মনপুরায় মাঠ দখলে রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি আ’লীগ, সংঘাত এড়িয়ে নতুন ধারার রাজনীতির অঙ্গীকার বি.এন.পি’র
মোঃ ছালাহউদ্দিন,মনপুরা প্রতিনিধি ॥
মহাজোট সরকারের ক্ষমতার বর্তমান মেয়াদের শেষ সময়ে এসে মাঠ তাদের দখলেই রাখতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আ’লীগ। এজন্য সভা করে মিছিল সমাবেশসহ ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তারা। অপরদিকে অতীত ক্ষমতার আমলের নানানমূখী ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে জনগনের জন্য যে রাজনীতি তাকে লক্ষ করে সংঘাতের পথ এড়িয়ে নতুন ধারার রাজনীতির অঙ্গীকার নিয়ে কৌশলেই সামনে হাটছে বি.এন.পি।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের ক্ষমতার তিন মাস আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ থাকায় গত ২৪ অক্টোবর ছিল এ সরকারের শেষ দিন। এজন্য ২৫ অক্টোবরকে সামনে রেখে বিরোধীদল ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেয়। এরই মধ্যে বি.এন.পি’র কেন্দ্রীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকা দা,কুড়াল নিয়ে মাঠে নামার ঘোষনা দিলে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠে। এ ঘোষনার সাথে সাথে রাজধানীসহ সারাদেশে সাধারন মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠার পাশাপাশি জনমনে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। সবার নজর থাকে ২৫ অক্টোবরের দিকে। কি হতে পারে ঐ দিন তা নিয়ে নানান জনের মতামতের শেষ ছিলনা। কেউ মনে করে আরেকটি ২৮ অক্টোবরের ঘটনা হবেনাতো। সরকার পূর্ব থেকে সতর্ক থাকায় আর পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি বি.জি.বি মোতায়েন করে সজাগ থাকায় রাজধানীতে তেমন কোন বড় ধরনের ঘটনার জন্ম দেয়নি। এদিকে ২৫ অক্টোবরকে কেন্দ্র করে সারা দেেেশর ন্যায় ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরায়ও আ’লীগ ও ১৮ দলীয় জোটের নের্তৃবৃন্দের মধ্যে ছিল টানটান উত্তেজনা। ঐদিন কিধরনের কর্মসূচী থাকে উভয় গ্রুপের কাছ থেকে এনিয়ে সাধারনের মধ্যে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার অন্ত ছিল না।
অবশেষে সাধারন মানুষের মনের আতংক দূর করতে সংঘাত এড়িয়ে আগে এগিয়ে আসে বি.এন.পি। তারা ৪/৫ দিন আগে থেকেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে বৈঠক করে সংঘাত এড়ানোর পাশাপাশি জনগন এবং বাজার ব্যবসায়ীদের জানমালের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ২৫ অক্টোবর কোন কর্মসূচী পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে তা প্রশাসনকে অবহিত করেন। খোজ নিয়ে বি.এন.পি’র একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, মনপুরা একটি বিচ্ছিন্ন এবং ছোট দ্বীপ। এখানকার মানুষ সহজ সরল। এখানকার বেশীরভাগ মানুষের প্রধান পেশা মাছ ধরা আর ব্যবসা বানিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করা। উভয় গ্রুপ থেকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী আসলে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে দলীয় নেতাকর্মীদের চেয়ে সাধারন মানুষ এবং বাজার ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হবে। বিগত বি.এন.পি’র ক্ষমতার শেষ আমলে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী থাকায় আ’লীগ-বি.এন.পি এবং পুলিশের মধ্যে ত্রিমূখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে করে বি.এন.পি’র ইমেজই বেশী নষ্ট হয়েছে বলে তারা মনে করেন। এজন্য অতীত ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আর সে ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চায়না বলে তারা জানান। বিষয়টি উপজেলা শহরের প্রধান বাজার হাজীর হাট বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সম্পাদক মোঃ মহিউদ্দিনকে বি.এন.পি অফিসে ডেকে অবহিত করেন। তিনি বি.এন.পি’র এহেন ইতিবাচক মনোভাবকে স্বাগত জানান। এধারনাগুলো গত কয়েকদিন যাবত বি.এন.পি’র দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ব্রীফ করছেন সিনিয়র নের্তৃবৃন্দ। এদিকে বি.এন.পি’র অন্য কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, আমরা কোন ধরনের সংঘাতের রাজনীতি ভবিষ্যতে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের এ উদারতাকে দূর্বলতা ভেবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আগ বাড়িয়ে এসে মাথায় বাড়ি দিতে চায় তবে সেক্ষেত্রে হিসাব নিকাশ পাল্টে যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেন।
এদিকে গত ২৫ অক্টোবর বাদ মাগরিব যুবলীগ-ছাত্রলীগের নের্তৃত্বে একটি মিছিল কয়েকবার উপজেলা শহরের প্রধান প্রধান শহর প্রদক্ষিন করে। মিছিলটি বি.এন.পি’র অফিসের সামনে দিয়ে প্রদক্ষিন করলে সাধারন মানুষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। এসময় বি.এন.পি’র নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে চুপচাপ বসে থাকায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পুলিশও বি.এন.পি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়েছেন ভাল ভূমিকা। ঐদিনের উদ্বেগ উৎকন্ঠা কাটলেও বি.এন.পি’র সকল ধরনের কর্মসূচীর পাল্টা জানান দিতে উপজেলা আ’লীগ গত ২৬ অক্টোবর দলীয় কার্যালয়ে এক জরুরী সভায় মিলিত হয়। সভায় উপজেলা আ’লীগ ও অংগ সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বি.এনপি কোন কর্মসূচী দিলে তারাও মিছিল শোডাউন করে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নজির আহমেদ মিয়া বলেন, আমরা এর মধ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে একটি সভা করেছি। দলকে তৃনমূল পর্যায়ে চাঙ্গা রাখতে প্রাথমিকভাবে বড় আকারের মিছিল শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো কর্মসূচীর তারিখ ঠিক হয়নি বলে তিনি জানান।
এব্যাপারে উপজেলা বি.এন.পি’র আহবায়ক আলহাজ্ব শামস উদ্দিন বাচ্চু চৌধূরী বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে বি.এন.পি’র কর্মসূচী চলছে। আমরা ইচ্ছা করলে এখানেও পালন করতে পারি। কিন্তু এলাকাটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা, এখানে সংঘাত সংঘর্ষ মানায়না। অতীতের রাজনীতির ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশবাসীকে আমরা একটি নতুন ধারার রাজনীতি উপহার দিতে চাই। আমাদের এ উদারতাকে সকল দলের সাধুবাদ জানানো উচিত। এজন্য সকলের সহযোগীতা কামনা করেনন তিনি।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে পুলিশ সুত্রে জানা যায়। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবেনা বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ গাজী সাহিদুর রহমান।