ভারত থেকে আমদানি বিদ্যুতের আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন
হাসিনা-মনমোহন ভিডিও কনফারেন্সিং ॥ ভেরামারায় উৎসবের আমেজ
স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আজ। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দিল্লী থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যামে বিদ্যুত আমদানির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। আজ ১৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ করবে ভারত। পর্যায়ক্রমে নবেম্বরের শেষ নাগাদ ৫০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অপ্রচলিত এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রী ড. ফারুক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে। প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ভারতের বিদ্যুত সচিব পিকে সিনহা এবং ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যান (সিএমডি) অরুপ রায় চৌধুরী।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেলা ১১টায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুরে অবস্থিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত উপকেন্দ্র ও ভেড়ামারা-বহরমপুর (ভারত) ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া দুপুরে জেলার ৬টি প্রতিষ্ঠান উদ্বোধন ও ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। বিকাল ৩টায় কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
পিডিবি সূত্র জানায়, ভারতীয় প্রতিনিধি দলের কয়েক সদস্য শুক্রবার রাতেই কুষ্টিয়া গেছেন। বাকিরা আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ভেড়ামারা ও কুষ্টিয়ার প্রধান সড়কসহ আশপাশের সড়কগুলো সংস্কার করা হয়েছে। স্থাপনাগুলো বর্ণিল রঙে সাজানো হয়েছে। কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে সুসজ্জিত মঞ্চ তৈরি ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনের জন্য ডিজিটাল ফলক স্থাপন করা হয়েছে। কুষ্টিয়া শহর, কুষ্টিয়া-পাবনা মহাসড়ক ও ভেড়ামারা-রায়টা মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে তোরণ নির্মিত হয়েছে।
পিডিবি সূত্র আরও জানায়, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ৫০ মেগাওয়াট পরীক্ষামূলক সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ভারতের বিদ্যুত আসে। আজ সঞ্চালনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৭৫ মেগাওয়াটে। পর্যায়ক্রমে ৫০০ মেগাওয়াটের বাকি বিদ্যুত আসবে। প্রথম পর্যায়ে আসা ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে সাড়ে ৪ টাকা। এ দাম আজ শনিবার থেকে কার্যকর হবে। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে আসা ২৫০ মেগাওয়াটের দাম পড়বে ৬ টাকা ৩৪ পয়সা। আগামী ২৫ বছর ভারত এ বিদ্যুত দেবে বাংলাদেশকে। তবে বেসরকারী বিদ্যুত আমদানির জন্য পিটিসির সঙ্গে তিন বছরের জন্য চুক্তি করা হবে। পরবর্তীতে বেসরকারী খাত থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে চাইলে নতুন করে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হবে।
ভারতের মুর্শিদাবাদের বহরমপুর ও বাংলাদেশের ভেড়ামারায় সাবস্টেশন নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের গ্রিডলাইন যুক্ত হয়েছে। বিদ্যুত আমদানির জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৯৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং দুটি ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশন নির্মাণ করে ভারত বাংলাদেশের বিদ্যুত সঞ্চালনকে সমন্বয় করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে সে দেশের সীমান্ত পর্যন্ত ১৯৫টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। মোট ৭০ কিলোমিটার লম্বা এ সঞ্চালন লাইন। বাংলাদেশের ভেড়ামারা স্টেশন থেকে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রকটনগর সীমান্ত পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটারের সঞ্চালন লাইনে ৭৮টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
বিদ্যুত কেন্দ্র ছাড়া যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন সেগুলো হলো, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ, কুষ্টিয়া জেলার সার্ভার স্টেশন ভবন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, ভেড়ামারা থানা ভবন, কুষ্টিয়া কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার ও কুষ্টিয়া মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন। এ ছাড়া ভিস্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন কুষ্টিয়া মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, মিরপুর থানা ভবন, কুষ্টিয়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কুমারখালীর সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ স্মৃতি মিউজিয়াম, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পুলিশ লাইন স্কুল এ্যান্ড কলেজের একাডেমিক ভবন, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ঝাউদিয়া কলেজের একাডেমিক ভবন, ভেড়ামারা উপজেলার বিজিএম কলেজের একাডেমিক ভবন, ভেড়ামারা মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন, মিরপুর উপজেলার সাগরখালী আইডিয়াল কলেজের একাডেমিক ভবন, কুমারখালীতে কুমারখালী কলেজের একাডেমিক ভবন, শিলাইদহ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলেজের একাডেমিক ভবন, দৌলতপুর উপজেলার নুরুজ্জামান ডিগ্রী কলেজের একাডেমিক ভবন, দৌলতপুর কলেজের একাডেমিক ভবন ও দৌলতপুর উপজেলা পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন।