মন্দা বাজারেও ‘হল্টেড’ ১৬ কোম্পানি

22/09/2013 5:28 pmViews: 24

বিশেষ প্রতিনিধি: কিছুটা মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে দেশের শেয়ারবা51ef79a50e469-dse3জারে। টানা চার দিন ধরে সূচকের পতন লক্ষ করা যাচ্ছে। আজ রোববারও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতন অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে লেনদেন হওয়া অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দামও কমেছে। এর মধ্যেও তালিকাভুক্ত ১৬টি কোম্পানি ছিল আজ ‘হল্টেড’। এক দিনে সর্বোচ্চ দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো হল্টেড তথা লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সম্প্রতি বেশ কিছু স্বল্প মূলধনি এবং অপেক্ষাকৃত দুর্বল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী (গ্যাম্বলার) গুজব ছড়িয়ে এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব দুর্বল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া অসুস্থ বাজারের লক্ষণ বলেও মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, আজ হল্টেড হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশ গার্মেন্টস, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ও ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক। প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া রহিমা ফুডের ৯ দশমিক ৯৬, প্রাইম টেক্সটাইলের ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপারের ৯ দশমিক ৯৩, বিডি অটোকারের ৯ দশমিক ৯১, লিগাসি ফুটওয়্যারের ৯ দশমিক ৮৭, মুন্নু সিরামিকসের ৯ দশমিক ৮১, ইনটেক অনলাইনের ৯ দশমিক ৭৭ এবং স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকসের শেয়ারের দাম ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে হল্টেড হয়ে যায়।

এ ছাড়া নর্দার্ন ইনস্যুরেন্স, সাফকো স্পিনিং, সোনারগাঁ ইনস্যুরেন্স, মুন্নু স্টাফলার, জেএমআই সিরিঞ্জও দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক  বলেন, সম্প্রতি ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের দাম না বেড়ে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারের দাম বাড়ার বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। এটা বাজারের জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়। এটা বাজারের জন্য খারাপ, সরকারের জন্যও খারাপ।

আবদুর রাজ্জাক আরও বলেন, ‘গ্যাম্বলাররা’ গুজব ছড়িয়ে দুর্বল মৌলভিত্তির এসব কোম্পানির দাম বাড়াচ্ছেন। আর বিনিয়োগকারীরা তাঁদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এতে তাঁদের ক্ষতিতে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের শাস্তির দাবি জানান বিনিয়োগকারীদের এই নেতা। তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত আগেভাগেই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া।

এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, অল্প এবং দুর্বল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার বিষয়টি মোটেও সুস্থ বাজারের লক্ষণ নয়। এটা অসুস্থ বাজারের লক্ষণ। তিনি বলেন, অল্প মূলধনের কোম্পানি গ্যাম্বলারদের টার্গেটে থাকে। কেননা এসব কোম্পানি নিয়ে তাঁরা সহজে ‘জুয়া’ খেলতে পারেন। আর তাঁদের ফাঁদে পা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ বিনিয়োগকারী। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি সবশেষে এসব কোম্পানিতে ঢুকবেন, তিনিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
আবু আহমেদ বলেন, ‘জুয়াড়িরা’ বাজারে থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। তবে বিনিয়োগকারীদের উচিত তাঁদের থেকে দূরে থাকা।

ডিএসইর সাবেক সভাপতি মো. শাকিল রিজভী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, যেসব কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা কম, সেগুলো নিয়ে কারসাজি করা সহজ হয়। আর তাই গ্যাম্বলাররা সাধারণত এসব কোম্পানিই বেছে নেন। গ্যাম্বলাররা বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়িয়ে থাকেন।
তবে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে কোম্পানি কিংবা কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা জড়িত কি না, তা দেখার বিষয়। এ ছাড়া কোনো সিন্ডিকেট বা বড় বিনিয়োগকারী এটা করছেন কি না, তা-ও দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।

শকিল রিজভী আরও বলেন, বাজারে বিভিন্ন গুজব থাকবে, গ্যাম্বলাররা শেয়ারের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটতে চাইবেন। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হতে হবে। অনেক বিনিয়োগকারী অল্প সময়ে বেশি লাভবান হওয়ার আশায় এসব কোম্পানিতে ঢোকেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই বিনিয়োগকারীদের এসব বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন ডিএসইর সাবেক এই সভাপতি।

এ দিকে বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, আজ ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক ৬০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪০৩৬ পয়েন্টে। আজ ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৯১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৬টিরই দরপতন হয়েছে। বেড়েছে ৭৩টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।

Leave a Reply