ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আবদুল কালাম মারা গেছেন
২৮ জুলাই ২০১৫, মঙ্গলবার
ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট, মিসাইল প্রযুক্তির জনক এপিজে আবদুল কালাম মারা গেছেন। গত রাতে তিনি শিলংয়ে মারা যান। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট ইন শিলংয়ে বক্তব্য দেয়ার সময় তিনি অকস্মাৎ অচেতন হয়ে পড়ে যান। তাকে দ্রুততার সঙ্গে বিথানি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অত্যন্ত সংকটজনক অবস্থায় ভর্তি করা হয় তাকে। রাখা হয় হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউতে)। তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকরা তৎপর হয়ে ওঠেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচাতে পারেননি তারা। চিকিৎসকরা বলেছেন, তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে অনলাইন এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়, খাসি হিলসের এসপি এম খারক্রাং এ কথার সত্যতা স্বীকার করেছেন। মহত এই ব্যক্তিত্ব ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ১১তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩১ সালের ১৫ই অক্টোবর রামেশ্বরমে তার জন্ম। ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ নিউক্লিয়ার যে পরীক্ষা চালানো হয় তাতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর আগে ১৯৭৪ সালে প্রথম ভারতে এ পরীক্ষা করা হয়েছিল। তিনি ভারতে দ্য মিসাইল ম্যান নামেও বেশি পরিচিত। তার অসাধারণ অর্জনের জন্য ভারত সরকার তাকে পদ্মভূষণ ও ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত করে। এরপর ২০০২ সালে তিনি ১১তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পদার্থবিদ্যা ও এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। চার দশক ধরে পালন করেছেন ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব। যুক্ত ছিলেন ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের সঙ্গেও।
ওদিকে তার মৃত্যুতে ভারত সরকার সাত দিনের শোক ঘোষণা করেছে। তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে ভারতের সর্বস্তরের মানুষ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ড . কালাম ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ। তার ছিল অঢেল জ্ঞানের ভাণ্ডার। তার এ মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি যে শূন্যতা রেখে গেলে তা সহজে পূরণ হবার নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এক টুইট বার্তায় বলেন, ড. এপিজে আবদুল কালাম ছিলেন জনগণের প্রেসিডেন্ট। মহান এই আত্মার প্রতি আমার শ্রদ্ধা। জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, স্মরণ করছি ড. কালাম যখন প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, তখন কেন্দ্রীয় সরকারে দু’টি প্রশ্ন বড় হয়ে ওঠে। তাহলো তিনি কি গলাবন্ধ পরবেন? তিনি কি তার চুলের ধরণ পাল্টাবেন? তিনি গলাবন্ধ নিয়ে বেশ খুশিমনে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু নিজের চুলের ধরণ পাল্টাতে অস্বীকার করেন।
এক নজরে আবদুল কালাম: পুরো নাম আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালাম (এপিজে আবদুল কালাম)। ভারতের ১১তম প্রেসিডেন্ট তিনি (২০০২ থেকে ২০০৭) এবং একজন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। তিনিই ভারতে প্রথম পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণ করেন। এ জন্য তাকে মিসাইল প্রযুক্তির জনক বলা হয়। আবদুল কালামের জন্ম তামিলনাড়ুর উপকূল সংলগ্ন রামেশ্বরামে। পিতার নাম জয়নুল আবেদিন ও মাতার নাম আসিআম্মা। তিনি খুব গরিব পরিবারের সন্তান ছিলেন এবং খুব অল্প বয়সেই তাকে জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন পেশায় কাজ করতে হয়েছিল। তার পড়াশুনার বিষয় ছিল এ্যারোসেপস ইঞ্জিনিয়ারিং। চল্লিশ বছর যাবৎ তিনি ভারতের বিভিন্ন বিজ্ঞান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। বিশেষ করে ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) ও ইন্ডিয়ান সেপস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (আইএসআরও) কর্তব্যরত অবস্থায় তিনি বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা ও সামরিক মিসাইল তৈরিতে প্রচুর অবদান রাখেন। ব্যালেস্টিক মিসাইল ও তার উৎক্ষেপণ যান তৈরিতে তার অবদানের জন্য তিনি ‘মিসাইল ম্যান’ হিসেবে স্বীকৃতি পান। ১৯৯৮ সালে ভারতের প্রথম সফল পারমাণবিক পরীক্ষা পোখরান-২ এর তিনি ছিলেন মুখ্য অবদানকারী। তিনি ২০০২ সালে ভারত প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।