে বদলে যায় অনেক কিছু। প্রকৃত অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাওয়া এবং নিরপরাধ লোক হয়রানির শিকার হওয়াই উদ্বেগের কারণ। সহিহ বুখারির বর্ণনায় রয়েছে, ‘একবার মাখজুমিয়া গোত্রের জনৈক মহিলাকে চুরির অপরাধে নবীজি (সা.) হাত কর্তনের নির্দেশ দেন। সেই মহিলা ধনী ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের হওয়ার কারণে তার শাস্তি রহিত করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আবেদন করা হয়। তাতে তিনি অগ্নিশর্মা হয়ে বলেন, ‘তোমাদের আগের জাতি এ কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে যে তাদের মধ্যে কোনো সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করলে তার শাস্তি রহিত করা হতো। আর দুর্বল, অসহায় লোকের বেলায় শাস্তি কার্যকর করা হতো। শোনো, মুহাম্মদের মেয়ে ফাতেমাও যদি চুরি করত, আমি তার হাত কেটে দিতাম।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস : ৩৪৭৫)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মদপান করে তাকে বেত্রাঘাত করো। আবার পান করলে আবারও বেত্রাঘাত করো। আবার পান করলে আবারও বেত্রাঘাত করো। এর পরও পান করলে এবারও বেত্রাঘাত করো। তার পরও যদি পান করে, তাহলে হত্যা করো।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৩৬৯০) এখানে যদিও চতুর্থবারের পর মদপান করার অপরাধে হত্যা করার কথা রয়েছে; কিন্তু অন্য আরেকটি হাদিস দ্বারা রহিত হয়ে গেছে। সেটি হচ্ছে, জনৈক মদ্যপকে নবীজি (সা.)-এর কাছে ধরে আনা হলে তিনি তাকে বেত্রাঘাত করেন। হত্যা করেননি। অথচ সে লোক এর আগে চারবার মদ পান করেছিল। তাই মদপানকারীকে হত্যা না করার ব্যাপারে সব আলেমের ঐকমত্য রয়েছে। নবীজি মদপানকারীকে কখনো বেত্রাঘাত করেছেন, কখনো জুতাপেটা করেছেন। হজরত ওমর ফারুক (রা.)-এর জমানায় মদপানকারীকে ৮০টি বেত্রাঘাত করার ফয়সালা হয়। কোনো সাহাবি এর বিরোধিতা করেননি।

মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে আমাদের সমাজকে বাঁচাতে শুধু মাদক ব্যবসায়ী নয়, মাদকসেবীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালাতে হবে। তাদের মধ্যে আল্লাহভীতি তৈরি ও ধর্মীয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত করাতে হবে। শুধু ইয়াবা নয়, নেশাজাতীয় সব দ্রব্যের উৎপাদন ও বেচাকেনা নিষিদ্ধ করতে হবে।

Leave a Reply