মনপুরায় বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাসের নির্ধারিত স্থান নদী গর্ভে বিলীন
মোঃ ছালাহউদ্দিন ,মনপুরা : স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জীবদ্দশায় মনপুরা উপজেলায় তার জন্য চিন্তানিবাসের স্থাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কাজও শুরু হয়েছিল কিছুদুর । কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেই স্বপ্ন আর বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি । চিন্তানিবাসের জন্য নির্ধারিত স্মৃতিময় স্থানটি আজ নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। শুধু মানুষের মুখে মুখে রয়ে গেছে সেই ইতিহাস। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলো জাতির জনকের স্বপ্নের সেই স্মৃতিময় স্থানটি সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্ঠি আকর্ষণ করে। জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য জন নেত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীতা কামনা করছেন মনপুরা উপজেলা আওয়ামীলীগ। অবশেষে বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাসের স্বপ্ন পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন। এজন্য দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মনপুরায় এসে ঘুরে গেছেন। চিন্তানিবাস স্থাপিত হলে বিচ্ছিন্ন অথচ সম্ভবনাময় এই রুপালী দ্বীপটির গুরুত্ব বহুলাংশে বেড়ে যাবে। ফলে এটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার তালিকায় আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭০ সালের ঘুর্নিঝড়ে ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরায় প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি হয়। হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। মুহুর্তের মধ্যে নিঃস্ব হয়ে যায় সব। এখানকার মানুষগুলোর জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে দেশী-বিদেশী ত্রান আসতে থাকে মনপুরায়। তখন বঙ্গবন্ধু ছিলেন উজ্জলতম রাজনীতিবিদ। তিনি মনপুরার মানুষের দুদর্শার কথা শুনে বিপুল পরিমান ত্রান সামগ্রী নিয়ে চলে আসেন। এ সময় তার সফর সঙ্গী ছিলেন তৎকালীন ছাত্র নেতা তোফায়েল আহম্মদ,আঃ রাজ্জাক। নিজ হাতে বিতরণও করেন বেশ কিছু ত্রাণ সামগ্রী। এরই মধ্যে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই দ্বীপটির অনেকাংশে ঘুরে ঘুরে দেখেন বঙ্গবন্ধু। আর এ দ্বীপের ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত হন তিনি । তখন এখানকার মানুষের ছিল গোলা ভরা ধান ,গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ। চারিদিকে ছিল সবুজের সমারোহ। দ্বীপের রন্দ্রে রন্দ্রে ছিল নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলা। এই সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে গেলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। তিনি মনে করেন এই রাজনৈতিক জীবনে একটু স্বস্তি আনতে মাঝে মাঝে কোথাও গিয়ে অবকাশ যাপনের প্রয়োজন রয়েছে। সাথে সাথে সিদ্বান্ত নিলেন মনপুরায় হবে তার সেই অবকাশ যাপন কেন্দ্র। এর নাম দেওয়া হলো “বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস”। স্বাধীনতার পর তিনি পুনরায় লোকজন পাঠালেন কাজ শুরু করার জন্য। এ জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়।কাজের ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে মাটির কাটার কাজ শেষ করে ইট গাথার কাজ শুরু হয়।চলতে চলতে কাজ একসময় বন্ধ হয়ে যায়। সেই যে বন্ধ হয়ে যাওয়া আর কখনো শুরু হওয়ার বিষয়টি কেউ মাথায় আনেনি। সেই চিন্তানিবাসের নির্ধারিত স্থান মনপুরা ইউনিয়নের আন্দিড় পাড় গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে গত বছর। আজ ৪২ বছর পর নতুন করে বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস স্থাপনের স্বপ্ন পুরনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন । এ ব্যাপারে ২০১২ সালের ১১ই মার্চ বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ম্যানেজার(পল্যানিং)মোঃ মোয়াজ্জেম হেসেন ও এক্রিকিউটিব অফিসার (প:নিং)মোঃ আক্কাস আলীর সমন্বয়ে দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মনপুরায় এসে ঘুরে গেছেন। তারা নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়া চিন্তানিবাসের স্থান এবং নতুন করে কোথায় এটি নির্মান করা যায় সেসব স্থান ঘুরে ঘুরে দেখেন। তাদের রিপোর্টের উপরেই নির্ভর করছে মনপুরায় বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস স্থাপনের স্বপ্ন পুরনের বহুলাংশ । উল্যেখ্য ১৯৯১ সনের ভোলা ৪ (চরফ্যাসন-মনপুরা) আসনের উপনির্বাচনে বর্তমান এম.পি আলহাজ্ব আবদুল্যাহ আলইসলাম জ্যাকবের পিতা মরহুম অধ্যক্ষ মিয়া মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের উপনির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মনপুরা এসেছেন। হাজির হাট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠের জনসভায় তিনি ঘোষনা করেন তার দল ক্ষমতায় গেলে তার বাবার সেই স্বপ্ন পুরনের উদ্যোগ নিবেন বলে আশ্বাস দেন। এ ব্যাপারে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগ আহবায়ক কমিটির সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ লতিফ ভুইয়া ও বলেন,বঙ্গবন্ধু মনপুরায় আসার পর তিনি এখানকার প্রেমে পড়ে যান এবং এখানে একটি চিন্তানিবাসের ঘোষণা দেন। স্বাধীনতার পর কাজ শুরু হলেও নানা কারণে তা সফলতা পায়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ আহবায়ক আলহাজ্জ্ব নজির আহম্ম্দ মিয়া বলেন, বর্তমান সরকার পুনরায় বঙ্গবন্ধুর চিন্তানিবাস স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের বার্তা। চিন্তানিবাস স্থাপিত হলে দেশের অন্যান্য স্থানের কাছে মনপুরার গুরুত্ব বেড়ে যাবে। ফলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে মনপুরা নতুন মাত্রা যোগ হবে। এব্যাপারে ভোলা ৪,চরফ্যাশন মনপুরা আসনের সাংসদ আলহাজ্ব আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, মনপুরা বঙ্গবন্ধর চিন্তানিবাস (পর্যটন কেন্দ্র)স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করছি দ্রুত কাজটি করতে পারব।