বোমা হামলা : বিচারপতি মন্ত্রী, পুলিশের বাড়ি-অফিস লক্ষ্যবস্তু

26/10/2013 6:17 pmViews: 26

Attack-Targetপ্রতিবেদক : রাজধানীতে গতকাল শনিবার একের পর এক চোরাগোপ্তা বোমা হামলা হয়েছে। বিচারপতি, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আইনজীবী, পুলিশ কারো বাড়ি বা অফিসই বাদ পড়েনি এ হামলা থেকে। রাতে রাজধানীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ৩৫টি যানবাহন। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে ৫টি গাড়িতে। দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ, পথচারী, হরতাল সমর্থকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ ৫০ জনকে আটক করেছে।

আতঙ্কে গতকাল নগরীতে যানবাহন চলাচল ছিল একেবারেই কম। মানুষের দুর্ভোগ ছিল চরমে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ধারণা, আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই জামায়াত-শিবির ও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নেতাকর্মী চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে। বিএনপি হরতাল ডাকায় রবিবার রাজধানীতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত মোতায়েন করা হচ্ছে। পুলিশ মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে।

তবে সন্ধ্যা ৬টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হরতালে বিজিবি মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

পুলিশ জানায়, গতকাল সকাল পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর কাকরাইলে ইসলামী ব্যাংক হসপিটালের গলির ভিতরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনারের কার্যালয় লক্ষ্য করে ৩টি বোমা হামলা চালায় জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী। বোমাগুলো কার্যালয়ের সামনে বিস্ফোরিত হয়। হামলার পর তারা দ্রুত বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পালিয়ে যায়।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করেছে। এর পরই নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় লাগোয়া পল্টন মার্কেটের সামনে পর পর ৩টি, একই সময় ধানমণ্ডির ৫ নম্বর রোডে বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের বাসভবনের সামনে ৩টি, প্রায় একই সময় আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বাসভনের সামনে ২টি বোমা হামলা হয়।

বেলা পৌনে ১১টার দিকে কাকরাইল অডিট ভবনের পিছনে পার্ক এভিনিউর জাজেস কমপ্লেক্সে বিচারপতি সুরেন্দ কুমার সিনহা (এসকে সিনহা) এবং বিচারপতি জিনাত আরার বাসভবনের সামনে ৩টি, বেলা ১১টার দিকে রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন কার্যালয়ের সামনে ২টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বেলা ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে হরতালের সমর্থনে জামায়াত শিবির নেতাকর্মী একটি মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি মিছিলে হামলা চালায়। আকস্মিক হামলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ভীত- সন্ত্রস্ত হয়ে নিরাপদ জায়গায় সরে যায়। পরে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী রাস্তা অবরোধ করে অন্তত ১০টি যানবাহনে ভাঙচুর চালায়। পুলিশের বাধার মুখে পড়ে মিছিলকারীরা পর পর ৪টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ আরও জানায়, দুপুর ১২টার দিকে ফার্মগেটে তেজগাঁও কলেজের সামনে গুলিস্তান থেকে মিরপুরগামী যাত্রীবাহী একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে হরতাল সমর্থকরা। দুপুর ১টার দিকে মতিঝিলের আরামবাগে তরুণ দলের ব্যানারে একটি মিছিল বের করে হরতাল সমর্থকরা। তারা পর পর ৪টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রায় একই সময় ফকিরাপুল পানিট্যাঙ্কি ও আশপাশের গলি থেকে জামায়াত-শিবিরের ঝটিকা মিছিল বের হয়। মিছিলকারীরা রাস্তা অবরোধ করে সাতটি যানবাহন ভাঙচুর করে। তারা বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। দফায় দফায় সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়। মিছিলকারীরা অন্তত ১০টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে। বেলা দেড়টার দিকে কলাবাগান এলাকায় মেইন রোডে একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বেলা ২টার দিকে ছাত্রদল-জামায়াত-শিবির মগবাজারে মিছিল করে। মিছিল থেকে তারা বাস ও অটোরিকশাসহ ৫টি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ এলে তারা তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।

বেলা আড়াইটার দিকে গুলশান-১ ও ২ এর মাঝামাঝি স্থানে জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল বের করে। তারা ৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে মালিবাগে ছাত্রদল মিছিল বের করে। তারা একটি প্রাইভেটকারসহ তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশের বাধার মুখে মিছিলকারীরা তিনটি বোমা ফাটিয়ে চলে যায়। বিকাল ৪টার দিকে পাঁচতারকা হোটেল সোনারগাঁওয়ের সামনে পর পর ৪টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জামায়াত-শিবির। গতকাল সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টার দিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের বারিধারার বাসভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বাসভবনের সামনে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিজয়নগরে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ৭১-এর কার্যালয়ের সামনে পরপর তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

সরেজমিন রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, কাকরাইল, মিন্টুরোড, মিরপুর, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে বাইরে লোকজন কম। রাস্তায় যানবাহন চলাচলও কম।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গত ২৪ অক্টোবরের পর থেকেই মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাজধানীর মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে স্বাভাবিকের তুলনায় দূরপাল্লার ছেড়েছে কম। পরিবহন খাতে যারা কাজ করছেন তাদের সতর্ক রাখা হয়েছে।

র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক উইং কমান্ডার এটিএম হাবিবুর রহমান  জানান, সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করতে র্যাবের অতিরিক্ত সদস্য নামানো হয়েছে।

গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দফতরে দীর্ঘ বৈঠক শেষে পিএমপির মুখপাত্র ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মূলত আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হচ্ছে। চোরাগোপ্তা হামলাকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের নাশকতা রোধে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে।

Leave a Reply