ভ্যাট আইনের বিধি সংশোধন ইস্যুতে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা
এনবিআর চেয়ারম্যানকে এফবিসিসিআই সভাপতির চিঠি ‘লুকোচুরি করে কিছু করা যাবে না’
নতুন অর্থাৎ ২০১২ সালের ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইন দুই বছরের জন্য স্থগিত হওয়ার পর বিদ্যমান আইনের কিছু বিধি সংশোধন ইস্যুতে ব্যবসায়ীদের উপেক্ষা করার অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিদ্যমান ১৯৯১ সালের আইনের বিধি সংশোধন করার কথা থাকলেও এনবিআর মূলত নতুন আইনের বিধি-বিধানই প্রায় হুবহু সন্নিবেশ করেছে সংশোধনীতে। ওই বিধির সংশোধনীর প্রস্তাবের জন্য পাঠানো হয় এফবিসিসিআইতে। এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সম্প্রতি এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে এ ইস্যুটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে তিনি বলেন, এফবিসিসিআই তথা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সঙ্গে এনবিআরের মধ্যে আস্থার স্থানে ‘ফাটল’ ধরেছে। চিঠিতে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ভ্যাট বিধিমালা সংশোধনীর ওপর মতামত চাওয়া হলেও সংশোধনীর খসড়া এফবিসিসিআইয়ের কাছে পাঠানো হয়নি। যে খসড়া প্রস্তুত করতে এনবিআরের প্রায় চার মাস সময় লেগেছে, তা অংশীজনকে সরবরাহ না করে একটি সভায় কেন এনবিআর চূড়ান্ত করতে চায় তা আমাদের বোধগম্য নয়। চিঠিতে এনবিআরের ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের আওতায় নতুন করে নিবন্ধন নেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ও নতুন আইনের ক্ষেত্রে অন্তত ১৩টি ক্ষেত্রে সমস্যা তুলে ধরা হয়। এ অবস্থায় বিধিমালা চূড়ান্ত না করে বরং তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়।
বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত নতুন ভ্যাট আইনটি গত জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে তা দুই বছরের জন্য স্থগিত করে দেয়া হয়। অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুলাই পর্যন্ত ১৯৯১ সালের আইনের ভিত্তিতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেয়া হয় এনবিআরকে। এরই অংশ হিসেবে বিদ্যমান আইনের কিছু বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় এনবিআর। বিশেষত আলোচ্য সময়ের মধ্যে অন্তত অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ ও ভ্যাট প্রদানে ব্যবসায়ীদের অভ্যস্ত করতে বিদ্যমান আইনের কিছু বিধির সংশোধনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এর আড়ালে মূলত নতুন আইনের বিধিই চূড়ান্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ।
এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, কথা ছিল বিদ্যমান আইনের বিধির সংশোধনের। আর নতুন আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণের (ইমপেক্ট এনালাইসিস)। কিন্তু বিদ্যমান আইনের আড়ালে নতুন আইনটিই রেখে দেয়ার অপচেষ্টা করছে এনবিআর। নতুন আইন বাস্তবায়ন বন্ধ হয়েছে। তবুও সংশোধন ছাড়া নতুন আইনটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের আঘাত দেয়া হলে আমরা প্রতিবাদ করব। লুকোচুরি করে কিছু করা যাবে না।
ইস্যুটি নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যেও মিশ্র অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। নতুন আইনটি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, এফবিসিআিই পুরো বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেনি। মতামত না দিয়ে তারা বরং বিরোধিতা করে বসলেন। অথচ তাদেরই আওতাভুক্ত কিছু সংগঠন এ বিষয়ে কিছু সংশোধনীর পরামর্শসহ তাদের মতামত দিয়েছে। অবশ্য অন্য আরেকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, এফবিসিসিআই তথা ব্যবসায়ীদের জন্যই আমাদের এই আইন। ফলে তাদের উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে চাইলে কাজটি সহজসাধ্য হবে না। বরং অতীতের মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা নিতে হবে। এ বাস্তবতা আমাদের নীতি নির্ধারকরা বুঝতে যত দেরি করবেন, ততই ক্ষতি হবে ।
সূত্র জানায়, এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে এফবিসিসিআই সভাপতি অভিযোগ করে বলেন, আমরা জানতে পেরেছি এফবিসিসিআইয়ের মতামত নেয়ার আগেই প্রস্তাবিত বিধিমালাটি অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদ নেয়া হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রী অনুমোদন করার পর কেন সে বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের মতামত চাওয়া হচ্ছে? আর অর্থমন্ত্রী অনুমোদন দেয়ার আগে কেন এফবিসিসিআইয়ের মতামত নেয়ার জন্য পাঠানো হয়নি? চিঠিতে বলা হয়, দেশ ও জাতীর বৃহত্তর স্বার্থে এ আস্থার সংকটের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।