ভুল চিকিৎসার খেসারত দিচ্ছে মাদ্রাসাছাত্র রাজু ‘মা তুমি দোয়া করো যেন তাড়াতাড়ি মইরা যাই’
‘মা আমার খুব কষ্ট অইতাছে। তুমি দোয়া করো যেন তাড়াতাড়ি মইরা যাই। আমি আর সইতারতাছি না।’ বিছানায় শুয়ে এমন কথা বলছিলেন ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী রাজু আহমেদ সুমন।
রাজু আহমেদ সুমন জেলার শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটী ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের তাজউদ্দিন আহমেদের ছেলে। পাশের গ্রামের আবদার আবদুল আউয়াল কওমি মাদ্রাসার আমপাড়া শ্রেণীর ছাত্র।
জানা গেছে, গত ৬ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২টার দিকে শ্রেণীকক্ষের পাঠ শেষে মাদ্রাসায় ঘুমাচ্ছিলো সুমন। হঠাৎ দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করে ওঠে সে। তার বড় ভাই একই মাদ্রাসার হেফ্জ শ্রেণীর ছাত্র ঈমন ছুটে এসে তার শরীরে জ্বর দেখতে পায়। জ্বর থাকায় ছুটি নিয়ে সুমনকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায় ঈমন।
সুমন জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় তার মা-বাবা তাকে সেদিন দুপুরেই পাশেই জৈনাবাজারে অবস্থিত আল-বারাকা হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক আবদুস সালাম কোন পরীক্ষা ছাড়াই তাকে ওষুধ দেন। চিকিৎসকের নির্দেশে হাসপাতালের নার্স হোসনে আরা শিশুটির ডান হাতে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার পর শিশুটি ঘুমিয়ে পড়ে। পরে দুপুর পৌনে দুইটার দিকে সুমনকে বাড়ি নিয়ে যান তার মা-বাবা।
পরবর্তীতে বাড়িতে আনার পর দুপুর আড়াইটার দিকে সুমন পুনরায় চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠে। জ্বর না সারায় সুমনের মা-বাবা আবারো তাকে আল-বারাকা হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেয়ার পর ওই চিকিৎসক শিশুটির শরীরে স্যালাইন ও আরো একটি ইনজেকশন পুশ করেন। স্যালাইন পুশ করার পর শিশুটির খিঁচুনি শুরু হয়। খিঁচুনির পর হাসপাতালের কর্মচারীরা তার মাথায় পানি ঢালে। এরপর থেকে সুমনের শরীরে ফোসকা উঠে অধিকাংশ অংশ ঝলসে গেছে। এমনকি পায়ের চামড়া খসে পড়ে এবং সুমনের ডান হাতের কব্জি বেঁকে গেছে। দুই পা থেকে চামড়া খসে পড়ে এখন মাংসও খসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
দুর্বিসহ কষ্ট নিয়ে বিছানায় শুয়ে সুমন তার মাকে এখন শুধু বলছে, ‘মা, আমার খুব কষ্ট অইতাছে। তুমি দোয়া করো যেন তাড়াতাড়ি মইরা যাই। আমি আর সইতারতাছি না।’
সুমনের বাবা তাজউদ্দিন আহমেদ জাস্ট নিউজকে জানান, চিকিৎসক গাফিলতি করে তার ছেলেকে ভুল চিকিৎসা দিয়েছেন। ভুল চিকিৎসায় তার ছেলে এখন মৃত্যুশয্যায় ছটফট করছে। তার ছেলে সুমনের শরীরে ফোস্কা পড়ে চামড়া খসে পড়ার ঘটনা কারো কাছে প্রকাশ করতে নিষেধ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনা প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হুমকি দেয়।
এ মুহূর্তে তিনি খুব অসহায় অবস্থায় ছেলে সুমনের বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন বলেও জানান তাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি এই ঘটনায় দায়ী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে বিচার দাবি করেন।
এদিকে অভিযোগ পেয়ে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজীজ হায়দার ভূইয়া মৃত্যুশয্যায় শিশুটিকে দেখতে তার বাড়িতে যান। তিনি শিশুটির অবস্থা দেখে চিকিৎসার জন্য নগদ ৩ হাজার টাকা দেন। হাসপাতালের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পর তিনি ওই রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতাল সিলগালা করে দেন।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজীজ হায়দার ভূইয়া জানান, হাসপাতালটিতে চিকিৎসার কোন পরিবেশ নেই। রান্না ঘরের সঙ্গে একটি কক্ষে অস্ত্রোপচার করা হয় রোগীদের। নার্সদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। চিকিৎসার নামে এই হাসপাতাল ঘিরে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে।