ভারতের স্পষ্ট ক্ষমা দাবি অবস্থান পাল্টাবে না যুক্তরাষ্ট্র
ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ের গ্রেপ্তারের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘স্পষ্ট ক্ষমা’ দাবি করেছে ভারত। তবে দেবযানীর বিরুদ্ধে নেয়া কঠোর অবস্থান থেকে সরে না আসার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কূটনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে ভারতের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমন কি এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ক্ষমাও চাওয়া হবে না। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে এটি এখন ‘আইনপ্রয়োগযোগ্য ইস্যু’। ভারত জানিয়েছে, মুখপাত্রের করা মন্তব্যের ব্যাপারে ভারত কিছু বলবে না। এটি শুধুমাত্র দিল্লি ও ওয়াশিংটনের উচ্চতর পর্যায়ে আলোচিত হবে। তবে ভারতের সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ বলেছেন, এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন ধরনের আনুষ্ঠানিকতাই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের উচিত স্পষ্টভাবে ক্ষমা চাওয়া। কোন অবস্থাতেই ভারতের বিরুদ্ধে তাদের এ ধরনের আচরণ আমরা মেনে নেব না। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে বুঝতে হবে পৃথিবী বদলে গেছে। সময় বদলেছে সেই সঙ্গে ভারতও বদলেছে। কমলনাথ বলেন দেবযানী ইস্যুতে যে আচরণ যুক্তরাষ্ট্র করেছে সেটা কেবল ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয় নয়। বিষয়টি সব দেশের জন্যই উদ্বেগের। তাই সবারই এ ব্যাপারে স্বোচ্চার হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, তাদেরকে আমাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং স্বীকার করতে হবে যে তারা একটা ভুল করেছেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যারি হার্ফ বলেছেন, আমরা এ ধরনের অভিযোগ খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়ে থাকি। প্রতিবছর প্রতিটি দেশের কূটনীতিক যারা এখানে অবস্থান করছে তাদের আমরা খুব পরিষ্কারভাবে কূটনৈতিক বার্তায় জানিয়ে দেই, কাজ করার জন্য যাদের তারা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসেন তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ রয়েছে। আর এই বিধিনিষেধগুলো আমরা খুব পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দেই যে, এসব বিষয় মানা না হলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারি। দেবযানীকে গ্রেপ্তার ও তার সঙ্গে করা আচরণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি প্রিট বারারার সাফাই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা উইন্ডি সারমেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং-এর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসব মন্তব্য করলেন। ভিসার আবেদনে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে ১২ই ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্কে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ে গ্রেপ্তারের পর তাকে হেনস্তার ঘটনাটি প্রকাশ পেলে ক্ষুব্ধ হয় ভারত সরকার। ঘটনাটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বিরোধ তুঙ্গে ওঠে।
কলকাতায়ও মার্কিন কূটনীতিকদের বিশেষ সুবিধা বন্ধ: নয়া দিল্লির বার্তা পেয়ে কলকাতায়ও আপাতত বন্ধ হয়েছে মার্কিন দূতাবাস-কর্মকর্তাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা। দেবযানী খোবরাগাড়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারত সরকারের বিরোধে এভাবে যোগ হল রাজ্যও। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দিল্লি যেসব পদক্ষেপ এরই মধ্যে নিয়েছে, রাজ্যের কাছে সেই সংক্রান্ত প্রায় সব নির্দেশই পাঠানো হয়েছে দিল্লি থেকে। দিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের সামনের নিরাপত্তা বেষ্টনী সরানো হয়েছে। কলকাতায় অবশ্য সেটা করা হয়নি। নির্দেশ পাওয়ার পর দিল্লির মতোই কলকাতা এবার দূতাবাসে চাকরিরত ভারতীয়দের বেতনের স্লিপ, পরিচালকদের বেতন সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাইতে পারবে। তলব করতে পারবে মার্কিন কূটনীতিক, কর্মী ও পরিবারের পরিচয়পত্র। বাতিল হবে উপ-দূতাবাসের সামনে গাড়ি পার্কিংয়ের বিশেষ সুবিধাও। যদিও কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সেখানে উপ-দূতাবাসের সামনে পার্কিংয়ের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই সুবিধা বাতিলেরও প্রশ্ন ওঠে না। আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, নির্দেশ এসেছে কলকাতা বিমানবন্দরেও। তাতে বলা হয়েছে, আপাতত বাতিল করতে হবে দূতাবাস কর্তাদের বিশেষ ‘প্রোটোকল পাস’। সেখানেও পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবেন না মার্কিন উপ-দূতাবাস কর্মকর্তারা। পাস তুলে নেয়ার পর আর পাঁচজন সাধারণ যাত্রীর মতোই বিমানবন্দরে ঠিক সময়ে পৌঁছতে হবে কূটনীতিকদের। গাড়িও রাখতে হবে সাধারণের যাত্রীদের জায়গায়। লাইন দিয়ে বোর্ডিং পাস সংগ্রহ থেকে যাবতীয় কাজ নিজেকেই সারতে হবে। কূটনৈতিক মহলের লোকজনরা অবশ্য বলছেন, এ সিদ্ধান্তে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ নেই। এটি বরং দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সম্মানহানি বলা যেতে পারে।